দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা : বাংলা প্রথম লালসালু উপন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১২:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১২:০৬

ছবি সমসাময়িক
  [gallery ids="1540"] এইচ. এম. ফেরদাউস হাসান, প্রভাষক বাংলা, কলেজ ক্যাম্পাস : ইংলিশ ভার্সন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।

উপন্যাস : লালসালু

প্রশ্ন: উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বিধবা, নিঃসন্তান জয়তুন বেগমের সংসার আর চলছিল না। একদিন মাঝরাতে তিনি চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন এবং তারপর থেকেই তার সব আচরণ অস্বাভাবিক। দয়ারামপুর গ্রামের মানুষ বলাবলি করছে, স্বপ্নে তিনি এক বুজুর্গ ব্যক্তির কামিয়াবি হাসিল করেছেন। সবাই তার কাছে পানিপড়া আনতে যায়। জয়তুন বেগমের আয় রোজগার মাশাল্লামন্দ নয়। ক. ‘সালু’ শব্দের অর্থ কী? খ. হাসুনির মা দ্বিতীয় বিয়ে করতে অনাগ্রহী কেন? গ. মজিদ এবং উদ্দীপকের জয়তুন বেগমের তুলনামূলক আলোচনা কর। ঘ. উদ্দীপকের উলি­খিত জয়তুন বেগম চরিত্রটি বিশে­ষণ কর। প্রশ্নের উত্তর ক)জ্ঞানমূলক: ‘সালু’ শব্দের অর্থ লাল রঙের কাপড়। খ)অনুধাবন: হাসুনির মার দ্বিতীয় বিয়েতে অনাগ্রহী থাকার কারণ বিচিত্র। তার দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটি নিশ্চয়ই খুবই তিক্ত ছিলÑ দারিদ্র্যলাঞ্ছিত, সুবিধাবঞ্চিত, অশিক্ষিত সমাজে যেমনটি হয়ে থাকে। স্বামীর স্ত্রীটিকে একটি প্রয়োজনীয় প্রাণী হিসেবেই ঘরে আসে এবং তাকে দিয়ে ষোল আনা খাটিয়ে নেয়। কাজে কর্মে একটু এদিক সেদিক ঘটলেই অমানুষিক নির্যাতনÑমানসিক তো বটেই, অনেক সময় শারীরিকভাবেও। শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সম্পর্কে হাসুনির মায়ের বক্তব্য : “অরা মুনিষ্যি না।” রহিমা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে, সে আবার বিয়ে করবে কিনা, সে তখন বলে, “দিলে চায় না বুবু।” তার বৃদ্ধ বাবা-মা সারাদিন যেভাবে অকথ্য ভাষায় ঝগড়াঝাটি করে, তা-ও হাসুনির মার মনে বিয়ে সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। গ)প্রয়োগ: সৈয়দ ওয়ালীউল­াহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ এবং উদ্দীপকের জয়তুন বেগম চরিত্র দুটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা মিল এবং অমিল দুটি দিকই দেখবো। প্রথমে আমরা মিলের দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাই, পরে অমিল অংশ আলোকপাত করবো। মিলের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে, দুজনই ধর্ম ব্যবসায়ী। মজিদ এবং জয়তুন বেগমÑ দুজনই অশিক্ষিত মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কর্মকাÊ চালিয়ে গেছে। মজিদ আয়ত্তে এনেছে মহব্বতনগর গ্রামের মানুষদের। এই কাজটা সে করেছে সুকৌশলে, ধীরে ধীরে। অপরদিকে জয়তুন বেগম নিয়ন্ত্রণে এনেছে দয়ারামপুর গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষদের। মিলের মধ্যে দুজনই ধর্মজীবী এবং তাদের উত্থান হয়েছে নাটকীয়ভাবে। অমিলের কথা আসলে প্রথমেই যে দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠে, সেটা হলো মজিদের ক্রমবর্ধমান লোলুপতার পাশে জয়তুন বেগমের অসহায় রূপটি। মজিদ স্পষ্টতই নিপীড়ক, শঠ, প্রবঞ্চক, প্রতারক, জোচ্চর, বাটপার, লম্পট, উদ্দেশ্যবাজ, ক্রূর, কুটিল, হিংস্রÑ এবং সেই সঙ্গে ধর্ম ব্যবসায়ী। কিন্তু জয়তুন কেবলই ধর্ম ব্যবসায়ীÑ আর কিছু নয়। মহব্বতনগর গ্রামে থাকা খাওয়ার পাকা বন্দোবস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও মজিদ ক্ষান্ত হয়নি বরং তার ব্যবসায় আরও বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তাভাবনা করেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিদের দমন করেছে। আওয়ালপুরের পীর, আক্কাস তার মিত্রপক্ষ ছিল না সে লড়াই করেছে দুর্দান্তভাবে যদিও শেষে জমিলা ও রহিমার কাছেই তার শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। উদ্দীপকের জয়তুন বেগমের কোনো প্রতিপক্ষ দেখানো হয়নি এবং কাজটি নিতান্ত জীবন বাঁচানোর জন্যে করেছিলেন বলে তিনি পাঠকের সহানুভূতি পান জ্জ মজিদ তা থেকে বঞ্চিত। ঘ)উচ্চতর দক্ষতামূলক: মানুষ সমাজের সৃষ্টি। আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে এক একজন মানুষ গড়ে ওঠে এক ভাবে। উদ্দীপকের জয়তুন বেগমও আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে গড়ে ওঠে একটি জীবন্ত চরিত্র। ব্যাপারটি কিভাবে ঘটে, সেটি একটু বিশে­ষণ করা যাক। প্রথমত, জয়তুন বেগম যে এমন হলেন, তার জন্যে দায়ী তার অর্থব্যবস্থা। লক্ষণীয়, উদ্দীপকে বলা হয়েছে, তিনি বিধবা ও নিঃসন্তান। যদি তার স্বামী কিংবা সন্তান থাকতো, তাহলে বৃদ্ধকালে তাকে এই পানিপড়া ব্যবসায় নিশ্চয় নামতে হতো না। তিনি আর্থিক দিক থেকে অসহায়। তার আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি যদি ভন্ড হতেন, তাহলে শুর“ থেকেই পানিপড়া দিতেন, তা কিন্তু তিনি দেননি। তখনই দিয়েছেন, যখন দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে। সুতরাং, অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত না থাকলে জয়তুন বেগম পানিপড়া দিতেন না। দ্বিতীয়ত, জয়তুন বেগম যে এমন হলেন, তার জন্যে দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। আমাদের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনাথ বৃদ্ধা নারীর একা বেঁচে থাকা খুব কষ্ট যদি তার না থাকে স্বামী, না থাকে সন্তান, না থাকে কোনো সম্পদ। গ্রামের মানুষ মুখে মুখেই ‘আহা’, ‘উহু’ করে কিন্তু একজন বৃদ্ধাকে নিজগৃহে ঠঁাই দেয় না। এক্ষেত্রে সেই বিখ্যাত উক্তিটি স্মরণ করতে পারিজ্জ“জগতে কে কাহার”? আমাদের সমাজব্যবস্থা যদি উন্নত হতো, যদি মানবিক হতো, তাহলে আমার মনে হয় না এই বৃদ্ধা পানিপড়া দেওয়া শুর“ করতেন। সমাজই তাকে বাধ্য করেছে। এবারে আমরা আলোকপাত করতে চাই, একটা দেশের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা কীভাবে সে দেশের মানুষকে নির্মাণ করে। উদ্দীপকের চরিত্রটির নাম ‘জয়তুন বেগম’। নাম শুনে বোঝা যাচ্ছে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। তিনি থাকেন দয়ারামপুর নামক গ্রামেজ্জএ কথাও উলে­খ আছে; যে গ্রামের মানুষের চিন্তাজগৎ মূর্ত হয়েছে ‘বুজুর্গ’ ‘কামিয়াবি’; ‘হাসিল’ ইত্যাদি শব্দরাজির আশ্রয়ে এবং যে গ্রামের মানুষ পানিপড়ায় আস্থা রাখে। পানিপড়া সংস্কৃতিতে আস্থা থাকার কারণেই জয়তুন বেগম সৃষ্টি হতে পেরেছেন নতুবা পারতেন না। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়: টাকার অভাব না হলে কিংবা সমাজব্যবস্থা মানবিক হলে অথবা কুসংস্কৃতি না থাকলে উদ্দীপকের জয়তুন বেগম চরিত্রটি কখনই এমন চরিত্রে বাঁক নিতেন না। সুতরাং মানুষ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাপের ফসল।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: