![ছবি- খুন হওয়া জসীম উদ্দীন](https://www.dailyshomosamayik.com/images/inbound1379519966603911639.jpg)
পরকীয়া সম্পর্কের কারণে যশোর শহরের বকচরে সোমবার (২৬ জুন) রাতে জসিম উদ্দিন খুন হয়েছেন বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে নারীর সাথে তার সম্পর্ক তার স্বামীর নেতৃত্বেই তাকে খুন করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর গত সোমবার রাতে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ায় প্রধান অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু বাড়িতে তালা দেওয়া থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, মণিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মোড়লের বড় ছেলে জসিম উদ্দিন গত সোমবার রাতে যশোর শহরের বকচরে খুন হওয়ার পর তারা খুনিদের শনাক্ত ও আটকের জন্য অভিযানে নামেন। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, এক নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে খুন হয়েছেন জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, মণিরামপুর উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের আনোয়ারা নামে এক নারীর যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার হাবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। এক কন্যা সন্তানের জননী ওই নারীর সাথে জসিম উদ্দিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় জসিম উদ্দিন খাবার, চালসহ নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী এবং পোশাক কিনে দিতেন। মাঝে মধ্যে বারান্দী মোল্লাপাড়ায় আনোয়ারার বাড়িতে এসে রাতযাপনও করতেন তিনি। তার স্বামী যখন যশোরের বাইরে থাকতেন তখন তার বাড়িতে যেতেন জসিম উদ্দিন। বিষয়টি এক সময় জেনে যান হাবিবুর রহমান। তিনি স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত সোমবার জসিম উদ্দিন এবং তার বন্ধু মণিরামপুর পৌর শহরের দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন একটি মোটরসাইকেলে করে যশোরে আসেন ঈদে আনোয়ারাকে পোশাক কিনে দিতে।
কেনাকাটা শেষে রাত ৮ টার দিকে জসিম উদ্দিন ও তার বন্ধু রিপন মোটরসাইকেলে করে মণিরামপুরে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একটি হাঙ্ক মোটরসাইকেলে তাদের পিছু নেন আনোয়ারার স্বামী হাবিবুর রহমানসহ ৩ জন । পথে বকচরে বিআরবি কেবল কোম্পানির কেনা জমির সামনে পৌঁছালে জসিম উদ্দিনদের মোটরসাইকেলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাদের গতিরোধ করেন হাবিবুর রহমানসহ তার সঙ্গীরা। জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলেন। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই হাবিবুর রহমানদের একজন মোটরসাইকেলে বসা অবস্থায় জসিমের তার ডান নিতম্বে ছুরিকাঘাত করেন। ওই সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান তিনি। ভয়ে তাকে ফেলে মোটরসাইকেল নিয়ে মুড়লিতে চলে যান জসিম উদ্দিনের বন্ধু রিপন। মুড়লিতে যাওয়ার পর তিনি পরিচিত বিভিন্ন জনকে মোবাইল ফোন করেন। এরপর লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন এবং জসিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এ সময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার পর বারান্দী মোল্লাপাড়ায় আনোয়ারার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিলো। কিন্তু বাড়িতে তালা দেওয়া থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জসিম উদ্দিন খুন হওয়ার পর হাবিবুর রহমান বাড়িতে এসে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি জানান, তারা আরও জানতে পেরেছেন, আমেরিকা প্রবাসী পরিচিত এক যুবতীর সাথে জসিম উদ্দিনের বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসছিলেন আনোয়ারা। জসিম উদ্দিনকে আনোয়ারা বলেছিলেন, ২৪ জুন ওই যুবতী আমেরিকা থেকে ফিরলেই তার সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে দিবেন। তবে ২৪ জুন সেই যুবতী আমেরিকা থেকে ফিরে এসেছেন কি-না তা জানা যায়নি। তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান ও আনোয়ারাকে আটক করা গেলে জসিম উদ্দিনকে হত্যার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে বলে তারা মনে করছেন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, জসিম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল কুদ্দুস মোড়ল অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। তিনি আরও বলেন, হত্যার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে যশোর শহরের বকচরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন জসিম উদ্দিন নামে ওই যুবক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জসীমউদ্দীনের সাথে থাকা রিপনকে আটক করা হয়, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে রিপনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
![](/img/ads2.jpg)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: