আগে মানুষ তারপর ধর্ম- আশরাফ হায়দার

সাহিত্য ডেস্ক।। | প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২২ ১৭:৩২

সাহিত্য ডেস্ক।।
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২২ ১৭:৩২

আশরাফ হায়দার

 

ধর্ম শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস করা। ভাল কাজ করাই হলো ধর্মের কাজ। পৃথিবীতে ৪৩০০ টি ধর্ম আছে। আগে মানুষ তারপর ধর্ম। মানুষের কল্যাণের জন্যই হলো ধর্মের আবির্ভাব। যে যে ধর্মের বিশ্বাসী তার কাছে তার ধর্ম শ্রেষ্ঠ। আমি মুসলিম আমার কাছে আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ। যে হিন্দু তার কাছে সনাতন ধর্ম শ্রেষ্ঠ,যে খ্রীষ্টান তার কাছে তার খ্রীষ্টান ধর্ম শ্রেষ্ঠ,যে বৌদ্ধ তার কাছে তার বৌদ্ধ ধর্ম শ্রেষ্ঠ। সকল ধর্মের বাণী সাম্য ও শান্তি। সকল ধর্মে মানুষের কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। হিংসা বিদ্বেষকে ঘৃণা করা হয়েছে। মায়ের জাতকে সম্মান করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম হলো শান্তির ধর্ম। আর ইসলাম ধর্মে আমি জন্মগ্রহণ করে গর্বিত। আমার রাসুল আমার পারের কান্ডারী। হিন্দুদের কৃষ্ণ মহাদেব দূর্গা কালী তাদের পারের কান্ডারী। খ্রীষ্টানদের পারের কান্ডারী ঈসা (আঃ) অর্থাৎ যীশু, বৌদ্ধদের পারের কান্ডারী হলো গৌতম বুদ্ধ।

আমার ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআন ও মহানবীকে নিয়ে যদি কেউ কটুক্তি করে বা অসম্মান করে তাহলে আমার শরীরে প্রতিবাদের আগুন জ্বলবেই । তেমনই হিন্দুদের কৃষ্ণ মহাদেব দূর্গা কালীকে নিয়ে কটুক্তি বা অসম্মান করলে ওদের ও শরীরে প্রতিবাদের আগুন জ্বলবে। খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধদের ধর্ম নিয়ে কটুক্তি বা অসম্মান করলে ওদের ও শরীরে প্রতিবাদের আগুন জ্বলবে এটাই স্বাভাবিক।

নুপুর শর্মা মহানবী (সাঃ) নিয়ে কটুক্তি করাতে পৃথিবীর সকল মুসলমানরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। আমিও প্রতিবাদ করছি। আমি ও নুপুর শর্মার কঠিন শাস্তি চাই।
কিন্তু আলেম ওলামারা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কথায় কথায় কৃষ্ণ মহাদেব দূর্গা কালীকে নিয়ে কটুক্তি করে অসম্মান জনক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। প্রতিমা ভাংচুর করে থাকে । কাফের নাস্তিক বলে গালিগালাজ করে থাকে তখন হিন্দু ,বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের আত্মসম্মানে লাগে। তাদের শরীরে ও প্রতিবাদের আগুন জ্বলে।
তাহলে কেনো অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাফের নাস্তিক বলে গালিগালাজ করা হয়? আল্লাহর রাসুল তো বলেছেন কেউ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। তাহলে কেনো আল্লাহর রাসুলের কথা অমান্য করে কাফের নাস্তিক বলে গালিগালাজ করি ?

ধর্মের নামে বজ্জাতি আর অধর্ম করতে বলা হয়নি। ধর্মের নামে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা করতে বলা হয়নি। ধর্মের নামে দেশের সম্পদ নষ্ট করতে বলা হয়নি,ধর্মের নামে মারামারি, ভাঙচুর খুন খারাবি করতে বলা হয়নি।
তাহলে ধর্মের দোহাই দিয়ে কেনো ধর্মের নামে অধর্ম আর বজ্জাতি করা হচ্ছে?

সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করুন। মানুষকে ভালবাসুন। "আল্লাহ তাআলা বলেছেন,যে আমার সৃষ্টিকূলকে যে ভালবাসে আমি তাকে ভালবাসি " তাই মানুষকে ভালবাসুন। মানুষকে ভালবাসার মাঝে আছে এক বিরল আনন্দ।

মসজিদ, মন্দির,গীর্জা,আর প্যাগোডায় যাওয়ার আগে নিজের ময়লা মনটাকে পরিষ্কার করে যান। আল্লাহ বলেন, ভগবান বলেন, ঈশ্বর বলেন আর প্রভু বলেন তিনি সর্বদা জাগ্রত সকল অন্তরে। তিনি সবকিছু জানে ওয়ালা । তিনি সর্ব শক্তিমান মহাজ্ঞানী,অন্তর যামী।

ধর্মনিরপেক্ষতায় অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সকল ধর্মকে সম্মান করা অবশ্যই কর্তব্য। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কখনো উচিৎ নয়। মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্মান করবে তখন অন্য ধর্মাবলম্বীরা মুসলিমদের সম্মান করবে এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ। এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। এরপর আমাদের ধর্ম। এরপর আমাদের মসজিদ, মন্দির,গির্জা,প্যাগোডা। আসুন আমরা মানুষ হই, মানুষকে ভালবাসি।

লেখক: কবি, গীতিকার ও নাট্যকার
ঢাকা
Email [email protected]
১৫ জুন ২০২২,১ আষাঢ় ১৪২৯




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: