বর্তমান মণিরামপুরের রাজনৈতিক অবস্থা 

ডেস্ক।। | প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৪

ডেস্ক।।
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৪

ছবি- দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক

নির্বাচন আসলেই যশোর, মণিরামপুর পথে- ঘাটে পাড়া মহল্লায় নতুন নতুন মৌসুমী নেতার দেখা মিলে। এমন কি দলীয় টিকিটও পেয়ে যান এই মৌসুমী নেতাদের কেউ কেউ। শুধু যে সংসদ নির্বাচন তা নয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের দলীয় টিকিটের রাজত্ব চলে বেশ। ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে বিশৃংখলা দলের মধ্যে গোলযোগ বিরাজ করছে এসব মৌসুমী নেতাদের কারণে। আর্বিভাব হওয়া এসব নেতাদের আধিপত্যে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি উভয় দলের মধ্যে বিরাজ করেছে। ফলে দুই দলের প্রতি নতুন প্রজন্ম আস্থা হারাচ্ছে সেই সাথে আস্থা হারাচ্ছে সাধারন মানুষ। দলের ইমেজ বড় ধরনের সংকটে এখন মণিরামপুরের রাজনৈতিক নেতৃত্বে।

এসব মৌসুমী নেতাদের কর্মকান্ডে দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ। রাজনীতি থেকেও বিদায় নিয়েছেন হাজার হাজার ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতা কর্মীরা। ইতিমধ্যে মণিরামপুর উভয় দলের দলীয় মনোনয়ন কে কেন্দ্র করে শত শত নেতা কর্মী মাঠে নেমেছেন । সরকারি দল আওয়ামী লীগ ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেসব নেতারা ত্যাগ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের সিংহভাগ নেতা কর্মীরা রাজনীতি থেকে অনেকেই বিদায় নিয়েছেন । যে কারণে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক রাজনীতিতে বড় ধরনের অভাব দেখা দিয়েছে।এই অভাবের পিছনে আরও কিছু কারণ লক্ষ করা যাচ্ছে।ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের মাঝথেকে পরপারে হারিয়ে গেছেন কিছু বর্শিয়ান নেতা,সাবেক ৯১,৯৬,২০০৮ সালে নির্বাচিত সংসাদ এড.খান টিপু সুলতান, আটবার নির্বাচিত ১৪নং দূর্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার বাহাদূর আলী,উপজেলা আওয়ামীলীগে একাধিকবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পদ গোলাম মোস্তফা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সভাপতি, সম্পাদক এবং বহু ত্যাগী নেতাকর্মী হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। তাঁদের এই শূন্যতা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনীতির সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে আসে অর্থ ও বিত্তশালী ব্যক্তির নাম। যারা রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী কোনটাই ছিলেনা। ফলে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নেতৃত্বের সংকট আর গ্রুপিং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে পিএনপিতে দেখা দিয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রুপিং। দল ক্ষমতায় না থাকলেও নিজেদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হানা হানিতে জড়াতে দেখা গেছে বেশ করেক বার। তবে বর্তমান বিএনপির রাজনীতিতে আগামী দিনের সংসদীয় মনোনয়নে শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল এর নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে।

তবে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রন এখন শক্তিশালী অবস্থানে দুটি পক্ষকে লক্ষ করা যাচ্ছে। এক পক্ষের অবস্থানে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য সমর্থিত মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু।

অপরদিকে কঠোর অবস্থা গ্রুপিংয়ে জড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, কেন্দ্র আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এস এম ইয়াকুব আলী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্দীপ ঘোষ সহ মনিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রকি ও সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথ।

ফলে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নিরিহ নেতা কর্মী পড়েছেন গোলকধাঁধায়। একাধিক ত্যাগী ছাত্র ও যুবক রয়েগেছেন কমিটির বাইরে। আওয়ামী লীগের বিশেষজ্ঞদের এ কারনে রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ভাবে হয়ে পড়েছে দূর্বল। মেধাবীরা আসছেনা রাজনীতির পথে। আর আসার সঠিক পথও নেই। কেননা পুরাতনদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ছাড়ছেনা হাল, বিধায় তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতি অঙ্গন দখল নিয়েছে তথাকথিত হাইব্রিড নেতা, জামাত বিএনপির প্রেক্ষিত কর্মী সমার্থক ও প্রভাব ব্যবসায়ীরা। আওয়ামীলীগের মধ্যে ঢুকে এসব হাইব্রীড মাঠে ময়দানে অপকর্ম করছে একের পর এক। অত্যাচারও করছে ত্যাগীদের উপর।

দলের নেতারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে কে কাকে রাজনৈতিক চাপে ফেলতে পারে এ নিয়ে চলে নীতিবাচক প্রতিযোগিতা। ওপরে ওঠতে গেলে তাকে টেনে হিচড়ে নামানোর জন্য যত নোংরামি করতে হয় সবই ঘটছে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত চর্চা নেই গঠনতন্ত্রের। যার যত শক্তি সে তত বড় নেতা। নেতা হবার অন্যতম যোগ্যতা হলো কার কতবেশি ক্যাডারের শক্তি আছে। দলের শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতা এদের পছন্দ করে। এরা আছে বলেই তো বড় নেতাদের শক্তি ঠিক আছে। নিজের প্রতিপক্ষকে ঠিকমতো সাইজও করা যাচ্ছে। উপজেলার সহযোগী সংগঠনগুলোর বর্তমান রাজনীতির হালচাল দেখে বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ থেকে ৫ জন সাবেকব, ও বর্তমান ছাত্রনেতারা দু:খ প্রকাশ করে বলেন কি ছিলো আর এখন কি হচ্ছে রাজনীতির অঙ্গনে। আগে সংগঠনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ছিলো। সংগঠন চলত নেতাকর্মিদের মধ্যে ভালোবাসা ও ব্যবহারে। আর এখন আগে দরকার টাকা। যার টাকা বেশি তার পেশি শক্তি বেশি। যার পেছনে তত বেশি মাস্তান রয়েছে সে তত বড় নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই দলের সাবেক কয়েজন ছাত্রনেতা ও যুবনেতা নেতা বলেন বর্তমান রাজনীতি এখন বানিজ্য হয়ে উঠছে। আর এই বানিজ্যর লোভে অনেকেই এখন হাইব্রিড অর্থশালী এমন একজন নেতাকে খুজে নিচ্ছেন। তারা বলতে চাচ্ছে যার টাকা আছে, এবং আমাদের সকল প্রকার সিল্টার দিতে পারবে এমন একজনকে আমরা চাই। ফলে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে যেটা খুবই দুঃখজনক।

একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলগুলো দিন দিন তাদের জনসমর্থন হারাচ্ছে। অন্যদিকে মণিরামপুরের সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজনীতি থেকে। ফলে আওয়ামীলীগ সরকার যতই উন্নয়ন করুক না কেন তার সঠিক ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। তবে মণিরামপুর আওয়ামীলীগ ও দলের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে নেতার অভাব না থাকলেও রয়েছে ব্যাপক নেতৃত্বের অভাব। যে কারনে দল ও দলের অঙ্গসংগঠন গুলোর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে একের পর এক। এর প্রভাব আগামী সংসদ নির্বাচনে পড়তে পারে বলেও ধারণা করাহচ্ছে।

লেখক:
মোঃশাহ্ জালাল, সম্পাদক দৈনিক সমসাময়িক 

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: