মনিরামপুর মুখ থুবড়ে পড়েছে ভবদহপাড়ের ফার্মার্স ভিলেজ মার্কেটটি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:২৮

ছবি সমসাময়িক
  মনিরামপুর(যশোর)।। বিদেশী সংস্থার অর্থায়নে যশোরের মনিরামপুরে ভবদহপাড়ে নির্মিত অত্যাধুনিক ”ফার্মার্স ভিলেজ সুপার মার্কেট”টি চালু হবার মাত্র এক বছর যেতে না যেতেই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । এলাকার আড়াইহাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত মাছ, সবজি ও দুধ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে আসছিল। কিন্তু একেতো মহামারি করোনার প্রাদূর্ভাব তার ওপর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন শর্তারোপের কারনে ইতিমধ্যে পাইকাররা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে ক্রেতার অভাবে বিশেষ করে প্রান্তিক মাছ চাষীরা দুর দুরান্তের মার্কেটে যেতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন। তবে স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র দুধের মার্কেটটি চলমান রয়েছে। জানাযায়, সলিডারিডেড নেটওয়ার্ক এশিয়ার(নেদারল্যান্ড) অর্থায়নে এবং জাগরনী চক্রের তত্তাবধানে মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি বাজারের পাশে এক একর ৫৪ শতক জমির উপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় অত্যাধুনিক ’ফার্মার্স ভিলেজ সুপার মার্কেট’টি। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক শুরু হয় মার্কেকটির কার্যক্রম।এই মার্কেটে প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রের ব্যবস্থা রয়েছে।মার্কেটের আওতায় রয়েছে এলাকার আড়াই হাজার কৃষক। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে মাছ, সবজি এবং দুধ ন্যায্যমুল্যে বিক্রি করে আসছিলেন পাইকারদের কাছে।এখানে মাছের আড়ৎ রয়েছে ১২টি, সবজির আড়ৎ ৮টি এবং ৫ হাজার লিটার দুধের ২টি চিলার রয়েছে। এছাড়া মাছ একুয়া প্রসেসিং জোন, হর্টি প্রসেসিং রুম যার তাপমাত্রা -১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চাষীদের উৎপাদিত মাছ ও সবজির সঠিক পরিমাপ করতে রয়েছে ডিজিটাল চার্টার মেশিন। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে ৩শ কিলো ওয়ার্টের নিজস্ব সাব স্টেশন। রয়েছে ১২শ ফিটের ২টি ডিপটিউবয়েল, ৮০ ফিটের একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট টাওয়ার। এখানে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার(এজেন্ট ব্যাকিং) একটি বুথ। প্রাচীরবেষ্টিত এ মার্কেটের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোতায়েন রয়েছে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রহরী। এতসব সুবিধা থাকার পরও মাত্র এক বছরের মাথায় বিলাসবহুল এ মার্কেটটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে মাছের সবকটি আড়ৎ(১২ টি) বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পাইকারদের অভাবে প্রান্তিক মাছ চাষীরা এ মার্কেটে মাছ বিক্রি করতে পারছেননা। তবে পাইকাররা এ ব্যাপারে তাদের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। মেসার্স রাখি ফিসের মালিক অন্ত মল্লিক জানান, একেতো করোনার প্রাদূর্ভাব। তার ওপর ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র, ঘরভাড়া, লভ্যাংশের উচ্চহারে কমিশন আদায়সহ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন শর্তারোপের কারনে এ মার্কেটটিতে ব্যবসা করা সম্ভব হয়নি। ফলে আড়ৎ বন্ধ করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। একই অভিযোগে বিসমিল্লাহ ফিস, ভাই ভাই ফিস, জামান ফিসসহ সকল আড়ৎদার ব্যবসা বন্ধ করে দেন। নেহালপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজমুছ সাদত জানান, ভবদহ এলাকায় ছোটবড় মিলে মোট প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মাছের ঘের রয়েছে। চেয়ারম্যানের দাবি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন শর্তারোপের কারনে পাইকাররা ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে এলাকার সাধারন চাষিরা তাদের উৎপাদিক সামগ্রি বিক্রি করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন। বালিধা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, ঘেরের মাছ নিয়ে এ মার্কেটে তিনি স্বল্প সময় এবং স্বল্প খরচে বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু পাইকারদের অভাবে এখন আর বিক্রি করা হয়না। ফলে তাদের এখন বিক্রি করতে হয় দুর দুরান্তের মার্কেটসমুহে। অন্যদিকে ফার্মার্স ভিলেজ মার্কেটের কর্মকর্তা এবং জাগরনী চক্রের প্রোগ্রামার ড. আবুল ফজল, ফাইনান্স এন্ড এডমিন অফিসার মেহেদী হাসান জানান, মূলত: যাতায়াতের সড়কটি(বেহালদশা) অত্যন্ত খারাপ হওয়া এবং ডিজিটাল ওয়েট মেশিন থাকার কারনেই পাইকাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে ভবদহ এলাকায় সবজি চাষ স্বল্প পরিমানে হওয়ায় এখানে সবজি কেনাবেচা হয়না। তবে প্রতিদিন এখানে চাষীরা এক হাজার লিটার দুধ বিক্রি করে থাকেন। অপর প্রোগ্রাম অফিসার শাহিদুল ইসলাম জানান, করোনার কারনে কয়েকমাস যাবত মাছের আড়ৎসমুহ বন্ধ রয়েছে। অচিরেই আবারও মাছের আড়ৎসমুহ চালু করার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামি মাসেই আবারও এ মার্কেটটি চালু হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: