কঠিন প্রতিযোগিতাপূর্ণ মার্কেটিং জব হলো ঔষধ কোম্পানির চাকরি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২১ ১৮:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২১ ১৮:২৬

ছবি সমসাময়িক

বিশেষ প্রতিবেদন।।

ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি বলতে আমরা বুঝি যে সকল প্রতিষ্ঠান ঔষধ উৎপাদন কারী হিসাবে কাজ করে বা ঔষধ উৎপাদন করে। ঔষধ তৈরী থেকে শুরু করে রোগির হাতে পৌছে দেওয়া পর্যন্ত সব কিছু করে থাকে। বেশির ভাগ ডাক্তার আপনাকে যে ঔষধ লিখে দেয় তা কিন্তু এ সকল কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ রা লিখায়।

এখন আসুন বিস্তারিত জেনে রাখি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি কি?

ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি বলতে আমরা বুঝি “সেলস্ রিপ্রেজেনটিভ” এটাকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নাম করণ করে থাকেন। কোন কোম্পানি বলে “মেডিকেল প্রামোশন অফিসার”,কোন কোম্পানি বলে “সেলস্ রিপ্রেজেনটেটিভ”, কোন কোম্পানি বলে “মার্কেটিং অফিসার”, কোন কোম্পানি বলে “মেডিসিন প্রামোটার”, কোন কোম্পানি বলে “প্রেফেশনাল সার্ভিস অফিসার” ইত্যাদি তবে সবার একাই কাজ কোম্পানির ঔষধকে প্রোমোট বা মার্কেটিং করে সেল করা।

ঔষধ কোম্পানিতে সেলস্ রিপ্রেজেনটিভের কাজ:

সেলস্ রিপ্রেজেনটিভ-এর সাধারণত যে সকল কাজ করতে হয় তাহলো- প্রতিদিন তার টার্গেটেড এলাকার মেডিকেল এবং ডিসপেন্সারীতে ডাক্টারদের সাথে কথা বলে কর্মরত কোম্পানির ঔষধ প্রেশক্রিপশনে লিখানো। এটা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি তাদের রিপ্রেজেনটিভদের বিভিন্ন ভাবে টার্গেট হিসাবে দিয়ে থাকে। আপনি যে কোম্পানির হয়ে কাজ করবেন তার কাছে থেকে অর্থাৎ আপনার কাছে থেকে উপহার হিসাবে কিছু না নিয়ে কোন ডাক্টার কিন্তু আপনার কোম্পানির কোন ঔষধ প্রেশক্রিশনে লিখবে না। বাস্তবে এটাই হয়ে থাকে তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্টার ভালো হলে রোগির দিকে প্রাধান্য দেয়। আপনি হয়ত মেডিকেল থেকে বের হওয়ার সময় দেখবেন কিছু লোক বাইরে দাড়িয়ে প্রেশক্রিশন দেখছে। আসলে তারা দেখছে ডাক্টার তাদের কোম্পানির ঔষধ প্রেশক্রিশনে লিখছে কি না? সেলস্ রিপ্রেজেনটিভের প্রধান কাজ হলো প্রেশক্রিশনে ঔষধ লিখানো। তার পরের কাজ হচ্ছে- আপনার র্নিধারিত প্রতিদিনের টার্গেটেড এলাকার সকল ফার্মেসীতে গিয়ে ঔষধের অর্ডার কাটা। কারণ প্রতিটা কোম্পানি আপনাকে একটা প্রতিদিনের টার্গেট ফিক্সড করে দিবে আপনি যদি টার্গেট পুরণ করতে না পারেন তাহলে কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন ভাবে পানিশমেন্ট দিবে। যদি কোন কারণে কোন ফার্মেসী ঔষধ নেওয়ার পর বলে যে ভাই আজ টাকা নেই কাল নিয়েন তখন মাসের শেষে আটকে গেলে আপনার বেতন থেকে টাকা দিয়ে আপনাকে কোম্পানি টাকা পরিশোধ দিতে হবে এটাও একটা ঔষধ কোম্পানির রুলস্।

ঔষধ কোম্পানির চাকরির খবর:

আপনি যদি খেয়াল করেন দেখবেন প্রায় প্রতি মাসেই ঔষধ কোম্পানিতে সেলস্ রিপ্রেজেনটিভ পদে সার্কুলার হয়। আপনার মাথায় কি একবারেও আসে না? কি ব্যাপার প্রতি মাসে ঔষধ কোম্পানিতে এত লোক নিয়োগ হয় এরা কোথায় যায়? আর ঔষধ কোম্পানি এত লোক কি করে? আসলে আমি বলছি কি হয়, কোথায় যায়- প্রতি সপ্তাহের পত্রিকা খোলা মাত্র দেখবেন ঔষধ কোম্পানিতে অনেক সার্কুলার রয়েছে বিশেষ করে শুক্রবারের প্রথম আলো পত্রিকায়। তাও আবার নিজ নিজ জেলাতে পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। শুনেই মনে হবে কত ভালো কিন্তু এর ভিতরেও অনেক ভ্যন্ত রয়েছে বস! ঔষধ কোম্পানির চাকরিতে ক্যান্ডিডেট একদিক দিয়ে যায় অপর দিক দিয়ে বের হয়ে আসে। এজন্য সারা বছর লোক নিয়োগ হতে থাকে। আশা করছি এবার বুঝতে পেরেছেন ঔষধ কোম্পানিতে কেন এতো বারো মাস সার্কুলার হয়, নিয়োগ হয়।

ঔষধ কোম্পানি থেকে চাকরি ত্যাগ করার কিছু কারণ:

১। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরিতে যোগদানের সময় আপনার শিক্ষা জীবনের সকল সার্টিফিকেটের মুল কপি নিতে চাইবে যার কারণে বেশির ভাগ চাকরি প্রার্থী চাকরি করেনা, চাকরি ছাড়ে চলে আসে। ২। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করলে আপনাকে তারা আর কোন কোম্পানি বা সরকারী চাকরি করার সুযোগ দিবেনা। আপনাকে প্রতিদিন সকল ৮টা থেকে রাত ১০টা- ১১টা পর্যন্ত কাজ করিয়ে নিবে এমন কি বলবে শুক্রবারে কাজ আছে, ট্রেনিং আছে ইত্যাদি কিছু একটা জুড়ে দিয়ে কাজ করিয়ে নিবে। ফলে আপনাকে কোন সময় দেওয়া হবেনা। এ কারণে অনেক কর্মী চাকরি ত্যাগ করে। ৩। যখন ঔষধ কোম্পানি কোন কর্মী নিয়োগ দেয়, তখন তাদের জন্য প্রথমে এক থেকে দুই মাসের মত বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কর্মীদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে। আর যখন চাকরি প্রার্থী কর্মী ট্রেনিং করে তখন কোম্পানি সম্পর্কে এবং কোম্পানির ভিতরে কি আছে, আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারে জানতে পারে, দেখে যে এখানে চাকরি করলে তার লোকশান হবে, তখন কিছু কিছু ক্যান্ডিডেট ঘাবড়ে যায়। ভাবে এসব বিষয় আমাদের আগে বলেনি কিন্তু এখন দেখছি এসব ঝামেলা আছে এই চাকরি করা যাবেনা।… ৪। কিছু ঔষধ কোম্পানি ট্রেনিংয়ের মধ্যে বিভিন্ন বাহানা বের করে ক্যান্ডিডেট ছাটাই করে দেয়। বলে দুঃখিত স্যার আপনি নেক্স টাইম আবার ট্রাই করেন। আপনার এটা ভালো হয়নি ওটা ভালো হয়নি ইটিসি।… ৫। কিছু ঔষধ কোম্পানি ট্রেনিং হওয়ার পরেও চাকরিতে নিয়োগ দেয় না, বসিয়ে রাখে, যাকে বলে ওয়েটিং-এ রাখা, এভাবে দেখা যায় এক সময় চাকরি হয়না। ৬। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করতে হলে আপনাকে পরিবার, ফ্যামিলি ভূলে যেতে হবে। কারণ তখন পরিবারকে দেওয়ার মত আপনার কাছে কোন সময় থাকবে না। এছাড়াও আপনার চাকরির পোস্টিং বাংলাদেশের কোথায় পড়বে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কিছু কিছু সময় এজন্য অনেকেই চাকরি ত্যাগ করে চলে আসে। ৭। শেষমেশ হলো আপনাকে যখন প্রতিদিনের টার্গেট দিবে তখন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা- ১১টা পর্যন্ত অনেক দোড়া-দৌড়ি করেও যখন কোন টার্গেট পূরণ করতে পারবেন না। উপর থেকে বার বার পানিশমেন্ট পাবেন, তখন এমনিতেই চাকরি ছাড়ে দিতে ইচ্ছা করবে।

