মোগল ফৌজদারদের আমলে ‘যশোর রাজ্যে’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেমন ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০১:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০১:২১

ছবি সমসাময়িক

নিউজ ডেস্ক।।

বিশেষ করে রাজা প্রতাপাদিত্যের পতন থেকে শুরু করে ইংরেজ শাসন কায়েম পর্যন্ত? তবে বলাবাহুল্য, এই প্রশ্নের জবাব জানার জন্য এ পর্যন্ত তেমন কোন গবেষণা হয়নি। তবে পুরোপুরিভাবে মোগল শাসন কায়েমের আগে প্রতাপাদিত্যের রাজত্বকালে যশোর রাজ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল, ইতিহাসে তার প্রমাণ মেলে। প্রতাপের আমলেই প্রথম বাংলাদেশে তাঁর রাজ্যেই গির্জা নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়(১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)। যশোরের ফৌজদারদের মধ্যে নুরউল্যা খাঁর সময়টি নানা কারণে গুরুত্বপুর্ণ। এ সময় যশোর সমৃদ্ধির চরম শিখরে পৌঁছায়। রাজস্ব বিভাগের প্রধান বা দেওয়ান হিসাবে তিনি নিয়োগ দেন রামভদ্র রায়কে। মীর্জানগরে ফৌজদার থাকার সময় নুরউল্যার পিতৃবিয়োগ ঘটে। চল্লিশা উপলক্ষে তিনি যশোর রাজ্যের অগণিত মানুষকে মীর্জানগরে আমন্ত্রণ করেন এবং তাঁদের জন্য ভোজনের ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমান ছাড়াও তিনি হিন্দুদেরও দাওয়াত করেন এবং সে দাওয়াতপত্র লেখা হয় সংস্কৃত শ্লোক দিয়ে। সেই শ্লোকটি ছিল-‘‘খোদা-পাদার বিন্দুদ্বয়-ভজনপরঃপশ্চিমাস্যঃপিতামে। শ্রতুাল্লাল্লোতি বাণীং মুরশিদ-নিটকে মত্ত্যদেহং জহো সঃ। খাসী-মুর্গী-রহিতা কদু-কচু-ভবিতা মৎপিতুশ্চালসে খানা। শ্রী সেখো নুরনামা।গলধ্বত বসনঃ শুদ্ধি সম্পাদনীয়া’’। এর বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-‘খোদার পাদার বিন্দ যুগল ভজনকারী আমার পিতা মোল্যার নিটক আল্লা আল্লা বাণী শ্রবণ করিয়ে পশ্চিমাস্য হইয়া মর্ত্ত্যদেহ পরিত্যাগ করিয়াছেন। তাঁহার ৪০শ’ দিবসীয় শ্রাদ্ধাক্রিয়া উপলক্ষে খাসী-মুরগি বর্জিত সামান্য কিছু কদু-কচু সংবলিত(নিরামিষ) আহার যোগাড় করিয়া আমি শ্রী নুর উল্যা শেখ গললগ্নীকৃতবাসে নিমন্ত্রণ করিতেছি, আপনারা সকলে সমবেত হইয়া আমার শুদ্ধি সম্পাদনা করিলে কৃতার্থ হইব।’ যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থ সতীশচন্দ্র মিত্র ওই শ্লোকটি উল্লেখ করে লিখেছেন-‘‘...তিনি খোলা মাঠে পৃথকভাবে ব্রাহ্মণ পন্ডিতের জন্য নিরামিষ আহারের সুব্যবস্থা করিয়াছিলেন এবং বহু ব্রাহ্মণ পন্ডিত আসিয়া ভুস্বামী জ্ঞান করিয়া তাঁহার নিকট হইতে দান গ্রহণ করিতে দ্বিধা করেন নাই। সে যুগে যে হিন্দু-মুসলমানের ভিতর একটা সম্প্রীতি সংস্থাপিত হইয়াছিল তাহা বুঝা যায়।’’ নুরউল্যার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রমাণ মেলে আরও একটি ঘটনা থেকে। তাঁর জামাতা লাল খাঁ ছিলেন মীর্জানগরের মোগল সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। লাল খাঁ মীর্জানগর সেরেস্তার এক কর্মচারি রাজারাম সরকারের বিধবা কন্যাকে অপহরণের চেষ্টা করেনে। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি কারারুদ্ধ করেন রাজারাম সরকারকে। সে সময় ফৌজদার নুরউল্যা মীর্জানগরে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি মীর্জানগরে এসে জানতে পারেন সমস্ত ঘটনা। এ কথাও জানতে পারেন যে রাজারাম সরকারের কারারুদ্ধ করার সংবাদ পেয়ে তাঁর কন্যা আত্নহত্যা করেছেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে নুরউল্যা সেনাপতির দায়িত্ব থেকে জামাতা লাল খাঁকে বিতাড়িত ও মীর্জানগর ত্যাগে বাধ্য করেন। মীর্জানগরে অবস্থানরত মোগল সেনাবাহিনীতে বহু হিন্দু কর্মচারি উচ্চপদে নিয়োজিত ছিলেন অন্যান্য বিভাগের মতোই। মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার ছাড়াও মোগল ফৌজদাররা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য নগদ অর্থ ও সম্পত্তি দান করেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: