মজনুর রহমান, মনিরামপুর(যশোর)॥ কোভিডের সম্মুখযোদ্ধা ডা. মেহেদী হাসান এবার যশোরের মনিরামপুরে আর্তমানবতার সেবায় চালু করেছেন অ্যাম্বুলেন্স সেবা। নিজস্ব অর্থায়নে কেনা অ্যাম্বুলেন্সটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনামূল্যে মনিরামপুরে লাশ বহনের। গত একমাসে বিনামূল্যে লাশ বহন করা হয়েছে পাঁচটি। অন্যদিকে নামমাত্র মূল্যে সেবা দেওয়া হয়েছে ১০৭ জন রোগীকে। আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মহামারি কোভিড-১৯’র প্রাদুর্ভাবে মানুষ যখন দিশেহারা তখন যশোরের মনিরামপুরে মানবিক ডাক্তার খ্যাত মেহেদী হাসান নিরন্তর ছুটে চলেন কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিতে। শুধু মনিরামপুরেই তিনি সীাবদ্ধ রাখেননি ফ্রি চিকিৎসাসেবার। তিনি সারাদেশে কোভিড আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার রোগীকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেন। ফলে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে মনিরামপুরে মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. মেহেদীকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট(আইইইবি) থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এছাড়া তিনি ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০-র অধীন শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ডা. মেহেদী হাসান বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের আগরহাটি গ্রামের হাজী জবেদ আলীর ছোট ছেলে ও যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য এস এম ইয়াকুব আলীর ছোট ভাই। ডা. মেহেদী চাকরির পাশাপাশি নিজ এলাকার মানুষের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।
মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় আমার শ্যালক আব্দুল খালেকের মৃত্যুর পর ধারদেনা করে ১ জুন লাশ দেশে আনা হয়। শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডা. মেহেদীর ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে’ বিনামূল্যে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সেবার কথা আমরা সব সময় মনে রাখব।
২৪ ঘন্টা আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সেবার সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোঃ শাহ্ জালাল বলেন, মনিরামপুর উপজেলার আয়তনের মধ্যে রোগী আনা নেওয়ার জন্যে নির্ধারন করা হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। মনিরামপুর থেকে যশোরে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া যেখানে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সেখানে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় মাত্র ছয়শ টাকা। ঢাকায় নিতে গুণতে হত ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। সেখানে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় মাত্র সাত হাজার টাকা। আর খুলনার জন্যে নেওয়া হয় দুই হাজার টাকা।
পারিবারিক অনুপ্রেরণা থেকেই সবসময় মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছি উল্লেখ করে ’আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবার প্রতিষ্ঠাতা ডা. মেহেদী হাসান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে সাড়া জেগেছে তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবার বহরে ফ্রিজিংসহ আরো তিনটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: