ইয়াকুব ভাই এর রাজনৈতিক শিক্ষাটা মূলত আমাদের পরিবার থেকে- অলিয়ার রহমান

দৈনিক সমসাময়িক নিউজ ডেস্ক।। | প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৩ ১৩:৩০

দৈনিক সমসাময়িক নিউজ ডেস্ক।।
প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৩ ১৩:৩০

৮৯ যশোর- ৫, মণিরামপুর থেকে নৌকা মার্কার সম্ভব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী এস এম ইয়াকুব আলী।

গতকাল ছিল ৩০ জুন সন্ধা ৭.৪৪ মিনিট, এসময় ৮৯ যশোর- ৫, মণিরামপুর উপজেলা থেকে নৌকা মার্কার সম্ভব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী এস এম ইয়াকুব আলী কে নিয়ে একটা লেখা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। লেখাটা এস এম ইয়াকুব আলীর ভাই দৈনিক সমসাময়িক নিউজ এর প্রকাশক কবি ও সাহিত্যিক অলিয়ার রহমান তাঁর নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। লেখা টা পোস্ট করা মাত্র শত শত লাইক কমেন্ট ও শেয়ার পড়তে থাকে। অনেকেই লেখা পড়ে কমেন্ট করেছেন বর্তমাব যুগে এমন নেতা পাওয়া বিরল ঘটনা বা দুষ্প্রাপ্য । অলিয়ার রহমান তার লেখা তে দাবি করেছেন তার ভাই ইয়াকুব আলী পরীক্ষিত এক নেতা। যিনি তাঁর পরিবারের সকল সদস্য কে সন্তুষ্ট রাখতে পারেন সে নেতা অবশ্যই উপজেলা বাসীকেও সন্তুষ্ট রাখতে পারবেন। কেননা বহু রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারের ভিতর কোন ঐক্য নেই। ফলে রাজনৈতিক শিক্ষাটা আসে পরিবার থেকে।

দৈনিক সমসাময়িক এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে অলিয়ার রহমান এর লেখা টা হুবহু তুলে ধরা হলো:

আমি বেশ কিছুদিন যাবত সেজ ভাইকে(ইয়াকুব আলী) নিয়ে তার জীবনের কিছু কথা লেখার চিন্তা করছিলাম, কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না। এখন ঈদের ছুটি - ভাবলাম সময়টা একটা ভালো কাজে ব্যায় করি। সেই ভাবনা থেকেই আজকের লেখার সুত্রপাত।

আপনারা অনেকেই আমাদের ইয়াকুব ভাইকে একজন দানবীর হিসেবে চেনেন, কিন্তু এর বাইরেও তার অনেক গল্প আছে - যা আপনাদের অনেকেরই অজানা। আসলে গল্পটা অনেক লম্বা, আমি সেই গল্পের খুব সামান্যই আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজ।

ছাত্র জীবনে ইয়াকুব ভাই অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি কতোটা মেধাবী ছিলেন - তার একটা উদাহরণ আপনাদের দিই। তিনি সবসময় বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং ক্লাসে সবসময় প্রথম স্থান অধিকার করতেন। তার ক্লাসমেট - যার সঙ্গে ক্লাসে সবসময় প্রতিযোগিতা হতো - সেই আলিম ভাই বি সি এস পরীক্ষায় সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি এখন জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে ভাবি - ইয়াকুব ভাই লেখাপড়া শেষ করতে পারলে তিনিও হয়তো আলিম ভাইয়ের মত সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে পারতেন। কিন্তু তিনি লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। তিনি যখন লেখাপড়ার মাঝপথে - সেই সময় আমাদের সংসার নামক জাহাজটি ডুবতে বসেছিল। আমাদের দশ ভাইবোনের সংসার (মেজভাই আগেই মারা গিয়েছিলেন)। বিভিন্ন ইস্যুতে গাড়ির ব্যবসায় লস হবার কারণে আমাদের পরিবার তখন দিশেহারা। সেই সময় হাল ধরলেন ইয়াকুব ভাই। লেখাপড়ার মাঝপথেই সেই অল্প বয়সে তিনি চলে গেলেন মরুর দেশ সৌদি আরবে। সেই অল্প বয়সেই ডুবে যাওয়া সংসার নামক একটা জাহাজকে তিনি একাই টেনে তুললেন। তিনি তার জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে আমাদের জীবনকে আলোয় ভরে দিলেন। আমরা বাকি সব ভাইবোন তার টাকায় লেখাপড়া শিখেছি। তার টাকায় বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করে বড় হয়েছি। শুধু তাই নয়, তার সহযোগিতায় আমাদের বহু আত্মীয় স্বজন - এমনকি চেনাজানা বহুলোক বিদেশে গিয়ে সমাজে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন - যেটা আমাদের সমাজে বিরল।

আমাদের সংসারের জন্য তিনি যা করেছেন এবং করছেন - বর্তমান কালে তেমনটা আর খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না । আমরা প্রতিটা ভাইবোন তার অবদানের কথা বিনীত চিত্তে স্মরণ করি। বিদেশে যাবার পর আমরাও তার পাশে থেকেছি সবসময় - কিন্তু সংসারের হালটা বরাবরই তার হাতেই ছিল - যা তিনি আজও ছাড়েননি। ছোট ভাই মেহেদীকে বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া শেখানো, চারবোনসহ আমাদের সকলকে বিয়ে দেওয়া - সবকিছুই তার হাত দিয়েই হয়েছে। আমাদের মেঝ ভগ্নিপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর ইয়াকুব ভাই(আমাদের সহযোগিতায়) তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে সেই সময় চল্লিশ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। সেই ভগ্নিপতি মারা যাবার পর বোন ও তার দুই ছেলের ভবিষ্যতের জন্য শহরে দুইতলা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন (আগে একতলা ছিল)। এমনকি আমাদের মিয়া ভাই মারা যাবার পর মিয়া ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সহ মেয়েদেরকে তিনি সৎপাত্রে পাত্রস্থ করেছেন। আমাদের পুরো সংসারটা এখনো তার শতভাগ নিয়ন্ত্রণে। তার বয়স হয়েছে, ব্যবসা বড় হয়েছে কিন্তু আমাদের তিনি ছেড়ে যাননি। আজও আমাদের যেকোন প্রয়োজনে, যেকোন বিপদে তিনি সীসার মত আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। আজও আমরা কোনকিছু করতে গেলে তার অনুমতি ছাড়া করার সাহস দেখাতে পারিনা। শহরে আমাদের সবার আলাদা আলাদা বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, ব্যবসা আছে - তবুও আমরা আজও অনেকটা একান্নবর্তী পরিবারের মতই বসবাস করি - আর সেটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ইয়াকুব ভায়ের কারণে। আমাদের গ্রামের কোন সম্পত্তি আজও ভাগাভাগি হয়নি। আজও তিনি যে সিদ্ধান্ত দেন - আমরা পরিবারের সবাই সেটা শতভাগ মাথায় নিয়ে চলি। একটা মানুষের কতোটা নেতৃত্বগুণ থাকলে এটা সম্ভব - সেটা কি আপনারা বুঝতে পারছেন?

এবার একটু তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলি। তিনি লাউড়ী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন বিধায় অনেকেই তাকে জামাতপন্থী হিসেবে প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন - যা কোনভাবেই সম্ভব না। আমাদের পুরো পরিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুসারী। আমাদের দাদাজান ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন ইউনিয়ন সভাপতি(তখনকার দিনে একমাত্র সম্ভান্ত্র ব্যক্তিরাই এই পদের জন্য মনোনীত হতেন)। চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইউনিয়ন রিলিফ কমিটির সভাপতি। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার কারণে সেই সময় আমাদের পুরো পরিবারকে নানারকম নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর লুট করা হয়েছে। আমার মা সহ বাড়ির অন্য বউরা আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । যে পরিবারটা আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করলো - তাকেই আজ জামাত-শিবির বলে গালি দেওয়া হয়। আর যারা সেই অপবাদ দেন - আমরা কিন্তু কোনদিন তাদের অতীত নিয়ে কথা বলিনি, কারণ আমরা ভদ্র সমাজের মানুষ। আমরা বিশ্বাস করি - অন্যকে ছোট করে নিজে কোনদিন বড় হওয়া যায় না।

ইয়াকুব ভাই বরাবরই ধর্মভীরু একজন মানুষ। সেই কারণেই মসজিদ মাদ্রাসার সাথে তার একটা যোগসূত্র সবসময় ছিল এবং আছে। কিন্তু তিনি ধর্মান্ধ নন। আর সেই কারনেই অন্য ধর্মের মানুষের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। আসলে সে-ই প্রকৃত মুসলমান - যার কাছে অন্য ধর্মের মানুষ নিরাপদে থাকে। এটাই আমাদের নবীর শিক্ষা আর আল্লাহ পাকের নির্দেশ। অথচ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এতোটাই ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে যে - কেউ ইসলামের পথে থাকলে তাকে জামাত-শিবির বলে গালি দেয়া হচ্ছে, আর অন্য ধর্মের মানুষের পাশে দাঁড়ালে তার ঈমান নিয়ে টানাটানি করা হচ্ছে। জানিনা - এই ব্যাধি থেকে আমাদের উত্তরনের কোন উপায় আছে কিনা। এই ব্যাধি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আমি লেখাটার শেষের দিকে চলে এসেছি। আর সামান্য কথা বলেই লেখাটা শেষ করে দিবো ইনশাআল্লাহ। আমরা( পরিবারের সদস্যরা) প্রথমদিকে ইয়াকুব ভায়ের জাতীয় রাজনীতিতে জড়ানোকে সমর্থন করতে পারিনি। ভেবেছিলাম - কি দরকার বাড়ির ভাত খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো? কি দরকার মানুষের শত্রু হওয়ার? বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি নোংরামিতে ভরে গেছে। সেখানে ভালো মানুষের স্হান নেই - নেই গুণী মানুষের কদর। খামাকা মানসম্মান নষ্ট করে লাভ কি? তারপর গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখলাম - আমাদের জীবনটাই তো শেষ কথা না। আমাদের নতুন প্রজন্মের কি হবে? আমরা কোথায় রেখে যাচ্ছি তাদের? তারা কি এই অন্ধকারে বেঁচে থাকতে পারবে? তাদের জন্য কি কিছুই করার নেই আমাদের? হ্যাঁ, আছে। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আর তার জন্য দরকার সঠিক নেতৃত্ব। একজন সঠিক নেতাই পারেন সমাজকে বদলে দিতে, মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে। আর সেই কারনেই আমরা ইয়াকুব ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবনকে সমর্থন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি - একদিন সারা বাংলাদেশে ইয়াকুব আলীর মত গুণী মানুষের আগমন ঘটবে। আমাদের রেখে যাওয়া প্রজন্ম একদিন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীতে।

সবশেষে বলি - রাজনীতিতে বর্তমানকালে সবাই নিজেকে যোগ্য মনে করেন। কিন্তু আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে - আপনি তাকে যোগ্য মনে করেন কিনা। আপনাকে জানতে হবে - যিনি আজ নেতা দাবি করছেন - তিনি তার নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনের জন্য জীবনে কি কি করেছেন। রাজনীতিতে আসার আগে মানুষের জন্য তার কি কি অবদান আছে। তার হাতে সমাজের কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কিনা। রাজনীতি না করলেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছেন কিনা। এবং আপনি বিশ্বাস করেন কিনা যে - যাকে আপনি আজ নেতা মানছেন - তার হাত ধরেই অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া সমাজটা একদিন আলোর পথে ফিরে আসবে। আপনার একটা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাগ্য। মনে রাখবেন - এইদিন দিন না, সামনে আরও অনেক দিন আছে। সিদ্ধান্তে ভুল হলে সেই অনাগত দিনগুলোতে আর কোনদিন নতুন সূর্য্য উদিত হবেনা। সকলের জন্য শুভকামনা।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: