05/01/2025 ছেলে হারানো একটি বৃদ্ধা মায়ের কান্না -কে এম আলী
বিশেষ প্রতিনিধি।।
২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২১:৫৯
ঘরে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত স্বামী জসিম উদ্দিন চার কন্যা ও একটি মাত্র পুত্র সন্তানের বৃদ্ধা মা নিলুফা বেগম (৫২) যশোরের সদর উপজেলার কামালপুরে পরের জমিতে কোনমতে একটু মাথা গোজার ঠাই করে অতি দরিদ্রতার সাথে জীবনযাপন করছিলেন। তবে তার বিশ্বাস ছিল একদিন সংসারের সমস্ত অভাব দূর হবে। সংসারের দায়িত্ব নেবে তার ছেলে মনিরুজ্জামান (২৯) এই বিশ্বাস থেকে ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে বিন্দু বিন্দু করে জমাতে থাকে অর্থ অনেক কষ্ট ক্লান্তির পর সেই অর্থ দিয়ে আজ থেকে ৭/৮ বছর পূর্বে ছেলেকে পাঠায় মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া গিয়ে ছেলের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও তার সুফল পাইনি তার পরিবার। ছেলে তিনমাস আগে দেশে ফিরে কয়েকদিন বাড়িতে থাকার পর তার পরিবার জানতে পারে সে একই এলাকার ৪৫ বছর বয়সী এক নারীর প্রতারনার ফাঁদে পড়েছে। গত বছরের ২০ অক্টোবর ওই নারী সহ আরো দুজন মনিরুজ্জামানের সাথে গোপনে আলাপ করে তাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে প্রবাসি মনিরুজ্জামানের কোন হদিস নেই। ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে দু'মাস আগে একই এলাকার মৃত মজিদ গাজীর মেয়ে জেসমিন, স্ত্রী সালেহা বেগম ও পুত্র রানাকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে নিখোঁজের বৃদ্ধা মাতা। তারপরও মেলেনা ছেলের সন্ধান এরপর সে ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলী অদালত যশোরে একটি মামলার আবেদন করে। গতকাল ২৩ জানুয়ারি (সোমবার) দুপুর ৩ টায় যশোর আদালত প্রাঙ্গণের এক কোনায় দেখা যায় ছেলে হারা বৃদ্ধা মাকে নিজ শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তার কান্নার কারন জানতে চাইলে অভিযোগের দুটি ফটোকপি ধরিয়ে দিয়ে তিনি তার দুঃখের কথা জানান। তিনি বলেন বাবা, অনেক কষ্টে অর্জিত গচ্ছিত টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। আজ আমার সেই মানিক কোথায় আছে জানিনা। তার সন্ধান পেতে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছি লাভ হয়নি, কারন আমি গরীব, আমিতো টাকা দিতে পারবোনা। পরে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি এখানেও প্রয়োজন টাকা। আসলে টাকা ছাড়া কেউ কারো পাশে থাকে না, এই বলেই বৃদ্ধা আবার কাঁদতে থাকে বৃদ্ধার কান্না দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না, তারপরও সামলে নিলাম নিজেকে। সান্ত্বনা দিয়ে তাকে নিয়ে রওনা হলাম তার বাড়িতে। বাড়িতে গিয়ে তার নিখোঁজ ছেলের একটি ছবি সংগ্রহ করলাম। জানিনা আমার লেখাটা ওই মায়ের বুক ভরিয়ে দিতে পারবে কিনা? তারপরও এই বিশ্বাস থেকে লেখা সৃষ্টিকর্তা একজন আছে। বিশ্বাস করি, কোন মায়ের চোখের পানি বৃধা যেতে পারেনা।