05/01/2025 অধ্যক্ষ রেজাউল করিম তার দূর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিক সম্মেলনের নামে মিথ্যাচার করছেন
যশোর প্রতিনিধি।।
৫ এপ্রিল ২০২৪ ০০:০১
যশোর প্রতিনিধি।। মনিরামপুরের গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ও তার অনিয়ম দুর্নীতির সহযাত্রী নামে পরিচিত কিছু শিক্ষক কমর্চারির বিরুদ্ধে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মনিরামপুরের শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত ও মেধাবী কলেজছাত্রী সাবিনার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী দুই শিক্ষকসহ অধ্যক্ষের ফাঁসির দাবি করেছেন। এর মিনিট কয়েক আগে অভিযুক্ত অধ্যক্ষসহ তার অনুসারিরা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে দ্রুত প্রেসক্লাব ত্যাগ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষ ও তার অনুসারিদের টাকা ছড়াছড়ির অভিযোগ চাউর হয়েছে। একই সাথে গতকালের মতো আজও অধ্যক্ষসহ তার অনুসারিদের পঁচা টমেটো ও ডিম দিয়ে গোসল করানোর প্রস্তুতি ছিলো বিক্ষুব্দদের। কয়েকজনের হাতে থাকা প্যাকেটে টমেটো ও ডিম দেখা গেছে। এসব কি কাজে লাগবে জানতে চাইলে মুখ খুলতে চাননি বিক্ষুব্দরা।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সংবাদ সম্মেলন করবেন খবর পেয়ে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজ এলাকার কয়েক’শ নারী-পুরুষ নসিমন-করিমন, ভ্যান-রিকশা ও মোটরসাইকেলে চেপে যশোর অভিমুখে রওনা হন। কিন্তু ধুরন্ধর অধক্ষ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তড়িঘড়িভাবে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে প্রেসক্লাব ত্যাগ করেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মিশন সফল করতে অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে টাকা ছড়াছড়ির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে অর্শতাধিক নারী-পুরুষ প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে দুর্নীতির তদন্ত ও ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচিত করা শিক্ষকদের ফাঁসির দাবি করেন। অন্যান্যরা অধ্যক্ষ প্রেসক্লাব ত্যাগ করেছেন শুনে মাঝপথ থেকে মণিরামপুরে ফিরে যান।
মৃত সাবিনার বৃদ্ধ পিতা আব্দুল জলিল গাজি, চাচা মুনসুর গাজী ও ভাই রাকিব হোসেনসহ বিক্ষুব্দরা অভিযোগ করেন প্রভাষক ইসরাইল ও তাছলিমাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে রেজাউল কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে সাবিনার আত্মহত্যায় প্ররোচিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তাদের পক্ষ নিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করছেন। হত্যা মামলা করা হবে শুনে ধুরন্ধর অধ্যক্ষ রেজাউল বুধবার গোপনে তদন্তের নামে প্রহসনের পথ বেঁছে নেন। খবর পেয়ে একদল বিক্ষুব্দ নারী পঁচা টমেটো ও ডিম ছুড়ে কলেজ অধ্যক্ষ রেজাউল করিমকে গোসল করিয়ে দেন। এসময় বিতর্কিত প্রভাষক ইসরাইল হোসেন ও চিন্ময় কুন্ডুসহ অধ্যক্ষের অনুসারিরা মানবঢাল সৃষ্টির নামে বেশকয়েকজন নারীকে জাপটে ধরে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় কয়েক’শ শিক্ষার্থী ও এলাকার বিক্ষুব্দ নারী পুরুষ কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। এসময় তাদের স্লোগানে বলতে শোনা যায় দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের দুই চোয়ালে জুতো মারো তালে তালে….. ইত্যাদি। তারা একপর্যায়ে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের বাধা দেন অধ্যক্ষের অনুসারিরা। এসময় দুপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। বিক্ষুব্দরা অধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে টমেটো ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে। এতে অধ্যক্ষসহ খোশ গল্পে মেতে থাকা জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্রের জামা কাপড়ও নষ্ট হয়। খবর পেয়ে নেহালপুর ফাঁড়ি পুলিশ ছুটে এসে অভিযুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনা হবে আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে অধ্যক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করবেন। যথারীতি সংবাদ সম্মেলনে আসেন অধ্যক্ষসহ তার অনুসারীরা। তারা এমপি ইয়াকুব আলী ও তার ভাই ওলিয়ার রহমানের মদদে কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে অলিয়ার রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন অধ্যক্ষ রেজাউল করিম তার দূর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিক সম্মেলনের নামে মিথ্যাচার করছেন।
এরমধ্যে, অধ্যক্ষের সংবাদ সম্মেলনের খবরে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক’শ নারী পুরুষ ভ্যান নছিমন, করিমন ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে প্রেসক্লাব যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। তাদের একাংশ এসে জানতে পারেন ধুরন্ধর অধ্যক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে আগে ভাগেই সটকে পড়েছেন। এসময় তারা মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে অধ্যক্ষের দুর্নীতি তদন্ত ও মেধাবী ছাত্র সাবিনাকে আত্মহত্যার প্ররোচিত প্রভাষক ইসরাইল ও তাছলিমাসহ অধ্যক্ষের ফাঁসির দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০শে মার্চ ছুটির দিনে কলেজটিতে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়। প্রশ্নপত্র বিতরণের কয়েক মিনিটের মাথায় শিক্ষক ইসরাইল ও তাছলিমা শিক্ষার্থী সাবিনার উত্তরপত্র কেড়ে নিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা দাড় করিয়ে রাখেন। তাকে কান ধরে উঠবস করানো হয়। শিক্ষকদ্বয় তাকে ভর্সনাও করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বাড়ি ফিরে সাবিনা আত্মহত্যা করেন। এতেই উত্তাল হয়ে পড়ে কলেজ ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পরদিনের পরীক্ষা স্থগিত করেন অধ্যক্ষ রেজাউল করিম।