নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহ; মণিরামপুর ১৬ ইউপি'তে বিদ্রোহীরা জ্বলছে বিদ্রোহের আগুনে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০২:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০২:৫২

ছবি সমসাময়িক

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। 

যশোরের মণিরামপুরে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতার জন্য ইতিমধ্যে ১৬ ইউপিতে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে বর্তমান দাপটশালী ছয়জন চেয়ারম্যানকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।তার ওপর বিতর্কিত ও অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগে অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ১০ ইউপিতে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ(২ নভেম্বর) যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বিদ্রোহের তাপ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে বিদ্রোহের ইউপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামি ২৮ নভেম্বর যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১৬ ইউপিতে নির্বাচন। এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় থেকে বিএনপি-জামায়াত অংশ না নেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে বেশ আগেভাগেই। আওয়ামীলীগ থেকে ১৬ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে দলিয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় ১২৮ জন প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করেন। ২২ অক্টোবর আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলিয় মনোনয়ন পান ১৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের অত্যন্ত দাপটশালি বর্তমান ছয়জন চেয়ারম্যানকে দলিয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরা হলেন শ্যামকুড় ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, ভোজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, রোহিতা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবু আনসার সরদার, খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গাজী মোহাম্মদ আলী, খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা এসএম আবদুল হক ও চালুয়াহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হামিদ সরদার । এ দিকে মনোনয়ন প্রাপ্তিদের মধ্যে অধিকাংশরাই বিতর্কিত ও অগ্রহনযোগ্য। এমন অভিযোগ তুলে ওই ছয় ইউপিসহ মোট ১০ ইউপিতে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে চালুয়াহাটি ইউপিতে নৌকার প্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল ইসলামকে রাজাকার পুত্র আখ্যা দিয়ে তাকে অবাঞ্চিত করে দলিয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চলেছে আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। যদিও নৌকার প্রার্থী আবুল ইসলাম তার পিতা রাজাকার ছিলেননা দাবি করে স্বপক্ষে অনেক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। চালুয়াহাটিতে তার পরও দলিয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হামিদ সরদার কর্মীসমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন। শ্যামকুড় ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান দলিয় মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। নৌকার প্রার্থী আলমগীর হোসেনকে পরিবর্তনের দাবিতে এলাকায় মনির কর্মীসমর্থকরা প্রতিনিয়ত মিছিল, সভা সমাবেশ অব্যাহত রেখেন। এবং সেই সাথে দাবি উঠেছে আলমগীরের অধিকাংশ সমার্থক জামাত, বিএনপি, ও মাডার মামলার আসামি সহ এলাকার সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। নৌকা পাওয়ার পরপর সেটা কিছুটা হলেও তাদের সন্ত্রাসী তান্ডব দেখা দিয়েছে সুন্দরপুর বাজারে এমনটাই অভিযোগ আসছে। মনিরুজ্জামান মনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রচারনা শুরু করেছেন। ভোজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের পরিবর্তে তার সাবেক স্ত্রী আসমাতুন্নাহারকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে আবদুর রাজ্জাক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শরিফুল ইসলাম রিপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পৃথকভাবে সভাসমাবেশ করে চলেছেন। খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি গাজী মোহাম্মদের পরিবর্তে দলের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিলনকে মনোনয়ন দেওয়ায় সেখানেও দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ। ইতিমধ্যে গাজী মোহাম্মদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গনসংযোগে নেমে পড়েরেছন। একই চিত্র চোখে পড়ে রোহিতা ইউনিয়নে। বর্তমান চেয়ারম্যান আবু আনসারকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আবু আনসারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়াও বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে দূর্বাডাঙ্গা, কুলটিয়া, হরিদাসকাটি ও মনোহরপুর ইউনিয়নে। দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ, কুলটিয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র মনোনয়ন পাওয়ায় কৃষকলীগের সভাপতি আদিত্য কুমার সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হরিদাসকাটিতে বর্তমান চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়েকে মনোনয়ন দেওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তেমনি মনোহরনপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মশিয়ুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান বিএম মোস্তফা মহিতুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ইতিমধ্যে এসব প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিতর্কিত ও অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যে ১০ ইউনিয়নে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ১১ জন বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হয়েছেন। তবে বিদ্রোহের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন । তবে দলের সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন হুশিয়ারি উচ্চারন করে জানান, নৌকার বিপক্ষে আওয়ামীলীগ থেকে চুড়ান্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক বহিষ্কার করা হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: