আজ ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান প্রণয়ন দিবস

আশরাফ হায়দার।। | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২ ০২:৪১

আশরাফ হায়দার।।
প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২ ০২:৪১

ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে সংবিধান প্রণয়ন দিবসে গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে আত্মার শান্তি কামনা করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম,শহিদ তাজউদ্দিন আহমেদ,শহিদ ক্যাপটেন মুনসুর আলী, শহিদ কামরুজ্জামান, সংবিধান প্রণয়নকারিদের ও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের।

দেশ চালাতে হলে চাই দেশের নীতিমালা অর্থাৎ সংবিধান। সেই সংবিধান লিখিত হোক আর অলিখিত হোক রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেট বৃটেনের সংবিধান অলিখিত।
তাই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে শুরু করেন সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়ন আর সংবিধান রচনার কাজ। কারণ তিনি জানতেন সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এই সংবিধানের ৪ টি মূলনীতি হলো ১.বাঙালি জাতীয়তাবাদ ২.সমাজতন্ত্র ৩.গনতন্ত্র ৪.ধর্মনিরপেক্ষতা ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করেন। তাই ৪ নভেম্বর বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংবিধান প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তীতে ৪ নভেম্বরকে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস ও সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ৪ নভেম্বর বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক দিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে এদিনে গৃহীত হয়েছিল বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল, বহুল আকাঙ্তি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনের পূর্ব-পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মোট ৩১০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীগণকে নির্বাচিত করে। কিন্তু তদানীন্তন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ না করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে"।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্র্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার প্রণয়ন করা হয়। তারপর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রী করে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে।

শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন এবং ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রোভিসনাল কনসস্টিটিউশান অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২ জারি করেন, যা দ্বিতীয় সংবিধান নামে খ্যাত।

একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ কনষ্টিটুয়েন্ট অ্যসেমব্লী অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২ জারি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, উক্ত আদেশের অধীন ১৯৭০ সালের পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। গণপরিষদকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ।

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের ১ম অধিবেশনে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করা হয়। ৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য প্রদানকালে জাতির পিতা বলেন, “জনাব স্পিকার সাহেব, আজই প্রথম সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাদের শাসনতন্ত্র পেতে যাচ্ছে। বাংলার ইতিহাসে বোধ হয় এই প্রথম যে, বাঙালিরা তাদের নিজেদের শাসনতন্ত্র দিচ্ছেন।

বোধ হয় না, সত্যিই এটা প্রথম যে, বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের মারফতে এসে তাঁদের দেশের জন্য শাসনতন্ত্র দিচ্ছেন”। তিনি আরো বলেন, “এই শাসনতন্ত্রের জন্য কত সংগ্রাম হয়েছে এই দেশে। আজকে, আমার দল যে ওয়াদা করেছিল, তার এক অংশ পালিত হল। এটা জনতার শাসনতন্ত্র। যে কোন ভাল জিনিস না দেখলে, না গ্রহণ করলে, না ব্যবহার করলে হয় না, তার ফল বোঝা যায় না। ভবিষ্যৎ বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে আমার জীবন সার্থক হবে, শহিদের রক্তদান সার্থক হবে”। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।

এই পবিত্র সংবিধান হলো শহিদের রক্তে লেখা সংবিধান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধান অপবিত্র করে ছিল খন্দকার মোশতাক,মেজর জিয়া ও স্বৈরাচারী সরকার এরশাদ।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: