লেডিস ডে আউট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৩০

ছবি সমসাময়িক
আজ লেডিস ডে আউট। তবে সঙ্গে ফেউ জুটে গেছে। ছাও পাও ঘরে রেখে আসা যায়নি। তারা যথারীতি ট্রেন কাঁপিয়ে ফেলেছে। তাও ভালো, কামরার এদিকটায় লোকজন কম। দুই সিট পেছনে শুধু দুই তরুণ বসে আছে। তারাও জোরসে গান ছেড়ে চুক চুক করে বিয়ার টানছে। হল্লাহাটির অভাব নেই। এর মাঝেই আমরা কজন বঙ্গ ললনা আধবোজা চোখে আধগরম সমুচা চিবোচ্ছি।
লেডিস ডে আউট
লেডিস ডে আউট
ছবি: লেখক
গরমের এই সময়টায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছুটি থাকে। তার সঙ্গে মিলিয়ে দিন কতক ছুটি নিতে হয়েছে। সময়টা শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেব, এই ছিল আলসে ফন্দির ফানুস, পিন দিয়ে ফুটিয়ে আমাকে টেনে বের করা হয়েছে ভুলিয়ে ভালিয়ে। এমন ঝটিকা সফরের আয়োজন খুব পাকা হাতের কাজ। মুখোমুখি সিটে গা এলিয়ে বসে মৌরি আপুর মুখে বিজয়ীর হাসি। ‘কি, কেমন লাগছে?’। ঠান্ডা কমলার জুসে চুমুক দিতে দিতে একান ওকান হেসে উত্তরটা দেওয়া হয়ে গেল। পথে যেতে যেতে সমুচা-শিঙাড়া, অদেখা শহরতলির অলিগলিতে এলোমেলো হেঁটে বেড়ানো, লেকের পাড়ে পিকনিক, ব্যস—আর কিছু বলতে হয়নি। হাতের কাছে জামা-জুতা যা পেয়েছি, হাতে-পায়ে গলিয়ে এক ছুটে এই বব গাড়ি ধরেছি। বব গাড়িই তো। ট্রেনের গায়ে বড় বড় করে লেখা আছে, BOB। বায়েরিশা ওবারল্যান্ডবান-এর সংক্ষেপ। জার্মান ঢং আর এমন কি, শুনেছি সুইস রং নাকি আরেক কাঠি সরেস। তাদের কোনো এক ট্রেন সার্ভিসের নাম, ফ্লার্ট। খটমটে বারো হাত নাম ‘ফাস্ট লাইট ইন্টার-সিটি অ্যান্ড রিজওনাল ট্রেন’। ছোট্ট হয়ে গিয়ে দারুণ দুষ্টু এলআইআরটি (ফ্লার্ট) হয়ে গেছে। অমন ট্রেনে চেপে কাজ নেই। তার চেয়ে বব ভাইয়াই ভালো।
শহরের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রেন ছুটে চলছে সারি সারি ভুট্টাখেতের মাঝ দিয়ে। এমন ঘন খেতের আড়ালে অনায়াসে এক-আধটা ইউএফও লুকিয়ে থাকতে পারে। হঠাৎ কচু পাতা রঙের কোনো হ্যান্ডসাম এলিয়েনের দেখা পেলে মন্দ হতো না। আজ লেডিস ডে বলে কথা। ঝাড়া হাত-পা। হা করে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি দেখে তুনা প্রশ্ন ছুড়ল, ‘আপু বোধ হয় খুব একটা বেড়াতে বের হন না?’ এলিয়েন খোঁজা বাদ দিয়ে অল্পবয়সী বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকালাম।
ট্রেনের জানালায় নীল জলের হাতছানি
ট্রেনের জানালায় নীল জলের হাতছানি
ছবি: লেখক
হালকাপাতলা ছিপছিপে তুনাকে দেখে বুয়েট পাস মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মনেই হয় না। তার সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে একটা জার্মান এমএস। আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই পিএইচডি পাস ফ্রাউ ডক্টর মৌরি আপু যোগ করল, ‘ওর আসলে “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া” অবস্থা। যে দেশে বাস, সেটাই দেখা হয়নি।’ ব্যাপারটা সলজ্জে মাথা নেড়ে স্বীকার করতেই হলো। কড়ে গুনলে প্রায় বছর আষ্টেক আছি এই প্রবাসে। কিন্তু জার্মানি বলতে ওই মিউনিখই বুঝি। কুয়ার ব্যাঙ যাকে বলে। তবে ব্যাঙটা আজ এই বিদ্যাবতী বিদুষীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে মানুষ হওয়ার একটা ট্রাই মেরে দেখবে। ২. গল্পে-আড্ডায় সময় কর্পূরের মতো উধাও। মাঠ-ঘাট, পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পাতার ফাঁকে নীল জল ঝিলিক দিয়ে উঁকি দিল। ট্রেন এসে থামল টেগের্নসি স্টেশনে। নামের সঙ্গে ‘সি’ থাকা মানেই এখানে একটা লেক আছে। ‘ইংরেজিতে যাহাই লেক, জার্মানে তাহাই “সি”’। সমতল থেকে প্রায় সাড়ে ৭০০ মিটার উঁচুতে বাভারিয়ান আলপস ঘেরা টেগের্নসি নাকি জার্মানির টপ টেন লিস্টে থাকা লেক। আজ তাহলে সৌন্দর্য পরীক্ষা হয়ে যাক। সত্য হলে ‘আরে ওয়াহ্, ওয়াহ্’ বলে খৈয়াম কিংবা গালিবের রোমান্টিক দু-একটা শের-শায়েরি ঝেড়ে দেব। আর মিথ্যে হলে লেক পাড়ের কোনো গাছের ডাল ভেঙে রেখে যাব। বহুত খতরনাক লোক আমরা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: