মণিরামপুরে কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীসহ চার জনের নামে আদালতে মামলা

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৮

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৮

ফাইল ফটো।

যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাদ রেখে মৃত স্বামীর ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার অভিযোগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী সহ চার জনকে আসামি করে আদালতে মামলা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায় প্রতিকার চেয়ে ওই ভুক্তভোগী নারী মণিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

ওই নারীর নাম রুমিছা বেগম। তিনি পৌরসভার ৩ নং মনিরামপুর ওয়ার্ডের মৃত শহিদুল ইসলাম মহলদারের দ্বিতীয় স্ত্রী। মামলার আসামিরা হলেন, মনিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কামরুজ্জামান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী, শহিদুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও মেয়ে রূপালী বেগম।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শহিদুল ইসলাম মহলদার দুই স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে তিন বছর আগে মারা যান। এরপর চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুর পৌরসভা থেকে প্যানেল মেয়র-১ কামরুজ্জামান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী স্বাক্ষরিত শহিদুল ইসলামের একটি ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়। সেখানে মৃতের দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাদ রাখা হয়েছে।

বাদীর অভিযোগ, স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই সনদ দেওয়া হয়েছে। বিষয় টি জনমনে আতঙ্ক ও সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

বাদীর ছেলে শাহাজান শাকিল একজন সংবাদ কর্মী, তিনি বলেন, আমি সংবাদ কর্মী এটা জেনেও আমার সাথে কাউন্সিল এমন নেক্কারজন ঘটনা ঘাটলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমনটা ঘটে। তিনি আরও বলেন ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা একাধিকবার কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীর কাছে ওয়ারিশ সনদ আনতে গিয়েছি। তিনি সনদ দেননি। সনদ পেতে দুই বছর আগে আমরা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকে সনদ দেওয়ার জন্য পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসানকে চিঠি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সনদ পাইনি।’

শাহাজান শাকিল বলেন, ‘আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির নামজারির জন্য কয়েক দিন আগে পৌর ভূমি অফিসে আবেদন করা হয়েছে। তখন আমরা জানতে পারি আমরা মা রুমিছা বেগমকে বাদ রেখে পৌরসভা থেকে ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়েছে। সেই সনদে আমার নামটাও পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার নামের আগে মোছাঃ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা টের পেয়ে গত সপ্তাহে আদালতে মামলা করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী বলেন, ‘মামলার বিষয়টি শুনেছি। ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার আগে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি রুমিছা বেগম সাত থেকে আট বছর আগে নিজে তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। তালাকের কপি দেখে ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার প্যানেল মেয়র-১ কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘অফিস সময়ে ফাইল দেখে এই বিষয়ে বলতে পারব।’

এদিকে কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে বাদীর ছেলে শাহাজান শাকিল বলেন, ‘২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নোটারি পাবলিক কার্যালয় যশোরে হাজির হয়ে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বাবাকে তালাক দেন মা। পরবর্তীতে ২০২০ সালে আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য দুজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হলে তাঁরা লিখিতভাবে জানান, তালাক কার্যকর হতে গেলে নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে হতে হবে। অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মার দেওয়া তালাক ইসলামি আইন অনুযায়ী বৈধ হয়নি বলে তাঁরা লিখিত দিয়েছেন।’

শাহাজান শাকিল বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর থেকে মাকে নিয়ে আমি বাবার ভিটায় থাকছি। সব কাগজপত্র উপস্থাপন করে পৌরসভায় ওয়ারিশ সনদ চেয়েছিলাম। তাঁরা দেয়নি। পরে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকে ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার জন্য পৌরসভার মেয়রকে বলা হয়েছিল। সে আদেশও মানা হয়নি। এরপর মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ হয়ে গোপনে আমার মাকে বাদ রেখে জালিয়াতি করে ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে মরিয়ম বেগমকে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার বিষয়ে রুমিছা বেগমের আইনজীবী বনি আমিন বলেন, সমস্ত কাগজপত্র দেখে, গত সপ্তাহের ৩ অক্টোবর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: