মোবাইল ব্যাংকিং জিডিপিতে দোকানপ্রতি অবদান মাসে ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা

বানিজ্যিক সংবাদ।। | প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২ ০২:৪৯

বানিজ্যিক সংবাদ।।
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২ ০২:৪৯

ফাইল ফটো

জিডিপিতে অবদান কেমন, তা জানতে ছয়টি খাত নিয়ে সমীক্ষা করেছে বিবিএস। এর মধ্যে একটি মোবাইল ব্যাংকিং।

জিডিপিতে দোকানপ্রতি অবদান মাসে ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা
শাহ আলম মিয়া রাজধানীর উত্তরা এলাকায় রিকশা চালান। থাকেন উত্তরখান থানার মাজার এলাকার একটি মেসে। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে। প্রায় ১০ বছর ধরে রাজধানীর বুকে রিকশা চালান। কয়েক বছর আগেও দু-তিন মাস পরপর বাড়ি গিয়ে জমানো টাকা পরিবারের সদস্যদের হাতে দিয়ে আসতেন। বাড়ি যাওয়ার সময় যাতায়াত ভাড়ার টাকা বাড়তি খরচ হিসেবে যোগ হতো।

এখন আর সেই চিন্তা নেই। দু-তিন দিন পরপরই গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীর কাছে সংসার খরচের টাকা পাঠাতে পারেন তিনি। বিকাশ, রকেটের মতো মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু হওয়ায় শাহ আলম মিয়ার মতো অসংখ্য ‘দিন আনি দিন খাই’ মানুষের অর্থ লেনদেনে সুবিধা হয়েছে। অথচ তাঁরা সারা জীবন ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিলেন।

বাংলাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ফোন বা ডিভাইসের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথম এমএফএস চালু হয়। গত এক যুগে এই সেবার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা এত দিন ধরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গণনায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসত না। অথচ এমএফএস সেবা দিতে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১০ লাখ এজেন্ট আউটলেট বা দোকান আছে। এগুলো প্রায় শতভাগ ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠিত।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে আর্থিক খাতের সঙ্গে সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিকরণে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা বড় ভূমিকা পালন করেছে। এতে অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে। শহরের রিকশাচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ সহজেই গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একজন জেলে নদীতে থাকতেই জানতে পারেন, কোন বাজারে বেশি দাম উঠেছে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, জিডিপি গণনায় খাতওয়ারি অবদান আরও বেশি বিস্তৃতভাবে আসা উচিত। এতে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি সূক্ষ্মভাবে বোঝা যাবে।

যেসব গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান খাত অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, কিন্তু জিডিপি গণনায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না, এমন ছয়টি খাত নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক সমীক্ষা করেছে। ওই ছয়টি খাতের অন্যতম হলো মোবাইল ব্যাংকিং।

বিবিএসের সমীক্ষা বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং করে এমন একটি প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে গড়ে ১৬ হাজার ৩৭০ টাকার অবদান রাখছে। মোটা দাগে, মোবাইল ব্যাংকিং করে ওই সব প্রতিষ্ঠান খরচ বাদে প্রতি মাসে কমিশন বাবদ সমপরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। সম্প্রতি ২১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেটের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই চিত্র পেয়েছে বিবিএস।

বিবিএসের সার্ভেজ অ্যান্ড স্টাডিজ রিলেটিং টু জিডিপি রিবেইসিং (জিডিপির ভিত্তিবছর পুনর্নির্ধারণে সমীক্ষা) ২০১৫-১৬ প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের গ্রামগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আউটলেট বা দোকান দিয়ে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের সবাই অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাই এত দিন এসব কর্মকাণ্ড জিডিপিতে সঠিকভাবে উঠে আসত না। এই সমীক্ষার ফলে এখন আউটলেট প্রতি অর্থনীতিতে কত মূল্য সংযোজন হচ্ছে, তা সঠিকভাবে গণনা করা সম্ভব হবে। কারণ, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিবিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২১৮টি দোকানের প্রতিটিতেই মালিক নিজে বসেন। অর্ধেক দোকানে কর্মচারী আছে। কর্মচারীদের মাসিক গড় বেতন ৬ হাজার ৫৪০ টাকা।

একটি মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেটে বিকাশ, নগদ, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ, টি-ক্যাশ, এমক্যাশ—এমন বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আছে। তবে একটি দোকানে কমিশন বাবদ যত আয় হয়, এর দুই-তৃতীয়াংশই আসে বিকাশ থেকে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে বিকাশ।

এজেন্ট ব্যাংকিং বিস্তৃত হচ্ছে
জিডিপিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অবদান কেমন, তা জানতে ১২৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে বিবিএস। এসব আউটলেটের প্রায় ৯৫ শতাংশই ব্যক্তিমালিকানায় চলে।

বিবিএসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতি আউটলেট বাবদ মাসে মূল্য সংযোজন ৫০ হাজার ১৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই খাতের মূল্য সংযোজন বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে প্রতি আউটলেটে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৪০ হাজার ৭৯০ টাকা। এখন প্রতিটি আউটলেটে গড়ে তিনজনের বেশি কর্মী কাজ করেন। তাঁদের বেতন গড়ে ১০ হাজার টাকা। বেতনভাতাও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৬০০ টাকা।

বিবিএস আরও কয়েকটি নতুন খাত খুঁজে বের করেছে, যেখান থেকে জিডিপিতে অবদান ক্রমেই বাড়ছে। যেমন মুঠোফোন মেরামত ও রিচার্জের দোকান, সিএনজি ও এলপিজি ফিলিং স্টেশন, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, বাজার গবেষণা সংস্থা।।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: