নেতার অক্ষমতা ও রাজনৈতিক অবক্ষয়

সমসাময়িক সাহিত্য ডেস্ক।। | প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৮

সমসাময়িক সাহিত্য ডেস্ক।।
প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৮

ফাইল ফটো

ফিদেল কাস্ত্রোর একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শুরু করা যাক। " আপনি আমাকে অপমান করুন - এটা আমার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে না, কারণ আমি জানি - ইতিহাস একদিন আমাকে অব্যাহতি দেবে। " অন্যদিকে চার্লস পিকারিং নামে একজন দার্শনিক বলেছেন - " একটা দেশে গণতন্ত্রের জন্য প্রথমেই দরকার একটা শালীন সমাজ - যেখানে মানুষ একে অপরের প্রতি উদার, সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।"

কিছুদিন যাবত অদ্ভুত কিছু কারণে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখতে বাধ্য হচ্ছি আমি - যা আমার সাথে যায় না। আমি শতভাগ সাহিত্য নিয়ে কাজ করি। যদিও সেটা আমার নেশা, পেশা নয়। কিন্তু বিবেক নামক একটা বস্তু আমি হৃদয়ে ধারণ করি বলে কোথাও অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদ না করলে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারি না কোনভাবেই। মূলত সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আজকের লেখা।

সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটা ভিডিও দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। ভিডিওতে যে মানুষটিকে ছোট করা হয়েছে - ফিদেল কাস্ত্রোর বিখ্যাত উক্তিটি তার জন্য প্রযোজ্য। কারণ ইতিমধ্যে মনিরামপুর সহ সারাদেশের মানুষ জেনে গেছে - ক্ষমতার জোরে যে মানুষটাকে ছোট করা হয়েছে - তাদের পরিবারের হাত ধরেই একদিন একটা ইউনিয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে-ই মানুষটা একজন সি আই পি - যাকে আওয়ামী লীগের সরকার জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ঐ সম্মানসূচক কার্ডটা দিয়েছিল। এখনও তিনি যশোর জেলার সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের অন্যতম। তার নিজ হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে একশোর উপরে মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মানুষের চারটা মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান) নিয়ে মনিরামপুরে তার মত আর কেউ এতো কাজ করেছেন বলে আমার জানা নেই। তার নিজের টাকায় শত শত মানুষের বাসস্থান নির্মিত হয়েছে, শত শত মানুষের চিকিৎসা হয়েছে - যা আজও চলমান। করোনার সময় ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য তার খাদ্য সহায়তা মনিরামপুরে ইতিহাস হয়ে থাকবে। তার কাছে সাহায্য চেয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে এসেছে - এমন নজির আমার জানা নেই। এই ইতিহাস যাদের জানা নেই - সেটা তাদের অক্ষমতা, সেই অক্ষমতার দায়ভারও তাদের। মাইকেল ক্রিচটনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে আছে তো? উনি বলেছিলেন - " যে ইতিহাস জানে না, সে মূলত কিছুই জানে না। সে একটা পাতার মত - যে নিজেই জানে না যে - সে গাছের একটা অংশ।"

এবার নেতৃত্ব নিয়ে দুটো কথা বলা যাক। নেতা আসলে কে? দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেই কি আপনি নেতা ? অথবা দলীয় কোন পদ-পদবী থাকলেই কি নেতা হওয়া যায়? রাজনীতির বাইরে আপনার ইনকামের উৎস কি? মনে রাখতে হবে - রাজনীতি যদি আপনার পেশা হয় - তাহলে কোনদিনই আপনি নেতা হয়ে উঠতে পারবেন না। সারাদিন রাস্তায় মাইকে গলা ফাটিয়ে আর যাই হোক - নেতা হওয়া যায় না। মূলত জনগণ যার আহবানে সাড়া দেয় - তিনিই নেতা। লিসা হ্যানসনের একটা উক্তি এরকম - " নেতৃত্ব মানে কোনরকম বল প্রয়োগ ছাড়াই অন্যদের একটা নিদিষ্ট পথে চালিত করার ক্ষমতা।" অথচ আমাদের দেশে আজ অনেকেই গায়ের জোরে নেতা, ক্ষমতার জোরে নেতা, আবার রাজনীতির ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ অনেক বড় নেতা - যদিও মানব সেবায় তার কোন অবদান নেই। মনে রাখবে হবে - দলসেবা আর জনসেবা এক না। আপনি আপনার দলের অনেক বড় সেবক হতে পারেন - তাতে জনগণের কিচ্ছু যায়-আসে না। জনগণ কোনদিনই আপনাকে নেতা হিসেবে মানবে না - যদি না আপনি তাদের জন্য কাজ করেন। আবার কেউ যদি জনসেবা করে দুইদিনেই নেতা হয়ে যায় - সেটা তার যোগ্যতা, তার সক্ষমতা। মানুষের মন যিনি জয় করতে পারবেন - দিনশেষে তিনিই নেতা হবেন। অন্যদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে - এটাই বাস্তবতা। স্রোতের বিপরীতে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় আপনাকে হার মানতেই হবে। এটা আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন - ততই আপনাকে কম সাঁতার কাটতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে - রাজনীতির সংজ্ঞা এখন বদলে গেছে। শুধু মিছিল, মিটিং, জনসভা, বক্তৃতা মানেই রাজনীতি না। আজকের দিনে রাজনীতির মানে হল - কথা ও কাজের মাধ্যমে সবসময় মানুষের পাশে থাকা । মানুষের মন জয় করতে পারলেই আপনি নেতা। তা না হলে হয়তো আপনার ক্ষমতার ভয়ে মানুষ আপনাকে উপরে উপরে নেতা মানবে, আর তলে তলে যোগ্য লোকের অপেক্ষায় থাকবে। আবার শুধুমাত্র ঘৃণার কারণে অনেকেই রাজনীতি মাঠে বানের জলের মত ভেসে যায় অজানা গন্তব্যে। তাই রাজনীতি শিখতে হলে নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনীগ্রন্থ পড়তে হবে আমাদের । উনি এক জায়গায় বলেছেন -" ঘৃণার কারণে মানুষের মন অন্ধকার হয়ে যায় ; স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি কাজ করে না। নেতা হতে গেলে তুমি কাউকে ঘৃণা করতে পারবেনা।"

জানি না - এসব কথা থেকে যাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার - তারা নেবেন কিনা। তবে সমাজের একজন হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি বিশ্বাস করি - বাংলাদেশ পুরাতন ধ্যান-ধারনার রাজনীতি থেকে অচিরেই বেরিয়ে আসবে। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন - বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাশরাফিদের জামানা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এমন শত শত মাশরাফি আছে। সেই সব মাশরাফিদের হাত ধরেই বাংলাদেশ একদিন অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসবে, আর আমরা একটা আলো ঝলমলে দিন রেখে যাবো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে। এক আকাশ শুভকামনা সকলের জন্য।

লেখক- অলিয়ার রহমান (বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক) 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: