ছাত্র রাজনীতির সেকাল-একাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারী ২০২২ ১৪:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারী ২০২২ ১৪:২২

ছবি সমসাময়িক

মোঃ শা হ্ জা লা ল।।

বাংলাদেশর ছাত্র এবং ‘ছাত্র রাজনীতি’ বহুমাত্রিক ও বহুল ব্যবহৃত একটি ধারণা। দিনের পর দিন এ বিষয়ে সচেতন মহলে মিশ্র মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ইতিবাচক ধারণা হওয়া বা থাকাটাই স্বাভাবিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘শুধু রাজনীতি করে নেতা হয়ে ছাত্রজীবনেই যদি বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্সের মালিক হওয়া যায়, তাহলে ছাত্ররা কেন কষ্ট করে পড়ালেখা করবে?’ জাতীয় ক্ষেত্রে প্রয়োজনের সময় ছাত্রসমাজই থাকে যে কোনো আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের অগ্রযোদ্ধা। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্যই সত্য এবং এক্ষেত্রে একটা বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজ নিজ আদর্শভিত্তিক ছাত্র সংগঠন থাকে। কিন্তুু সেগুলোর দায়িত্ব অন্ধ অনুকরণ নয়। অনেক সময় জাতীয় প্রয়োজনে তারা প্রেসার গ্র“পের ভূমিকা পালন করে।
ভারত ছাড় আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জন-আন্দোলন পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির কর্মকান্ড ছিল ঐতিহ্যমন্ডিত, গর্ব করার মতো। যারা বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্ররাজনীতির মোটামুটি খবর রাখেন, তারা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। দিন যতই যাচ্ছে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি জটিল-কুটিল ও নোংরা হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্যের মূলধারা থেকে ক্রমাগত দূর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীর অধঃপতন আমাদের ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই প্রশ্ন। ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত ছাত্রদের স্বার্থ-অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে আমরা জানতে পারি, এক সময় যারা সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন তাদেরকেই সামনে পাঠানো হতো। অর্থ্যাৎ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাবত, ক্লাসের বা হলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র যদি আমাদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে, তবে তারা তথ্য, যুক্তি বাগ্মিতা দিয়ে আমাদের চাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে ভালো দর কষাকষি করতে পারবে এবং বেষ্ট আউটপুটটি আমরা পাব। তাছাড়া ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রেও তাদের পার্সোনালিটি বড় ভূমিকা রাখবে। তখন সবাই তাদের সম্মান করত, শ্রদ্ধার চোখে দেখত।
আমাদের শিক্ষাঙ্গণগুলোর হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক, আবাসিক হল, প্রয়োজনীয় বই-জার্নাল, যন্ত্রপাতি, চেয়ার-টেবিল, ফ্যানসহ অন্যান্য সহায়ক উপাদানের তীব্র অভাব, সেশনজট, সময়মতো ক্লাস পরীক্ষা-ফলাফল না হওয়া, বাস্তবতাবিবর্জিত শিক্ষা যা ভবিষ্যতে তদের পঙ্গু (বেকার) করে ফেলে ইত্যাদির মতো প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে এরা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও নেতার কাজকর্ম ন্যূনতমভাবেও ছাত্র বিষয়ক নয়। কিন্তু সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদরা এসব নেতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। অর্থ, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য এমনকি নারীও বেছে নেয় হাতিয়ার হিসেবে। ছাত্রনেতাদের চরিত্রের অধঃপতন ঘটতে থাকে দ্রুতগতিতে। ধীরে ধীরে মেধাবীরা নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে রাজনীতি থেকে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে তারা মনোযোগী হয়ে ওঠে। আর এই সুযোগ অছাত্র, মাস্তান, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্তরা ওই জায়গাগুলো দখল করতে শুরু করে।
বর্তমানে এরা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত। তারা যেন মূল দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ফিল্ড ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করছে। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য, মর্যাদা, অধিকার, প্রাপ্য-সুযোগ সুবিধা বিবিধ বিষয়ে তারা একেবারেই উদাসীন। বরং নেতারা একবার উচ্চ মহলে লবিং করতে পারলে জীবনে আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার বাকি থাকবে না-এ স্বপ্নে বিভোর হয়ে ক্রীড়নকের মতো কাজ করে যাচ্ছে। অর্থ, ক্ষমতা, অস্ত্র, গাড়ি, বাড়ী, নারী, পটুকার অনুগত বাহিনী ইত্যাদি লাভের স্বপ্নে তারা যে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নে তৎপর। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন ও মূল্যবান সময় নষ্ট হলেও তাদের কিছু আসে যায় না। আইয়ূবীয় প্রচারযন্ত্র এবং তার রাজনৈতিক চ্যালাচামুন্ডারা ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল। আইয়ূবের সামরিক জান্তা শুরুতেই সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল এবং রাজনীতিকদের ওপর এবডো আরোপ করেছিল। কোনো রাজনীতিক এমনকি ব্যক্তিগত কথাবার্তার মধ্যেও রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা করতে পারবে না। আভাসে-ইঙ্গিতেও সামরিক আইনের প্রতি কোনো প্রকার কটাক্ষ করা যাবে না, করলে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসঙ্গে বেত্রদন্ড এমন সামরিক বিধিও ছিল। সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানে এক তুখোড় ছাত্রনেতার আবির্ভাব ঘটেছিল। বাম প্রগতিশীল ধারার অনুসারী সেই ছাত্রনেতাটির নাম ছিল তারিক আলী। তারিক আলী কোনো এক বক্তৃতায় ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে সামরিক জান্তার মনোভাব নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এদের মাথা এমনই নিরেট যে, মাথাব্যথা হলো এরা মাথাটাই কেটে ফেলতে চায়।’ সে সময় আর একজন অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন কিন্তু আইয়ূবের কোনো উপায় ছিল না তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিটি হচ্ছেন বিচারপতি কায়ানী। তিনি তাঁর লিখিত বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘সেই সামরিক সরকারের একমাত্র সাফল্য হচ্ছে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া।’ আইয়ূরের প্রবর্তিত দর্শন মৌলিক গণতন্ত্রকে বিচারপতি কায়ানী এক কথায় নাকচ করে দিয়েছিলেন। এই বলে যে, ওটা মৌলিকও নয়, গণতন্ত্রও নয়। সে সময় বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরবর্তীকালের মতো এতখানি নতজানু ছিল না। যাই হোক আইয়ূব যত শক্তিধরই হোক না কেন বিনা বাধায় কেল্লা ফতে করতে তিনি যে পারেননি এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
সে সময় প্রধান রাজনৈতিক ভূমিকাটি কিন্তু পালন করেছিল ছাত্রসমাজই। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংস্রব অবশ্যই ছিল কিন্তুু রাজনৈতিক কার্যক্রমের বেলায় কোনো দলের মুখাপেক্ষী তারা ছিল না। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন রচনা এবং একে বেগবান করার পুরো কাজটিই করেছে ছাত্ররা। যদি সত্য অন্বেষণ করা হয় তাহলে জানা যাবে কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা সে সময় ছাত্রদের রাশ টেনে ধরার কথা ভেবেছিলেন এই কারণে যে, এর ফলে যদি সামরিক জান্তা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে যা গণতান্ত্রিক আন্দোলন নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকের এই মতও ছিল যে, আইয়ূব একজন বেনাভোলেন্ট ডিক্টেটর এবং তার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তুু শেষ পর্যন্ত ছাত্রসমাজ সামরিক আইনবিরোধী আন্দোলন করল এবং তার ফলেই আইয়ূবের মুখোশ উম্মোচিত হলো প্রথমবারের মতো। শুধু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বা কেন-১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী পুরো কৃতিত্বই তো ছিল ছাত্রসমাজের। যারা এই ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তাদের অনেকেই ছিলেন সে সময় কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। কমিউনিষ্ট পার্টির নির্দেশ ছিল যেন ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গা হয়; কিন্তুু সে নির্দেশ তারা মানেননি। মানেননি বলেই তো আজকে একুশে ফেব্র“য়ারী ইতিহাস সৃষ্টি হল। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারী ১১ দফা কর্মসূচি ভিত্তিক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং এই ১১ দফা কর্মসূচিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ছাত্রনেতাদের যে কি পরিমাণ ছোটাছুটি করতে হয়েছিল সেটা বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেরই জানান। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণবিস্ফোরণে রূপান্তরিত হয় এবং সেটাই ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সেল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে ১ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার পর প্রথম বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল ছাত্রসমাজ। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বপ্রকার প্রস্তুুত গ্রহণ করেছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ৭ মার্চ রেসকোর্সে শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা তো এ দেশের ছাত্রসমাজের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিণতি। একসময় ‘ছাত্র’ ধারণাটি ছিল স্নেহমিশ্রিত এবং ধরে নেয়া হতো প্রতিটি ছাত্রের ব্যক্তিত্ব হলো শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন। তাই তাদের প্রতি দেশবাসীর ছিল অপরিসীম ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাশীল মনোভাব। ফলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় সব সফল আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল এই ছাত্রসমাজ ও তাদের যোগ্য নেতৃবৃন্দ। কিন্তু আজ? একজন ছাত্রকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয় অথচ তা জাতিকে ‘নাড়া’ দেয় না। কেন এমন হচ্ছে? এর অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলে দেশের সচেতন মহল মনে করেন। আজকের ছাত্রনেতারা আর আদর্শের প্রতীক নন। প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য নেতা এখন মাইক্রোসকোপ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফাও খাওয়া, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, টেন্ডারবাজি, লবিং যারা করতে পারে, উচ্চমহলের নির্দেশে ভাঙচুর, জ্বালাও- পোড়াও, খুন যারা করতে পারে, অযৌক্তিক হলেও বুদ্ধিদাতাদের পরামর্শে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তারাই আজ নেতা হওয়ার জন্য যথেষ্ট ‘যোগ্য’ বলে বিবেচিত। অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে হুজুগে বা তারুণ্যের উম্মাদনায় এই নেতাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। ফলে প্রোপাগান্ডা দিয়ে বিশাল স্যাবোটাজ প্ল্যান বাস্তবায়ন হয়। কখনো কখনো মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হয় নিরীহ ছাত্র ও তার পরিবার। শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক পরিবেশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা তাদের একাডেমিক পরিচয় হারাতে বসেছেন। সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম ছাত্রছাত্রীদের অন্যায়ভাবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে। এটা জাতির জন্য একটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ। প্রায়ই শিবির-ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছাত্র নেতা-কর্মী আহত হন, দেশের সংবাদপত্রে তাদের নাম প্রকাশিত হয়। কিন্তু কোনো সংবাদপত্রেই এসব ছাত্র নেতাকর্মীদের তাদের একাডেমিক পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে দেয়না। বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে। যেমন শিবিরের কে কে আহত হয়েছেন, ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের কে কে আহত হয়েছে এবং তারা কে কোন পদে অধিষ্ঠিত ইত্যাদি। আজকের শিক্ষার্থীরা হুজুগে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধনে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করতে একটুও কুণ্ঠিত হয় না। তাদের মধ্যে চিন্তাশীলতার মাত্রা কমে যাচ্ছে। দেশপ্রেম, জাতীয় উন্নয়ন ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোর চেয়ে তারা ব্যক্তিগত উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হচ্ছে। আর মানুষ যখন স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, তখন অন্যদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহানুভূতি যে কমে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। আর আমাদের ছাত্রসমাজের ক্ষেত্রে, ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের এ প্রবণতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে-কারা হয় ‘ছাত্রনেতা’? তারা কি নেতা হয়েই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে নাকি নেতা হওয়ার লক্ষ্যেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ভর্তিযুদ্ধি জয়ী হয়ে ‘ছাত্র’ হিসেবে ভর্তি হয়? তাহলে একজন সাধারণ ছাত্র কখন অসাধারণ ‘ছাত্রনেতা’ হয়ে ওঠে? কেন হতে উদ্বুদ্ধ হয়? কোন মাধ্যমে হয়? কখন তার স্বপ্ন হারিয়ে যায় অন্ধকার পথে? পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখার আগেই যে বাবা-মা একটি শিশুকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে শুরু করে, অপত্য স্নেহ-ভালোবাসা-দরদ দিয়ে গড়ে তোলা, শহরের সবচেয়ে ভালো স্কুলে-কলেজে পড়ানোর পর যখন ছেলেটি একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, তখন থেকে মা-বাবার দুই চোখে স্বপ্নেরা জাল বুনতে শুরু করে। যত দিন যায়, প্রত্যাশার স্কেল বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে। কিন্তু সন্তানটি? বিশাল ক্যাম্পাসে এসে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলো। হলে, ক্যাম্পাসে দাপট, ভিসি-প্রোভিসি-প্রক্টরদের সঙ্গে দহরম-মহরম ভাব, বড় নেতাদের সান্নিধ্য, অঢেল টাকা-পয়সা, ইচ্ছে হলেই ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া, অপর গ্র“পের নেতাকর্মীদের চড় থাপ্পড় মারা ইত্যাদি দেখে নিজের অজান্তেই সুপ্ত আকাঙ্খা জাগে একজন ‘নেতা’ হওয়ার। আর তা হতে গিয়ে কখন যে পড়াশুনা ভুলে, বাবা-মার স্বপ্নের কথা বিস্মৃত হয়ে, নিজের ক্যরিয়ার ভাবনাকে দুই পায়ে ঠেলে নেতাদের পিছু ঘুরতে শুরু করে নিজেই জানে না। বসদের সঙ্গী হয়ে ফাও খাওয়া, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, বোমা তৈরি ও নেশা করার ক্রমেবহুপথে চলে যায়। অনেক টাকা, গাঁজা-ফেনসিডিল আর কয়েকজন চামচার সহচর্য ছাড়া আর ভালো লাগে না। পেতে চায় শীর্ষ আসনটি। তখন প্রয়োজনে একই আদর্শের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও অন্য নেতাদের সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতেও কুণ্ঠা বোধ করে না। এ কালের হবু নেতারা পড়াশোনা-জ্ঞানার্জন করতে চায় না, বাগ্মিতা অর্জনে সচেষ্ট হয় না, জনপ্রিয় হওয়ার কোন চেষ্টাই করে না। তারা চায় শুধু রাজনৈতিক ফাদার মাদারের সন্তুষ্ট করার মাধ্যমেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে। আর যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসী হওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকে না। ধ্বংস হয় অপার সম্ভাবনার বীজ বহনকারী এক যুবক, ভবিষ্যৎ সুনাগরিক। তারাই যখন কর্মজীবনে যাবে তখন সততা, যোগ্যতা হবে গুরুত্বহীন। ফলে দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ানশীপের পদক কখনো আমাদের হাতছাড়া হবে বলে মনে হয় না। এ ধারার পরিবর্তন আসা খুব দরকার। নকল করে যে পরীক্ষায় পাস করা যায় না-সে বিষয়টি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত। বিগত কয়েক বছর থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলও ভাল হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, স্কুল পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়মুখী, শ্রেণীকক্ষ মুখী, বইমুখী হয়ে লেখাপড়ার দিকে ঝুঁকেছে। উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রাজনীতি না থাকায় স্কুলগুলো খোলা থাকে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় না। তবে স্কুল পর্যায়ে এখন একটিই মাত্র সমস্যা-সুযোগ্য শিক্ষকের অভাব। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলোতে সুযোগ্য শিক্ষকের অভাব অত্যন্ত প্রকট।
একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়া বা পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশের অধিকার স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব নাগরিকের থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে করা হয় মুক্ত জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র। উচ্চ শিক্ষার এ পর্যায়ে এমনটি হওয়াও বাঞ্ছনীয়। কিন্তুু আমরা ক্রমেই কেমন যেন ধৈর্য্যহীন, অসহনশীল, অদূরদর্শী ও অসামাজিক হয়ে উঠেছি। কারো মত প্রকাশ ও রাজনৈতিক অবস্থানকে যুক্তি দিয়ে মূল্যায়ন না করে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে হুমকি অথবা চিরবিদায় করে দিচ্ছি। রাজনীতিকরণ, পক্ষপাতিত্ব ও ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমরা সবাই পরস্পরের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। কেন্দ্রীয় রাজনীতির আদলে রাজনৈতিক চর্চা এবং অতিমাত্রায় রাজনৈতিক চিন্তা সঞ্চালনের ফলে যে কোনো সমস্যাকেই জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, শিক্ষাঙ্গণের জন্য মঙ্গলজনক নয়-এমন অনেক ইস্যুকে অহেতুক শিক্ষাঙ্গনে টেনে নিয়ে এসে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছি। কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে গোটা শিক্ষক সমাজকে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সুযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সর্বত্রই আজ সুযোগ্য শিক্ষকের প্রকট অভাব। প্রশ্নটি হচ্ছে, কেমন শিক্ষককে আমরা ভালে শিক্ষক বলব। আমরা তেমন শিক্ষককে ভালো শিক্ষক বলতে চাই, যিনি তার মূল কাজ ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করার এবং নিজ ডিসিপ্লিনে অবদানমূলক গবেষণা করার ব্যাপারে অত্যন্ত যতœশীল ও নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী। ভালো শিক্ষক যে শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে পড়াবেন এবং নিজ ডিসিপ্লিনে অবদানমূলক গবেষণা করবেন তাই নয়, সে সঙ্গে তিনি হবেন ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধু, দার্শনিক ও পরিচালক। ভালো শিক্ষককে হতে হবে এমন যে, তাকে যেন ছাত্র-ছাত্রীরা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে অনুসরণ করতে পারে। তার চরিত্রে, ব্যবহারে, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি তার বন্ধু ও অভিভাবকসুলভ আচরণে ছাত্র-ছাত্রীরা যেন তাকে উপকারী একাডেমিক বন্ধু ভাবতে পারেন। সব ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি ভালো শিক্ষকের থাকবে একটি উদার, মঙ্গলময় ও কল্যাণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। এরকম ভূমিকা পালনকারী এবং দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন শিক্ষকদের সংখ্যা কজন। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। তবে লাল, নীল, সাদা, হলুদ, গোলাপী প্রভৃতি বর্ণের আবরণে জাতীয় দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে জড়িত হয়ে এবং ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সম্মানিত শিক্ষক মানুষ গড়ছেন নাকি নেতা তৈরি করছেন, তা ভেবেচিন্তে বলা প্রয়োজন। শিক্ষকরা যে রাজনীতি করছেন তা কিন্তু শুধু শিক্ষকদের রাজনীতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে না, এ রাজনীতি ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতি এবং জাতীয় দলীয় রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেছে।
শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনীতি পৃথক না হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষকের সবচেয়ে বড় অহঙ্কার হলো তার নিরপেক্ষতা, যা সব ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি সমান আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। শিক্ষকদের এ নিরপেক্ষতা আজ বর্ণপ্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দু-একটি বিরল ব্যতিক্রম বাদ দিলে শিক্ষক নেতারা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতাদের প্রতি ইচ্ছা না থাকলেও অবচেতন মনে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, যার প্রভাব পড়ছে ছাত্রের পরীক্ষা গ্রহণে, নম্বর প্রদানে এবং মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সময়। যে শিক্ষক রাজনৈতিক কারণে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, ছাত্রনেতাদের তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও আন্দোলনের কৌশল-পরিকল্পনা রচনায় পরামর্শ দিচ্ছেন, নিজের রাজনৈতিক অর্জনের ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের ব্যবহার করছেন, তিনি যেসব ছাত্রনেতাদের প্রতি কোন কিছুটা দুর্বল হবেন না? শিক্ষক তো আর আসমানের ফেরেশতা বা স্বর্গের দেবতা নন, তিনি রক্ত মাংসের সাধারণ মানুষ। বলা বাহুল্য, এ দুর্বলতা শিক্ষকদের মহান নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছে। শিক্ষাঙ্গণের একাডেমিক পরিবেশ মাটিচাপা দিয়ে এর রাজনৈতিক পরিবেশকে উজ্জ্বল করে তুলছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্প্রতি যেসব সমস্যা রয়েছে তার অনেক সমস্যাই দলীয় রাজনীতি থেকে উৎসারিত। সম্মানিত শিক্ষকদের নিরপেক্ষতা হুমকিযুক্ত হয়েছে এ দলীয় রাজনীতি চর্চার কারণেই। জাতীয় দলীয় রাজনীতির অঙ্গসংগঠন হিসেবে ভূমিকা পালনকারী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপস্থিতি ও কর্মকান্ড, হল দখল, সিট দখল ও কেনাবেচা, বন্দুকযুদ্ধ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া প্রভৃতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বিরাজ করছে চর দখলের পরিবেশ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চর দখলের বিরাজিত রাজনীতি প্রচলিত থাকায় যে দল যেখানে শক্তিশালী তারা প্রতিপক্ষ অন্য দলকে প্রভাব বিস্তার করতে দিতে চাইছে না। প্রতিপক্ষ কম প্রভাবশালী দলগুলোকে শক্তিশালী দলের কাছ থেকে অনেকটা অনুমতি নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে হয়। কাজেই দখলদার শক্তিশালী দল ভোগ করে গণতন্ত্র (!), আর কম প্রভাবশালী দল ভোগ করে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। কম প্রভাবশালীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলে তাদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। সম্প্রতি ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রবণতা সহিংস রূপ নিতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেমন পুলিশের উপস্থিতি ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির মতোই এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তেমনি সহনশীলতার মাত্রা হ্রাস পেলে এবং এক সংগঠন আর এক সংগঠনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার প্রবণতা চর্চিত হতে থাকলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে বোর্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে বলে মনে হয়। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? উপায় একটাই, আর তা হলো বিশ্ববিদালয়ের রাজনীতির চর্চা নিরুৎসাহিত করে এর একাডেমিক চরিত্র ফিরিয়ে দেয়া। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পরিবর্তে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও গবেষণায় তথা একাডেমিক কাজে অধিক মনোযোগী করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের এ অসুস্থ দূর্বৃত্তায়িত দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির অসুখ ২০০৬ সালে ইউজিসির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রণীত ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্রে যথাযথভাবে নির্ণীত হয়েছে এবং এ কৌশলপত্র প্রণেতারা এ রাজনীতি সীমিতকরণে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশ্ন হতে পারে যে, দলীয় রাজনীতির কমালেই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? এর উত্তরে বলা যেতে পারে, হ্যাঁ, দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি বন্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয় তার হারানো একাডেমিক পরিচয় ফিরে পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সমস্যাই সমাধান করা সহজ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়ের দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কাজে অনেকটা সহজ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার জন্য আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। সর্বোপরি আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান অবস্থা বা পরিস্থিতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যেমন এড়িয়ে যেতে পারে না, তেমনি পারে না মন্ত্রণালয়ও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অবশ্যই অধিক। কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নৈরাজ্যের মধ্যে আছে, এর কারণই বা কি, তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। প্রতিকারের দায়িত্বও মূলত তার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: