10/26/2025 মনিরামপুরে দুই পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, আহত-৫, আদালতে মামলা
মনিরামপুর প্রতিনিধি।
২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:২৯
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি।। যশোরের মনিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও হামলার সময় বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীদের মারপিটে নারীসহ পাঁচজন আহত হয়। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাউকে আটক করেনি। ফলে এ ঘটনায় পুলিশের দুই কনষ্টেবলসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালত মামলা করা হয়। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে যশোরের ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল ইসলাম।
এলাকাবাসী জানায়, মনিরামপুর পৌরসভার হাকোবা গ্রামের ব্যবসায়ী জয়দেব কুন্ডু পৈত্রিক ১৩ শতক জমিতে গতবছর টিনসেড বাড়ি নির্মানের পর পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ওই জমি নিয়ে প্রতিবেশী অপর ব্যবসায়ী প্রভাত কুন্ডুর সাথে জয়দেব কুন্ডুর বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে আদালতে দুপক্ষই মামলা করেন। এর মধ্যে প্রভাত কুন্ডুর মামলাটি গত ২২ অক্টোবর আদালতে শুনানীর দিল ছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এদিন সকাল সাতটার দিকে প্রভাত কুন্ডু ও তার দুই ভাতিজা পুলিশ কনষ্টেবল মোহন কুন্ডু এবং রাজন কুন্ডুর নেতৃত্বে ধারালো দা, হকিষ্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে তার লোকজন প্রতিপক্ষ জয়দেব কুন্ডুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। অভিযোগ রয়েছে এ সময় বাঁধা দিলে তারা প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এতে জয়দেব কুন্ডু, শুক্লা রানী কুন্ডু, বন্যা রানী কুন্ডু, ইন্দ্রোজিৎ কুন্ডু ও উজ্জ্বল কুন্ডু আহত হয়। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের মধ্যে জয়দেব কুন্ডুকে গুরুতর আবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীদের স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। জয়দেব কুন্ডুর ভাতিজা উজ্জ্বল কুন্ডু জানান, হামলার সময় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে থানা থেকে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ভাংচুরের ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে চলে যান। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে জয়দেব কুন্ডু বাদি হয়ে প্রভাত কুন্ডু ও তার ছেলে মাখন কুন্ডু, ভাতিজা পুলিশ কনষ্টেবল মোহন কুন্ডু ও রাজন কুন্ডুসহ পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে ২৩ অক্টোবর যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সোহেল লস্কর তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন যশোর ডিবি পুলিশকে। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল ইসলাম। তবে প্রভাত কুন্ডু বিরোধীয় ওই জমি নিজের দাবি করে জানান, গতবছর জয়দেব কুন্ডু ওই জমি দখল করে সেখানে টিনসেডের বাড়ি নির্মান করেন। ফলে ২২ অক্টোবর তিনি ও তার লোকজন যান জমি দখল করতে। তবে প্রভাত কুন্ডুর ভাতিজা পুলিশ কনষ্টেবল মোহন কুন্ডু ও রাজন কুন্ডু বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তারা ২২ অক্টোবর কর্মস্থলে( মোহন সাতক্ষীরার সদর থানা এবং রাজন ঝিনাইদহে) ছিলেন। অথচ মোহন এবং রাজনকে হকিষ্টিক নিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাংচুর করতে দেখেছেন ভূক্তবোগীসহ স্থানীয়রা। তাদের হামলার ভিডিও চিত্র ধারনও করেন স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে। এ ব্যাপারে মোহন কুন্ডুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২২ অক্টোবর তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। আর ভিডিও চিত্রের ব্যাপারে তিনি জানান, এ ভিডিওটি গতবছরের ঘটনার। তবে উজ্জ্বল কুন্ডু, আবদুল হামিদ, রফিকুল ইসলাম, টিক্কা হোসেন, রহিমা খাতুনসহ অধিকাংশ প্রতিবেশীরা জানান, ২২ অক্টোবর সকালে মোহন এবং রাজনকে হকিষ্টিক নিয়ে তারা হামলা করতে দেখেছেন। এছাড়াও তাদেরকে ২১ অক্টোবর রাতে বাড়িতে কালিপূজা উদযাপন করতেও দেখেছেন তারা। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) বাবলুর রহমান খান জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বিরোধীয় ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারীর নির্দেশনা এসেছে। দু একের মধ্যে সেটি কার্যকর করা হবে।