11/27/2025 বরাদ্দ মেলেনি, গুচ্ছগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা
মনিরামপুর থেকে।।
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:১৩
মোঃ শাহ্ জালাল ।। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমের শেষ প্রান্তে গোয়ালবাড়ি গ্রামের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর রয়েছে মাত্র আটশতক জমি। সেখানে রয়েছে কয়েকটি নারকেল গাছ। কিন্তু অর্থভাবে এখনও বসত বাড়ি নির্মান করতে পারেননি তিনি। একবুক স্বপ্ন নিয়ে বার বার আবেদন করেও সরকারের বীর নিবাসের বাড়ি তিনি বরাদ্দ পাননি। উপায়ন্ত না পেয়ে তিনি ঠাই নিয়েছেন গুচ্ছগ্রামে ছেলের সংসারে। আরশাদ আলীর আক্ষেপ আর কত অসচ্ছল হলে বীর নিবাসে ঠাই হবে তার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মৃত মোন্তেক গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী গাজী স্ত্রী এবং ছয় ছেলে নিয়ে সরকারের খাসজমিতে টিনসেড ঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা এবং মৌয়ালের কাজ করে( মধু ভেঙ্গে গ্রামে গ্রামে বিক্রি) তিনি সংসার চালান। ছয় ছেলেকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে মৃত্যু হয় স্ত্রী জামেলা বেগমের। ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা আরশাদের বসতবাড়ি ভেঙ্গে সেই খাসজমিতে গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলা হয়। উপজেলা প্রশাসন ওই গুচ্ছগ্রামে দুইটি ঘর বরাদ্দ দেন মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর ছেলে হেদায়েত উল্লাহ গাজী ও তার শ্বাশুড়ি নার্গিস বেগমের নামে। সেই থেকে আরশাদ আলী ছেলের সংসারে রয়েছেন। ছেলেরা এখন দিনমজুরী করে সংসার চালায়। সংসারে একটু সুখের আশায় ছেলে হেদায়েত উল্লাহকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋন নিয়ে এলাকার বাবলুর রহমান নামে এক আদমব্যাপারীর কাছে তুলে দেন। কিন্তু বাবলুর রহমান ওই টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার কুড়ি হাজারের মধ্যে প্রতিমাসে ঋনের কিস্তি দেন ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া আরো ধারদেনা করে গুচ্ছগ্রামের পাশে আট শতক জমি কেনেন আরশাদ আলী। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি বসত বাড়ি নির্মান করতে পারেননি। ফলে তিনি সরকারের বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ পাবার জন্য কয়েকবার আবেদন করেন।
মনিরামপুরে বীর নিবাসে ইতিমধ্যে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে আরো পাঁচটি বাড়ি বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে আরশাদের ঠাই হয়নি ওই তালিকায়। তবে পাঁচটির মধ্যে একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ধনাঢ্য আলাউদ্দিনের নামে। এ নিয়ে সমকালসহ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ তার সেই বরাদ্দ বাতিল করেন। আরশাদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, আর কত অসচ্ছল হলে বীর নিবাসে আমার ঠাই হবে। বিষয় টি নিয়ে মনিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতির এস এম মনজুর রহমান সরেজমিনে গিয়ে নিউজ করার পর নড়েচড়ে বসে মনিরামপুর প্রশাসন।
অবশ্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা ইসাহক আলী বলেন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীকে বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, আরশাদ আলীর আবেদন পর্যবেক্ষন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।