‘বাঁশ বৈভব’-এ একটি গল্প আছে। শাহীন একটি গল্প বলেন—বাঁশমহাল থেকে বাঁশ কেটে নদীতে ভাসিয়ে বন্দরে বন্দরে বিক্রি করা, এক হাত থেকে আরেক হাতে বাণিজ্যের নিয়মে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার গল্প। এ গল্পের পরতে পরতে আছে লেয়ার, যার প্রত্যেকটি নিয়েই ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা হতে পারে। ছবির প্রতিটি চরিত্রের আছে নিজস্ব গল্প। শহীদ, সিরাজ, নুরু ও হুসাইন বাঁশের ভেলা টেনে নিয়ে যায়। তাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রধানত ভাটা, কখনো মৃদু জোয়ার। শহীদের স্ত্রী আগুনে পুড়ে মারা গেছে, ঘরে তার শিশুসন্তান বাবার অপেক্ষায়। সিরাজের আয়–উন্নতি নেই, স্ত্রী সংসার আগলে রাখে। অবসর নেওয়ার বয়সেও নুরুর পরিশ্রমের ঘাম ঝরে পড়ে নদীর জলে। বারবার নদীভাঙনে বসত হারাবে, এটাই যেন হুসাইনের কপালের লিখন। এরা সবাই জলের মানুষ, জল তাদের জীবিকার ভরসা ও উপায়। অন্যদিকে জঙ্গলে অমানুষিক পরিশ্রম করে লিয়াকত ও তার সঙ্গী বাঁশ শ্রমিকেরা। এরা পরিশ্রমী, মুখে দাঁ কামড়ে দু’হাতে বাঁশ বয়ে নিয়ে যায় লিয়াকত। এই দাঁ লিয়াকতের অস্তিত্বের সম্প্রসারণ, এর সঙ্গে বাঁশ শ্রমিকদের জৈবিক সম্পর্ক, যা নিষ্ঠুরতায় ব্যবহারের জন্য নয়, এটা জীবিকার হাতিয়ার। জঙ্গলে অমানবিক পরিশ্রম করে লিয়াকত ও তার সঙ্গী বাঁশ শ্রমিকেরা। এই মানুষেরা জল ও জঙ্গল থেকে মুক্তি চায়। কেউই তাদের সন্তানদের এ পেশায় রাখতে চায় না। জল ও জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সন্তানদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেয় তারা, যে লেখাপড়ার সুযোগ তাদের হয়নি। শাহীন এ রকমই একটি ন্যারেটিভের বুননে বাঁশ বৈভব গড়েছেন।