ঔষধ কোম্পানিতে নিয়োগ:

ঔষধ কোম্পানিতে নিয়োগ হয় সহজ কিছু পদ্ধতিতে যেমন আপনাকে সরাসরি ভাইভার জন্য ডাকা হবে তখন আপনি আপনার সার্কুলারে উল্লেখিত কাগজ পত্র সংগে নিয়ে ভাইভা কেন্দ্রে হাজির হলেই দেখবেন অনেক প্রার্থী দাড়িয়ে আছে। এমনটা আপনি যতবার যাবেন ততবার দেখবেন কারণটা কেন তাও বলছি। কারণ টা হলো ঔষধ কোম্পানিতে চাকরির ভাইভা তে নিয়োগ কর্মী দেখে কাদের চাকরি বয়স প্রায় শেষ, আর কারা ইংরেজি ও বিজ্ঞান ভালো পারে। যাদের মধ্যে এসব গুন গুলো থাকে তাদের কে বাছাই করে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি ট্রেনিং-এর নিবার্চন করে।

ঔষধ কোম্পানিতে চাকরির ভাইভা:

যে সকল ঔষধ কোম্পানিতে আগে লিখিত পরিক্ষা হয়। তারা লিখিত পরিক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছায় করে নেয়। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরির জন্য ভাইভা দিতে হলে আপনাকে ইংরেজিতে একটু এক্সপার্ট হতে হবে। সবার আগে আপনার ফুল গেট আপ ঠিক রাখতে হবে। যেমন- জুতা ইন-শার্ট প্যান্ট ট্রাই ও পরতে হবে, সকালে শেভ করে ফিট হয়ে ভাইভা কেন্দ্রে হাজির হাতে হবে। নতুবা আপনার ভাইভা গ্রহন করা হবেনা। ভাইভা থেকেই আপনাকে বাতিল করা হবে। কিন্তু আমাদের আগে কিছুই বলা হয়নি, অনেক কোম্পানি আবার ট্রাই বিক্রি করে তা আপনাকে কিনতে হবে। নিজ জেলায় যখন পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা গেলাম, দুঃখের বিষয় অনেক জন বাধ্য হয়ে ট্রাইতো কিনলো, তার পরেও তাদের ওখানকার নিয়মে আবার সিলেকশন করে বাতিল করে দিলো। কিন্তু নিজ জেলায় সিলেক্ট হওয়ার পর, অনেক বার বলেছি স্যার দেখেন! এত কষ্ট করে ঢাকা যাওয়ার পর আবার বাতিল করে দিবে নাতো? তিনি বললেন না, আমরা যাকে নিবার্চিত করি তাদের কখনো বাতিল করা হয়না। তার পরেও অনেক জনকে বাতিল করা হলো। তখন তাদের ট্রাই টি ফেরত নেওয়া উচিৎ ছিলো। যাই হোক একজন বেকার ছেলের এত টাকা খরচ করে নিজ জেলায় সিলেক্ট হওয়ার পর আবার যখন ঢাকা থেকে বাতিল হয় তখন তার কেমন কষ্ট লাগতে পারে? হয়ত বেকার চাকরি প্রার্থীগণ বুঝতে পারছেন।

ঔষধ কোম্পানি চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা:

বেশিভাগ ঔষধ কোম্পানিতে ফ্রেশ বা পুরাতন গ্যাজুয়েটদের যেমন-ডিগ্রি/অনার্স/মার্স্টাস পাশদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে যাদের ব্যবগ্রাউন্ডে এসএসসি/এইচএসসি বায়লোজিক্যাল সাইন্স রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দেয় হয়। আবার মার্দ্রাসা বোর্ডের স্টুডেন্ডদের কে কোন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়না, যদি এসএসসি তে মাদ্রার্সা থাকে তাও বাতিল করা হয়। বলা যায় নেয় না বললে চলে। রেজাল্ট যাই হোক না কোন সবচেয়ে জেনারেল বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

ঔষধ কোম্পানির পরিক্ষার সাজেশন:

ঔষধ কোম্পানির পরীক্ষার সাজেশন তেমন কঠিন একটা বিষয় না তাও আপনাদের বিষয়টা বলে দেই তাহলো

পরীক্ষার আগের দিন থেকে যা যা করবেন তাহলো:

আগের দিন থেকেই আপনি কোম্পানির চাহিদা মত প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র রেডি করে নিবেন, তার সাথে ইংলিশ বিষয় টা একটু ভালো ভাবে ঝাঁলিয়ে নিবেন যেমন- নিজের সম্পর্কে সব ইংরেজিতে কথা বলা প্যাকটিস করা, ক্যারিয়ার অবজেক্ট, অনুবাদ, সাবলীল ইংলিশ বলতে পারা এবং লিখতে পারা বিষয় গুলো দেখে নিবেন। সাথে জীব বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রধান প্রধান বিষয় সম্পর্কে যেমন- সংঙ্গা, অর্থ, সংকেত, কার্যপ্রণালী, সম্পর্কে স্টাডি করে নিবেন। আপনার জন্য ঔষধ কোম্পানির ভাইভা সাজেশন এতটুকুই যথেষ্ঠ। আপনি যদি এই দুইটা বিষয় ভালো ভাবে উওর করতে পারেন তাহলে আপনি ট্রেনিং এর জন্য নির্বাচিত হবেন।

লিখিত পরিক্ষার সিলেবাস/সাজেশন হলো:

ইংরেজি কিছু অনুবাদ- বাংলা টু ইংলিশ, ইংলিশ টু বাংলা আসে সাথে কিছু টিক মার্ক ইত্যাদি আসে। জীববিজ্ঞান থেকে কিছু প্রশ্ন আসে এজন্য জীববিজ্ঞানের টিকমার্ক বা এমসিকিও প্রশ্নগুলো একটু দেখে নিবেন। গণিত থেকে কিছ প্রশ্ন থাকবে- হিসাব নিকাশ মূলক পারলে গণিত দেখে নিবেন। সাধারণ জ্ঞান থেকে কিছু প্রশ্ন থাকবে-বর্তমান আবিস্কার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। তবে লিখিত পরিক্ষা নিয়ে টেনশনের কিছু নাই পাশের জনের সাথে কথা বলে নিবেন আর প্রশ্নের অর্ধেক উওর করতে পারলেই আপনি সিলেক্ট হবেন। [বিঃদ্রঃ বেশির ভাগ কোম্পানিতে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেয় তাই ইংরেজির উপর প্রশ্ন করে।]

লিখিত পরীক্ষারপর সরাসরি ভাইভা সাজেশন:

লিখিত পরীক্ষার পর সরাসরি ভাইভা তে তেমন কোন প্রশ্ন করেনা, আপনাকে বলতে পারে যেমন- আপনি কি চাকরি করবেন ? কোথায় থাকেন ? বাড়ি কোথায় ? বাবা কি করে ? আপনার বাড়িতে কে কে আছে ? আপনার ফ্যামিলির সদস্য সংখ্যা কত ? বিয়ে করেছেন? বাচ্চা আছে? কয়টা, কি করে ? আগে কোথাও কোন জব করেছেন কি-না ? চাকরি ছাড়লেন কেন? আপনার রেজাল্ট ভালো/খারাপ ইত্যাদি। তবে যে সকল ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি সরাসরি ভাইভা নেয়। তারা প্রার্থীদের যে বিষয় গুলো দেখে নির্বাচন করে তাহলো: প্রার্থী দেখতে স্বাস্থবান এবং স্মার্ট কি-না। প্রার্থী সাবলিল ভাবে ইংরেজি পড়তে বলতে পারছে কি-না। ইংরেজি অনুবাদ করতে পারেছে কি-না। বুঝতে পারছে কি-না। আপনাকে যে কোন অর্থের অনুবাদ ধরতে পারে। আপনাকে তাদের জেনেরিক মেডিসিনের নাম গুলো পড়তে দিতে পারে। জীববিজ্ঞান থেকে কিছু প্রশ্ন করে দেখবে আপনার জীববিজ্ঞানে জ্ঞান আছে কি-না।

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ:

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাদের কে বলা হয় যারা কোন কোম্পানির কর্মী হয়ে তাদের ঔষধ বিভিন্ন মেডিকেলের ডাক্টারের কাছে তুলে ধরে যেমন- ঔষধের মান, কার্যকারীতা, গুনাগুন, উপকারীতা, পার্শপ্রতিক্রিয়া, মোট কথা ঔষধ সম্পর্কে ডাক্টার কে বিস্তারিত বুঝিয়ে ঔষধ ডাক্টার দ্বারা প্রেসক্রাইব করে রোগির কাছে পৌছে দিয়ে মার্কেটিং করাই হলো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এর কাজ।

ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি বেতন:

ঔষধ কোম্পানিতে শুরুতেই ভালো মানের একটা বেতন স্কেল দিয়ে চাকরি দিয়ে থাকে। যার মধ্যে থাকে- ১। পূর্ণ স্যালারী প্যাকেজ। অথার্ৎ বেতনের সাথে সব কিছু যুক্ত একটা টাকা কে বোঝায়। আর্কষণীয় বেতন স্কেল। যা ১৬০০০/- থেকে শুরু হবে তারপর আপনার কাজের উপর স্কেল নির্ধারিত হবে। ২। সাথে টিএ-ডিএ অর্থাৎ যাতায়াত বা অন্যান্য কিছু খরচ বাবদ টাকা দেওয়া হবে যা আপনার মাসে যত খরচ হবে তার থেকেও কম কিছু টাকা দেওয়া হয়। ৩। ট্রেনিং অ্যালাউন্স (এটা কোম্পানির উপর নির্ভর করে কতটা দিবে। তবে আপনি যদি সফল ভাবে ট্রেনিং করে পাশ করতে পারেন তাহলে ট্রেনিং শেষে ৫০০০/- টাকা মত দিতে পারে।) ৪। প্রথমে মোবাইল সিম দিবে। কিছু দিন পর একটা স্মার্ট এন্ড্রয়েড মোবাইল দিবে যার সাথে থাকবে ট্যাকিং ডিভাইস থাকবে। যেন কোম্পানি আপনাকে ট্যাক করতে পারে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন, ইত্যাদি। ৫। তারপর আপনি যদি সফল ভাবে ছয় মাস চাকরি করতে পারেন তখন আপনাকে লোনের মাধ্যমে একটা মোটর সাইকেল দেওয়া হবে যা প্রতিমাসে আপনার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কেটে নেওয়া হবে। ৬। কিছু কিছু কোম্পানি থেকে আপনাকে মোবাইল খরচ এবং মোটর সাইকেলের তৈলের টাকা দেওয়া হবে। তবে আমার জানা মতে সব কোম্পানি এসব খরচ বহন করে না। ৭। আপনাকে দুইটা ঈদ বোনাস সহ বাৎসরিক কাজের দক্ষার উপর (যাকে বলে পার্ফামেন্স বোনাস) দেওয়া তাবে আপনাকে ফ্যামিলির সাথে থাকার মত ছুটি কম দেওয়া হবে। ৮। আপনি যদি আপনার দক্ষতা দ্বারা বেশি সেলস্ নিয়ে আসাতে পারেন তাহলে আপনাকে কমিশন দেওয়া হবে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব একটা কাজ আপনাকে আপনার টার্গেট পূরণ করতেই যেখানে হিমসিম খেতে হবে সেখানে ইনসেন্টটিভ দূরের কথা। ৯। কোম্পানির কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন ট্রেনিং এর জন্য বিদেশ পাঠানো হতে পারে তবে কোম্পানি আপনার খরচ বহন করবে। ১০। কোম্পানির পক্ষ থেকে, আপনার বেতন থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা কেটে রাখা হবে আপনার ভবিষৎতের জন্য, যাকে বলে প্রোভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। ১১। কোন ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি প্রার্থী যদি মনে করেন উপরোক্ত সুবিধা গুলো পাওয়া এতটা সহজ তাহলে প্যাকটিকেল চাকরিতে জয়েন করে দেখতে পারেন। তাবে আমার জানা মতে এগুলো পাওয়া এতটা সহজ না। কোন কোম্পানি আপনাকে এত সহজে কোন কিছু দিবে না। আপনাকে আপনার দক্ষতা আগে দেখাতে হবে, আপনি যদি দক্ষ হন তাহলে চেষ্ট করে দেখতে পারেন কারণ অনেকেই করছে তো? তবে সবাই সফল না।

ঔষধ কোম্পানির ট্রেনিং:

ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি জন্য সাধারণত যে ট্রেনিং দেওয়া হয় তা হলো একজন ডাক্টার চার বছরের এম.বি.এস কোর্স করে যা যা বা যে বিষয় গুলো শিখে তার কাছা-কাছি কিছু, আপনাকে একমাসে ট্রেনিং-এর মাধ্যমে শিখানোরে চেষ্টা করা হবে। যারা শিখতে পারবে তারা ট্রেনিং-এ পাশ করবে। ট্রেনিং-এর মধ্যে যে বিষয় গুলো থাকে তাহলো:

কোম্পানি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা যেমন-

বর্তমানে কোম্পানির অস্থান, কোম্পানিতে কি কি ঔষধ তৈরী হয়। মোটকথা প্রথমে আপনাকে কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত খুটিনাটি বুঝানো হবে দেখানো হবে। যেন আপনি সহজেই কোম্পানির তথ্য যে কাউকে বলতে পারেন।

বায়োলজি বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা যেমন-

আপনাকে উচ্চ লেভেলের জীব বিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত শেখানো হবে যেমন- জীব, জীবদেহ, মানবদেহ, কোষ, তন্ত্র, টিস্যু, প্রাণি, উদ্ভিদ, ইত্যাদি বিস্তারিত ব্যবহার ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে শেখানো হবে।

প্রতিটা ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে। যেমন-

কোন ঔষধে কি কাজ, কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে, কত মাত্র ব্যবহার করতে হবে, কার্যকারিতার সময়, পার্শ প্রতিক্রিয়া, মিলিগ্রামের ব্যবহার, সংকেত, জেনেরিক নাম, কোন তন্ত্রে কিভাবে কাজ করবে, এসব সহ আরো কত কি জানতে হবে তা আমার আপনার ধারণার বাইরে। আপনি যদি না জানেন তাহলে কিভাবে রিপ্রেন্টেটিভ হবেন? এজন্য আপনাকে সব শেখানে হবে ট্রেনিং-এর মাধ্যমে যদি শিখতে না পারেন তাহলে আপনাকে ট্রেনিং থেকে বাদ দেওয় হতে পারে। আপনারা হয়তো শুনেছেন অনেক জন ট্রেনিং থেকে চলে আসে, এটার দুইটাই কারণ, তাহলে ট্রেনিং এর ক্লাসের পড়া মুখস্ত করতে না পারার পানিশমেন্ট অথবা ট্রেনিং-এর পরিক্ষায় ফেল করা। এখন নিশ্চিত ধারণা পেয়েছেন ঔষধ কোম্পানির চাকরি মানে হার্ড প্রতিযোগিতার মার্কেটিং জব।

লেখক, একজন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেন্টেটিভ




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: