প্যালিয়েটিভ সেবা নিন সুস্থ থাকুন ভালো থাকার চেষ্টা করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১২

ছবি সমসাময়িক
  ডা. মেহেদী হাসান।। নিরাময়ের অযোগ্য রোগীদের শারীরিক, মানসিকভাবে সহযোগিতা করা বা সেবাদানের বিষয়কে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলে। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত আয়োজনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে আমি ডা. মেহেদী হাসান বর্তমানে একজন চিকিৎসক হিসাবে আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনাদের প্যালিয়েটিভ সেবায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আছি। এখন প্রশ্ন হল আপনারা অনেকেই অবগতনা যে প্যালিয়েটিভ কেয়ার আসলে কী? আসলে প্যালিয়েটিভের বাংলা অর্থ হলো প্রশমন। অর্থাৎ প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলতে আমরা যা বুঝি সেটা হলো, নিরাময় অযোগ্য রোগী বা যেসব রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে বা একদোমি থাকে না, তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্তিকভাবে সহযোগিতা করা। একেই আমরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলি। ব্যথা, কষ্ট এই বিষয়গুলো যতটা সম্ভব প্রশমিত করাই এ সেবার উদ্দেশ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে রোগীকে শারীরিক ও মানসিক সেবা দেওয়া হয়। অনেক রোগী কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। তখন তাঁরা ভোগান্তি কমানোর জন্য এই বিশেষ সেবা দরকার হতে পারে। সেবা প্রদানকারী সংগঠন ও আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মানসিক শান্তি আনে। এ সেবার ক্ষেত্রে তরুণদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, সেটাই একটি আলোচনার বিষয়। বয়স্ক রোগীর পাশে থেকে সেবা করা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসাশাস্ত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তরুণদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং জনসচেতনতার জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। তরুণ ডাক্তার ও নার্সদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কাজ করা তরুণদের সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। তরুণদের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম শক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। রাষ্ট্রের চিকিৎসাব্যবস্থা ও বাজেটে প্যালিয়েটিভ কেয়ার যুক্ত করতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি চিকিৎসাবিজ্ঞান মূলত রোগ সারানোর দিকে লক্ষ্য করে। তাই আরোগ্য–অযোগ্য রোগগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত থেকে যাচ্ছে। এসব রোগের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার অবশ্যই প্রয়োজন। আরোগ্য–অযোগ্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করা ডাক্তার হিসাবে আমাদের দায়িত্ব। রোগ ভালো করা না গেলেও যেন রোগীর ভোগান্তি কমানো যায়। ভোগান্তি কমানোর সেবাটাও একটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এই সেবায় রোগীর শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করে। আমাদের দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়। ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় মরফিনের দরকার। বাংলাদেশে ক্যানসার ব্যথা দূর করার জন্য প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ কেজি মরফিন দরকার। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে মাত্র ৩ কেজি। এর মানে হলো, অনেক রোগী তীব্র কষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু এটা খুব সহজেই প্রশমন করা যেত। দুঃখজনকভাবে আমাদের এখানে আরোগ্য-অযোগ্য রোগীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমরা যেন তাঁদের দেখেও দেখি না। তাঁদের সেবা করা সব সভ্য সমাজেরই দায়িত্ব। প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটা এভিডেন্স বেইজড স্বাস্থ্যসেবা। আমাদের মেডিকেল শিক্ষাক্রমে এটিকে যুক্ত করা দরকার। বর্তমান করবোনা মহামারিতে সবার আগে প্রয়োজন প্যালিয়েটিভ সেবা। কেননা করোনা আক্রান্ত থেকে সুস্থ হওয়ার পর অধিকাংশ রুগীর মানসিক সমস্যা দেখি দিচ্ছে। অনেকটা শারীরিক সমস্যার কারণে অনেকটা ভয়ে। ★কাদের প্যালিয়েটিভ স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রয়োজনঃ বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৪ কোটিও বেশি মানুষের এই সেবা প্রয়োজন। যার মধ্যে ৩৯ ভাগ হৃদ্রোগের আক্রান্ত ৩৪ ভাগ ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০ ভাগ ফুসফুসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ৬ ভাগ এইচআইভি ৫ ভাগ ডায়াবেটিস ও ৬ ভাগ অন্য অন্য রোগে আক্রান্ত রুগীর জন্য প্যালিয়েটিভ সেবা প্রয়োজন। একই গবেষণায় দেখানো হয়েছে যাদের প্যালিয়েটিভ সেবা প্রয়োজন তারা এই সেবা পাচ্ছে না। কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে দারিদ্রতার কারণে এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ কোথায় কাজ করেন? সাধারণত টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ কাজ করে থাকেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে – ১। টারশিয়ারি পর্যায়ের সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল (অর্থাৎ যেখানে আইসিইউ বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট আছে)। ২। সরকারি ও বেসরকারি কিছু মেডিক্যাল কলেজ। ৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। ৪। বড় ধরনের বেসরকারি হাসপাতাল যেখানে আইসিইউ বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট আছে। একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ কী ধরনের কাজ করেন? প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে – ১। নিরাময় সম্ভব নয় এবং সুস্থতার সম্ভাবনা প্রায় নেই এমন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কাজ করেন একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ। ২। শুধুমাত্র রোগী নয় বরং রোগীর নিকটাত্নীয়দেরকেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং সাহায্য করে থাকেন একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ যাতে রোগীকে ঘিরে তাদের মধ্যে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও হতাশা না বাড়তে থাকে। ৩। কিছু ক্ষেত্রে নিরাময় সম্ভব নয় এমন রোগের শুরুর পর্যায়ের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ। যেমন – এইডস, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের নিরাময় সাধারণত সম্ভব নয়। এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে যা একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞের কাজ। ৪। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরে যদি শরীরের কোথাও (যেমন – ফুসফুস) পানি চলে আসা তা অপসারণের কাজ করতে হয় একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞকে। ৫। দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ব্যথা বা মরণঘাতী আঘাতের চিকিৎসা করতে হয় একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞকে। ৬। আইসিইউ এবং জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ দিতে হয় একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞকে। ৭। হার্ট ফেইলার, রেনাল ফেইলার, দীর্ঘ সময় ধরে বিকশিত ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ (COPD), দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে বিকশিত হওয়া ক্যান্সার এবং মরণব্যাধি স্নায়বিক সমস্যার চিকিৎসা প্রদান করতে হয় একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞকে। ৮। যথাসম্ভব সময় রোগীকে ভালোভাবে এবং ভালো অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয়। ৯। মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীকে মানসিক সহায়তা প্রদান করতে হয়। ১০। কিছু ক্ষেত্রে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নয় এমন রোগীদের প্রাথমিক ও মানসিক সহায়তা প্রদান করার কাজ করতে হতে পারে একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞকে। একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়? প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিষয়ে এমডি, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়? ১। প্যালিয়াটিভ কেয়ারের একটি বিশেষ গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য হল মরণব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করতে হয় কিংবা যতটুকু সময় সম্ভব ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই দৃঢ় মানসিকতার হতে হবে। ২। মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা কিছুদিন পরে মারা যাবেন এটা মেনে নেওয়ার মত মানসিক শক্তি থাকতে হবে। এ ব্যাপারে হতাশায় ভুগলে হবে না। ৩। আবেগী হওয়া যাবে না। মরণব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার আত্নীয়-স্বজন সকলেই অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে আবেগী ও স্পর্শকাতর থাকবেন। এক্ষেত্রে আপনার কাজ যেহেতু হবে তাদের সাথে যোগাযোগ সমন্বয় এবং তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করা সেহেতু কোনভাবেই আবেগের বশে এঁদের কেউ আঘাত পাবেন এমন কথা বলা যাবে না। ৪। কৌশলী হতে হবে। ৫। প্যারাসেন্টেসিস বা শরীরের কোন অংশ থেকে পানি বের করার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। ৬। এপিডিউরাল ইনফিউশন বা ব্যথা প্রতিরোধের জন্য এক ধরনের অ্যানেসথেসিয়ার বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ৭। নিজের ইচ্ছা না থাকলে চিকিৎসাশাস্ত্রের এই বিভাগের দিকে অগ্রসর না হওয়া ভালো বরং অন্য কোন বিভাগে নিজের ক্যারিয়ার এগোনোর চিন্তা করা উচিত হবে সেক্ষেত্রে। ৮। প্যাথোলজি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। ৯। নিরাময়অযোগ্য, দীর্ঘস্থায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হওয়া মরণব্যাধি বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ১০। এইডস, দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য নিরাময় সম্ভব নয় এমন রোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মূলত একজন প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞের অবশ্যই এই ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে এবং এই ধরনের পেসেন্টদের কে সেবা দানের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে বর্তমানে বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ অবস্থা কেমন? আসলে বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার শুরু হয় ২০০৬ সালে থেকে প্রথম বাচ্চাদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিয়ে শুরু হয়। এরপর বড় আকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার শুরু হয়। এরপর থেকে সবাই এই সম্পর্কে ধারণা নিতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রোগীদের সেবা দেয়া হয়। সেই সাথে হোম কেয়ার, টেলি-মেডিসিন দেওয়া হয়। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল, ক্যান্সার ইন্সিটিউটে আউট-ডোর ফ্যাসিলিটি রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ডেল্টা মেডিকেল, আশিক মেডিকেল কলেজে হসপিস বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যেটা ঢাকার মধ্যে হোম-কেয়ার দিচ্ছে। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিদ্যালয় গরীব রোগীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সাপোর্টটা দিচ্ছে। আসুন দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এ প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ কি কি সব সেবা দিয়ে থাকে: ★বহিঃবিভাগ ★অন্তঃবিভাগ ★দিবা শাখা ★লিম্ফইডিমা কেয়ার ★হোম কেয়ার ★২৪ ঘণ্টা টেলিফোন সেবা ✪বহিঃবিভাগ সেবাঃ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহিঃবিভাগের ১নং ভবনের ৫ম তলায় ৫১১নং কক্ষে এই সেবা দেয়া হয়। শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন এই সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বহিঃবিভাগ সেবা পরিচালনার দায়িত্তে থাকেন প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স। এখানে নতুন ও পুরাতন সকল (নিবন্ধিত অথবা নতুন নিবিন্ধন কৃত) রোগীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের আওতাভুক্ত প্রত্যেক রোগীকে পরামর্শ অথবা ভর্তি, যেকোন উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম বহিঃবিভাগে যোগাযোগ করতে হয়। রোগীকে নিয়ে আসা সম্ভব না হলে নিকট আত্নীয় সকল তথ্য (রোগ সম্পর্কিত) সংগ্রহ করে বহিঃবিভাগে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন। ★অন্তঃবিভাগঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর ই-ব্লকের ৫ম তলায় অন্তঃবিভাগ কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিভাগটি ২৪ ঘণ্টা রোগীর সেবা দিয়ে থাকে। ২১ শয্যা বিশিষ্ট এই বিভাগটি ৩টি ভাগে বিভক্তঃ মহিলা ওয়ার্ড (৯ শয্যা বিশিষ্ট), পুরুষ ওয়ার্ড (৯ শয্যা বিশিষ্ট), শিশু ওয়ার্ড (৩ শয্যা বিশিষ্ট)। আমাদের নিজস্ব কোণ কেবিন ব্যবস্থা নেই এবং কেবিনে রোগী ভর্তির ব্যাপারটি সরাসরি কেন্দ্রীয় প্রশাসন পরিচালনা করেন। ✪গৃহসেবা কার্যক্রমঃ সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গৃহসেবা কার্যক্রমটি সপ্তাহে ৫ দিন (শুক্র ও বৃহস্পতিবার বাদে) পরিচালনা করা হয়। এঈ সেবার উদ্দেশ্য নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীর পরিচর্যা ও এ বিষয়ে পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলা। এই গৃহসেবা প্রকল্প পরিচালিত হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী’ দ্বারা। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স তাদের সহায়তা করেন। ★★প্রদত্ত সাধারন সেবা সমূহঃ ★নার্সিং সেবা (ক্ষতস্থান পরিচর্যা, কলোস্টমী কেয়ার, ক্যাথেটার কেয়ার ইত্যাদি)। ★সাধারণ শারীরিক সেবা সমূহ ও পরামর্শ ★ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের ব্যবস্থাপত্র তদারকি করা। ★রোগীর জন্য মানসিক ও সামাজিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহন। ★পারিবারিক সেবাদানকারীকে রোগীরি পরিচর্যা বিষয়ক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া। ★কারা হোমকেয়ার পেতে পারেন? ★সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার এর নিবন্ধিত নিজস্ব রোগী জীবন সীমিতকারী রোগে আক্রান্ত যে কোন রোগী যাঁদের গৃহসেবা প্রয়োজন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০ কিঃমিঃ দূরত্বের মধ্যে বসবাসকারী রোগী দীর্ঘমেয়াদী শয্যাশায়ী রোগী যাদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন। ✪২৪ ঘন্টা টেলিফোন সেবাঃ সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের নিবন্ধিত যে সকল রোগী সুস্থ্য হয়ে বাসায় গিয়েছেন অথবা ঢাকার বাহিরে অবস্থান করছেন তাদের জন্য ২৪ ঘন্টা টেলিফোন সেবা। টেলিফোনটির দায়িত্বে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা ফোনের মাধ্যমে রোগী অথবা পরিবারকে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ✪দিবাশাখাঃ যে সকল রোগীর স্বল্প সময়ের জন্য হাসপাতালের সেবা প্রয়োজন (২৪ ঘণ্টার কম) তাদের জন্য দিবা শাখা। ★★এখানে নিম্মক্ত সেবা সমূহ প্রদান করা হয়ঃ ক্ষতস্থান পরিচর্যা ★হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা। ★পেটের পানি বের করা। ★রক্ত সঞ্চালন। ✪লিম্ফিডিমা কেয়ারঃ সপ্তাহে সোমবার সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার লিম্ফিডিমা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরিচর্যা পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। রোগীর সেবা দান কারীকে ও হাতে কলমে পরিচর্যা কৌশল শেখানো হয়। লেখক, চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: