" জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম" - দ্বিতীয় খন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৪৬

ছবি সমসাময়িক
 

মোঃ শাহ্ জালাল।।

আমার অতি পরিচিত যশোর শহরের চেনা- অচেনা গলিতে প্রতিমুহূর্তে ঘটে চলেছে কত নতুন নতুন প্রেমের গল্পকথা। দেশের বৃহত্তর শহর যশোরের ছোটো বড় যে কোন গলিতে কান পাতলেই শোনা যায় নতুন প্রেমের গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস । শহরের চলমান ব্যস্ততার মাঝে পড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই সব প্রেমের ইতিকথা নিয়েয়ই আমার কাল্পনিক চরিত্রে নতুন গল্প " জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম - দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ- এরপর শিমুর কোচিং শেষে ওকে মুকুন্দর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। সারাদিন খুবই ক্লান্ত বহু পরিশ্রম গেছে আজ। কোন মতে দুটো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে স্বপ্নের ভিতর সারাদিন যা যা করেছি সবকিছু দেখতে লাগলাম। দেখছি শিমু আমার কতো শত বছরের চেনা কতো আপন দু'জন হাঁটছি রেললাইনের পথ ধরে, কখনো বা রিক্সায় মাঝে মাঝে রিক্সার হুড তুলে একান্ত আনমনে কিছু বলব বলব ভাবছি কিন্তু বলা হলো না। মনের আনন্দে বহু বছরের সেই কবিতা খানি যার রচনা হয়ে ছিল কোন এক ভালোলাগা ভালোবাসার মুহুর্তে জানো, আজকাল বৃষ্টি শুরু হলেই আমি ঘুমের ভান করে থাকি, যেনো প্রচন্ড অনীহা আমার বৃষ্টির জলে, অথচ, তুমি আমাকে ডাকবেই প্রতিটি ফোঁটায়, আমি পারিনা বেশীক্ষণ উপেক্ষা করে থাকতে, তোমাকে, তোমার ডাক’কে, তারপর, ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াই খালি রিকশা দেখে উঠে বসি ডান দিক’টা খালি রেখে, তোমার জন্যই খালি রাখি ডান দিকটা। রিকশার হুড তোমার কখনোই ভালো লাগতো না, তাই আমি ভিঁজতে ভিঁজতে শহরময় ঘুরে বেড়াই, তবুও হুড তুলতে দেই না, রিকশাওয়লা আমাকে পাগল ভাবে, ডান হাত’টা সিটের উপর চেপে ধরে, কখন যে তোমার বদলে আমার বিষাদ বসে থাকে সেখানে, টেরও পাইনা, ছুঁয়ে থাকি আমার বিষাদ’কে অনন্তকাল, তারপর একসময় মরে যেতে ইচ্ছে করে, মরে গিয়ে বৃষ্টির জল হতে ইচ্ছে জাগে। প্রতিবারই রিকশা’টা কি ভাবে যেনো সেই কফি’র দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি জানি না, বিশ্বাস করো আমি জানি না, প্রচন্ড বৃষ্টির দিনে তুমি শেষবার এই কফির দোকানেই আমাকে বলেছিলে “ভালো থেকো”! আমি ভিঁজে শরীর নিয়ে দু’কাপ গরম কফির অর্ডার দেই প্রতিবার, একটা কাপ তোমার জন্য রেখে দেই, বিল দিয়ে চলে আসার সময় প্রতিবারই ওয়েটার ডেকে বলে, “আপনার এক কাপ কফি এখনো রয়ে গেছে” আমি মনে মনে বলি, “ওটা কফি না, আমার না বলা ভালোবাসার বিষাদ,” তারপর বৃষ্টিতে হাঁটতে হাঁটতে আবার ঘরে ফিরি। তুমি এই শহরের যেখানেই থাকো, বৃষ্টির দিনে ভুলেও সেই কফির দোকানে যেওনা, তুমিতো জানো না, কখোনো জানবেও না, বৃষ্টির দিনে এক কাপ ‘গরম বিষাদ’ তোমার অপেক্ষায় সেখানে বসে থাকে সেই কফির দোকানে। যেখানে মিলিত হয়েছিলাম আমরা প্রথম পরিচয়ে।। প্রতি নিয়ত শিমুকে কোচিং- এ নিয়ে যায় আর প্রতিদিন ভাবি আজ বলব কি যে বলব এটা বুঝতে পারিনা। তবে মনের ভিতর ভিষণ রকমের আনন্দ। আজ বাড়ি থেকে যাওয়া পথে গাঁদাফুল গাছ থেকে দুই'টা ফুল নিলাম আর ভাবলাম এটা শিমুর খোঁপায় পরিয়ে ওকে বলব...... এর মধ্যে হঠাৎ শব্দ মায়ের ডাক ওরে খচ্চর "কি রে কলেজ যাবিনা ?" মায়ের ডাকে মধুর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার। মায়ের উপর একটু রাগ হলো বটে, আসলে শুধু ঘুমটা তো ভাঙ্গলো না, তার সাথে স্বপ্নটা আজকেও মাঝপথে শেষ হয়ে গেলো । মনে মনে ভাবতে লাগলম স্বপ্নটা কেন শেষ পর্যন্ত দেখতে পেলাম না ,শেষ হওয়ার আগেই কেন যে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ! আজকে শিমুকে মনের কথা টা বলতে পারতাম কিন্তু না বলা হলো না। এভাবে আজ বলি কাল বলি করতে করতে কেটে গেল তিন চার মাস তবুও বলা হলোনা। এরি মধ্যে শিমুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন শুরু হয়ে গেল, কোথাও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে পরিশেষে ভর্তী হতে হলো যশোর এমএম কলেজে। এতেই আমি খুবই খুশি কারণ আমিও এমএম কলেজের ছাত্র। এবার পারমানেন্ট একসাথে বহু বছর বলতে মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একসাথে কলেজে যেতে পারবো দু'জন। এরপর থেকে প্রতিদিন শিমুকে কলেজে নিয়ে যেতে ও নিয়ে আসতে লাগলাম। মুকুন্দ সুস্থ হয়ে গেল। সেও আমাদের সাথে যেত তবে মুকুন্দ একটু দুষ্টুমি করে আমাকে ও শিমুকে কলেজ যাওয়ার পথে বাসে এক সিটে বসতে দিয়ে ও অন্য সিটে বসতো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আমাদের সাথে আসতো না। মণিহার বাস কাউন্টার থেকে হারিয়ে যেত মুকুন্দ মিতা কে নিয়ে। তবে যশোর মণিহার থেকে মণিরামপুর ১০ টাকা হাফ ভাড়া অনেক সময় বাস কাউন্টারে রাখতে চাইতো না। তাই শিমুকে টিকিট কাটতে বলতাম ও যেয়ে একটু হাসি দিলেই ২০ টাকায় আমাদের দুইটা টিকিট দিয়ে দিত। এই কলেজ আসা যাওয়ার পথে অতি পরিচিত হয়ে গেলাম মণিহার বাস কাউন্টারের রহিম চাচার সাথে। এক সময় রহিম চাচা ভাবতে লাগলো আমরা স্বামী- স্ত্রী, হয়তো ছাত্রজীবনে বিয়ে করেছি। আর ভাববেই বা না কেন আমরা ফ্রী মন-মানসিকতা নিয়ে মিশতাম দু'জনে। এভাবেই কেটে গেল আরো ৩ বছর আমার অনার্স শেষ মাস্টার্সে ভর্তী হয়েছি। শিমুও এবার ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। এবার যায় হোক বলতেই হবে আমি শিমুকে ভালোবাসি। তাই মাস্টার্স প্রথম ক্লাসের দিন কলেজে যাওয়ার আগে সকাল বেলা মনে মনে একদম ঠিক করেই নিয়েছি পৃথিবী উল্টে গেলেও আজ প্রপোজ করবো। কেননা এই ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৩বছর আগের। কলেজে যাওয়ার জন্য আমি মণিরামপুর বাজারের হাকোবা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরি ঠিক ওখান থেকেই রোজ সময়মতো শিমু ওই বাসে ওঠে। প্রথম যেদিন শিমুকে দেখি মুকুন্দদের বাড়িতে সেদিন থেকে কিরকম যেন খুব ভালো লেগে যায়। এমন নয় যে এর থেকে বেশি সুন্দরী মেয়ে হয়না, কিন্তু কেন জানিনা সেই প্রথম দিন থেকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে শিমুকে। কেননা শিমুর মাঝে সুন্দর একটা মন পেয়েছিলাম এবং শিমুর কাজল হরিণ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়েই আমি অর্ধেক জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো এই বিশ্বাসে। সেই ৩ বছর আগে এই ঘটনার সূত্রপাত হওয়ার অনেকদিন পর আমি জানতে পারলাম আসলে শিমুর আসল নাম ঝর্ণা। আরো জানতে পারলাম শিমুর বাবা হিন্দু মা মুসলিম। বাবা মা ভারতে থাকে সে বাংলাদেশ এসেছে মাসি অর্থাৎ মুকুন্দর মায়ের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করতে। এখন শিমু / ঝর্ণা নিজেও জানেনা সে কোন ধর্ম পালন করবে। আগে যদিও এই বিষয়ে একটু একটু জানতাম তবে এই ৩ বছরে হাজার বার শিমুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি বিষয়টা নিয়ে কিন্তু শেষমেশ বলে উঠতে পারিনি। আসলে আমি কলেজে আসার পথে রোজ অনেক কিছু ভেবে আসি বলবো বলবো কিন্তু শিমুর সামনে এলেই কেন জানিনা সবকিছু ভুলে যায়। এভাবেই ৩টি বছর যে কিভাবে কেটে গেলো কিন্তু মনের কথাগুলো শিমুকে এখনো পর্যন্ত জানাতে পারলো না। তবে আজ বলবো আজ আমাকে বলতেই হবে। যাতে সবকিছু আমি ভুলে না যায় তাই সবকিছু আজ একটা কাগজে লিখে এনেছি। এতদিন ধরে মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা সব কথা লিখেছি। - বাস স্ট্যান্ডতে এসে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম শিমুর আসার অপেক্ষায়। কিন্তু অনেকদিন পর আজ খুব টেনশনে আমি। একটা বাস এসে দাঁড়ালো বটে কিন্তু আমি বাসটা ছেড়ে দিলাম ধরলাম না। শিমুর আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। শিমু আজ আসবেনা নাকি,আজ কি তবে ওর কলেজ ছুটি ! এইসব আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাম পাশে ফিরে দেখি শিমু আসছে। আজও হলুদ রঙের একটা সালোয়ার পরেছে ,সালোয়ারটাতে ডিজাইন করে ৬ সংখ্যাটা কি সুন্দর করে সব জায়গাতে লেখা আছে, সাথে ঘিয়ে রঙের একটা ওড়না আর তার সবথেকে পছন্দের খুব সুন্দর একটা ঝোলা কানের পরেছে। বড্ড মিষ্টি লাগছে আজ শিমুকে, ওর উপর থেকে চোখ ফেরাতে কোনোভাবেই ইচ্ছে করছেনা। এক ভাবে আমি শিমুকে কে দেখে যাচ্ছি ,বার বার তার ওই শান্ত চোখগুলোর দিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ বাস এসে যাওয়াতে আমার সম্বিৎ ফিরলো, শিমু বাসে উঠে পড়েছে , আমিও বাসে উঠলাম। বাসে উঠে শিমুর পাশের সিটটা তে গিয়ে বসলাম। শিমু জানলা দিয়ে বাসের বাইরের দিকে চেয়ে আছে ,হাওয়াতে তার চুলগুলো শুধু তার মুখের উপর এসে পড়ছে,অদ্ভুত রকম সুন্দরী লাগছে শিমুকে, আমি কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিনা। ৩ বছর পর এই প্রথম এতো সুন্দর লাগছে ভালো লাগছে কেন শিমুকে, বুঝাতে পেরছি না। ভাবছি সবকিছু এখনি বলে দিব না বাস থেকে নেমেই বলবো। ★★প্রিয় পাঠক 'জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম" আমার এই কাল্পনিক চরিত্রের গল্পটির প্রথম খন্ড প্রকাশের পর আপনারা অনুরোধ করেছিলেন দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশের জন্য। আপনাদের কথা বিবেচনা করে প্রকাশিত দ্বিতীয় খন্ড ভালো লাগলে সাথে থাকবে। জানাবেন কমেন্ট বস্কে আপনার মতামত। আসছে আগামী শুক্রবার আবারো হাজির হবো গল্পের তৃতীয় খন্ড নিয়ে আপনাদের সামনে ততদিন অপেক্ষ....... বি:দ্র:- প্রথম খন্ড যারা পড়েননি/ বা পড়তে পারেননি তাদের জন্য নিচের কমেন্ট বস্কে অথব দৈনিক সমসাময়িক নিউজে সাহিত্য ডেস্কে দেওয়া আছে প্রথম খন্ড পড়ে নিবেন।।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: