ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমল ৫০ পয়সা

অনলাইন নিউজ করে।। | প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২ ০৭:০৫

অনলাইন নিউজ করে।।
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২ ০৭:০৫

ফাইল ফটো

 

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছেই। বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকা মান হারাচ্ছে। এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক‌মে গে‌ছে ২৫ পয়সা। আর গত ১৪ দিনে দুই দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে ৫০ পয়সা।

মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কিনতে হয়েছে। যা গতকালও (সোমবার) এক ডলা‌র কেনা গেছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। গত ২৭ এপ্রিলে ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা।

এদিকে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে কেনা দামের চেয়ে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি। আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজারে এক ডলার ৯২ থেকে ৯৩ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট দেখা দেয়। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান শুধু কমছেই।

২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। এরপর ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক পয়সা করে বেড়ে ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতাে ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আবার বেড়ে যায়, গিয়ে পৌঁছায় ৮৬ টাকায়। গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে এক টাকা ৯০ পয়সা। এখন দাম গিয়ে ঠেকেছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায়।

এদিকে করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় আমদানি বেড়েছে। একইসঙ্গে আমদানি পণ্যের দামও বেড়েছে। সব মিলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৭ শতাংশ, এলসি খোলা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া করোনার কারণে স্থগিত এলসির দেনা এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে চলমান বৈদেশিক ঋণের কিস্তির পাশাপাশি করোনার সময়কার স্থগিত কিস্তি। সব মিলে বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দি‌য়ে‌ছে।

অপরদিকে মার্কিন মুদ্রা ডলার ও যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোর বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। বরং এর বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছরের (২০২১) শুরুর দিকে প্রতি ইউরো বিক্রি হতো ১০৩ টাকা ১১ পয়সা দরে। বছর শেষে তা বিক্রি হয়েছে ৯৯ টাকা ৮৯ পয়সা দরে। আলোচ্য সময়ে টাকার মান বেড়েছে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ। একই সময়ে নগদ ইউরোর দাম ১০২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টাকার মান বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ইউরোর বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। করোনার কারণে ইউরোর ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। টাকার সেভাবে দরপতন হয়নি। এ কারণে ইউরোর বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে।

বাংলাদেশে বেশিরভাগ এলসিই খোলা হয় ডলারে। ইউরোতে খোলা হয় খুবই কম। ফলে ইউরোর বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ার সুবিধা দেশ পায়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দরে লাগাম টানা যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার (৪৬০ কোটি টাকা) বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফল আসছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেই যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছেড়ে হস্তক্ষেপ করা এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। বাজারকে বাজারের গতিতে চলতে দিতে হবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: