মণিরামপুর ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক র‌্যাবের হাতে আটক

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২ ১৬:৪২

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২ ১৬:৪২

প্রতাপকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ কুমার

মণিরামপুর (যশোর) থেকে॥ যশোরের মণিরামপুরে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাইনকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে শিক্ষককে বরখাস্তের প্রতিবাদে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গতকাল শনিবার সকালে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্কুলের জানালা-দরজা ভাঙচুর করে। অভিযোগ রয়েছে, বরখাস্তকৃত শিক্ষক প্রদীপ কুমার নিজেকে রক্ষা করতে তাদেরকে উস্কে দিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন। খবর পেয়ে সকাল ১১ টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা স্কুল থেকে শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাইনকে আটক করেন। তিনি মনিরামপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের সন্তোষ কুমার পাইনের ছেলে।

ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বারসহ এলাকাবাসী জানান, সহকারি শিক্ষক (গণিত) প্রদীপ কুমার পাইন বেশ কয়েক বছর যাবত ঢাকুরিয়া বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন দি-সাগর কোচিং সেন্টার। এই কোচিং সেন্টারের পরিচালক তিনি নিজেই। কোচিং সেন্টারে তিনিসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।
অভিযোগ রয়েছে, গত ২০ এপ্রিল বিকেলে কোচিং সেন্টারে ক্লাশ শেষে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শিক্ষক প্রদীপ কুমার যৌন হয়রানি করেন। পরে ছাত্রটি বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার মাকে জানায়। এ ব্যাপারে ছাত্রীর পিতা অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ কুমারের বিরুদ্ধে ঢাকুরিয়া-প্রতাপকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার জানান, এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে প্রদীপ কুমারকে শোকজ করে বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সহকারি প্রধান শিক্ষক রমজান আলীর নেতৃত্বে টিমের অন্য সদস্যরা তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাবলু সিংহ জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর গত বৃহস্পতিবার সহকারি শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাইনকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিমূলক হিসেবে শনিবার সকাল ১০টায় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষক প্রদীপ কুমারের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে তারা স্কুলের দ্বিতীয়তলায় পরীক্ষা কেন্দ্রের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। অভিযোগ রয়েছে, নিজেকে রক্ষা করতে শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাইন উপস্থিত থেকে প্রাইভেট পড়ানো শতাধিক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উষ্কে দিয়ে ভাঙচুরের এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এদিকে ভাঙচুরের পর গতকালের (শনিবার) প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা স্থগিতের কথা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার জানান, খবর পেয়ে সকাল ১১টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা স্কুল থেকে শিক্ষক প্রদীপ কুমারকে আটক করেন। র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাইনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকুরিয়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ইতিপূর্বে শিক্ষক প্রদীপ কুমার কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সর্বনাশ করেছেন। কিন্তু এলাকায় আধিপত্য খাটিয়ে তিনি নিজেকে রক্ষা করেন।
মনিরামপুর থানা পুলিশের ওসি নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় শিক্ষক প্রদীপের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর পিতা বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: