কবিতার নাম- ডিভোর্সী, কবি হাদিউজ্জামান পলক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২ মে ২০২১ ০৮:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২ মে ২০২১ ০৮:১২

ছবি সমসাময়িক

 
কাছের মানুষজন অড়ালে করে নানান সব গল্প
ঘর টেকে নি, বাচ্চা হয় নি আরও কতো কি !
বেহায়া, নির্লজ্জ, বেশরম, বজ্জাত, দুষ্চরিত্র
আর বেশ্যার মতো হাজারো গালাগালি শুনে যখন চুপ থেকেছি;
পান থেকে চুন খসলেও যে কথা শুনেছি, মার খেয়েছি
এগুলো আর ঐসব গল্পের আসরে ওঠে না।
উঠে আসে শাড়ির আচল ঠিক ছিলো না, মাথায় ঘোমটা ছিলো না
তরকারিতে নুন হয় নি আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা যত্ন হয় নি এসব।
অথচ মাতাল হয়ে যখন সে রোজ ঘরে ফিরতো
কোমল স্পর্শের অভাবে যখন সারারাত ছটফট করেছি
তার পুরোনো প্রেমিকার সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলার অপরাধে
আমার উপর অমানসিক অত্যাচার কেউ দেখে নি।
চুলগুলো মুঠো করে পিঠের উপর চপেটাঘাত
কোমরের চামড়ার বেল্ট দিয়ে নির্যাতন, টানাহ্যাঁচড়া আর চিৎকার-চেচামেচি
পাশ ফিরে শুয়ে শুয়ে ফুলে ফেঁপে কেঁদেছি; কেউ দেখে নি।
অথচ ডাকযোগে যখন তালাকনামা হাতে এসে পৌছালো
তখনই সমাজের কাছে হিসাব-নিকাশ, বিচার সালিশ একটাই--
আমি ডিভোর্সী, সমাজের কাছে অভিশপ্ত অলক্ষী নারী।।
আমি জানি, একে একে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে
কাছের মানুষগুলোর ফিসফিসানি যাবে বেড়ে
কখন কার সাথে যায়-আসি, কার সাথে করি হাসাহাসি
দূর থেকে ভেসে আসবে-"কচি বয়সে কি ডিভোর্স সহ্য করা যায়?"
"কষ্ট ভাগাভাগি করে নিতে রাজি"
"কেউ নেই বাসায়, চলে এসো, কষ্ট কমে যাবে"
রাস্তার মোড় থেকে হাজারও কথা ভিন্ন সুরে আসবে ভেসে
মুখ বুজে সহ্য করে "কিছু হয় নি" ভেবে ফিরতে হবে
অথচ এই নষ্ট সমাজই আমাকে বিচার ছাড়াই দিয়েছে ফাঁসি
আমার ফুলো মনে বজ্রের আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছে সমস্ত অন্তর
বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে ভালো থাকার অধিকারকে নির্বাসনে দিয়ে
আমৃত্যু কলঙ্কিত অধ্যায় এর রূপকার হয়ে, থাকতে হবে বেঁচে
অপরাধ একটাই--আমি ডিভোর্সী, আমি নারী।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: