'পুলিশ নিয়ে কটূক্তি নয়, করোনাকালে তাদের ত্যাগের কারণেই দেশবাসীর মুখে হাসি'

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৪৩

ছবি সমসাময়িক
 

মোঃ শাহ্ জালাল।। বর্তমান সময় পুলিশ নিয়ে লেখার কথা ভাবলে বুক কাঁপে ওঠে। ভাবতেই পারিনি সারা বিশ্বের যোগাযোগ হঠাৎ একটি ভাইরাসে বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেক দিন বিশ্বের বড় বড় শহর গুলোতে যে আড্ডা হতো সেগুলো আজ বন্ধ। তবে এখন প্রায় চার মাস পর আস্তে আস্তে কিছুটা খুলছে। মাত্র চার মাসে আামাদের দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক আঘাত এনেছে। এই লকডাইনে আমি একজন কলম সৈনিক হওয়ায় আমাকে বের হতে হয়েছে। প্রতিদিন খবরের পেছনে ছুটার জন্য । তবে করোনা কালের খবর ভিন্ন। দেখছি এই করোনা কালো কারা জনগণের পাশে ছিল বা এখনও আছে। আজ আমি আমার সাংবাদিকতার জীবনে কোনোদিন যা লিখিনি বা দেখিনি তাই আজ লিখব। কারো মৃত্যুর খবর শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে। খুব কাছের অনেক আপনজন চলে গেলে না ফেরার দেশে। তাই আজ চেষ্টা করছি জীবনযুদ্ধের কিছু কথা লেখার।

খুবই কাছ থেকে দেখেছি মহামারি করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় পুলিশ সদস্যরাদের। বাংলাদেশ পুলিশের অনবদ্য ভূমিকায় সারাদেশে এবার বেশ প্রসংশা পেয়েছে। নানা কারণে নেতিবাচক খবরের বিষয়বস্তু হওয়ায় জনমানসে পুলিশ সম্পর্কিত যে ভীতিপ্রদ ভাবমূর্তি ছিল মাত্র তিন,চার মাসেই এই দুঃসময়ে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে বলা যায়। এ দুর্যোগে বাংলাদেশ পুলিশের বহুমুখী মানবিক ভূমিকা মুগ্ধতা জাগানিয়া, বিস্ময়কর এবং অনুপ্রেরণাদায়ীও। এ কারণে আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশে পুলিশের প্রশংসা করা হচ্ছে। বিদেশি মিডিয়ায় পুলিশের ভালো কাজগুলো স্থান পাচ্ছে। শত দুর্নাম ঘুচিয়ে জীবন বাজি রেখে, জীবন দিয়ে পুলিশ যে জনগণের বন্ধু তা প্রমাণ করেছে। আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ সাদারণ জনগন পুলিশের প্রসংশা করেছেন। সত্যিই করোনাকালে পুলিশের বিচিত্র ও চমৎকার সব কার্যক্রমে সব দুর্নাম যেন ঘুচতে চলেছে। পুলিশ জনবান্ধব হচ্ছে। পুলিশের নয়া আইজিপি বলেছেন, পুলিশের সম্মন যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে আর ফিরে আসবে না। বরং সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাবে পুলিশ। মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধার যে জায়গা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ তা ধরে রাখবেই। এখন আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই পুলিশের ইতিহাসে ঘেটে। বাংলাদেশ পুলিশের দুঃসময়ে দেশের ও জনগণের জন্য যে কাজ করে তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধেও পুলিশ তাদের দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে প্রথম জীবন দিয়ে ছিল এই পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পুলিশে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমী সদস্য রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশে এখন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তারা স্থান পাচ্ছেন। যার সুফল মিলতে শুরু করেছে। মনেপড়ে হলিআর্টিজানে জঙ্গি হামলাকে পরাস্ত করতে একাধিক পুলিশ অফিসারকে জীবন দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকা সারা বিশ্বে নন্দিত। বাংলাভাই থেকে শুরু করে সব জঙ্গি দমনে সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ। ৫ মে হেফাজতের তান্ডবকে প্রতিহত করে ঢাকা মহানগরীর শান্তি বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। তারপরও কিছু অপেশাদার অসৎ পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকায় গৌরব প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এবার করোনাযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশকে এই জায়গাটা ধরে রাখতেই হবে। ২০২০-এর পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয়টা বেশ পছন্দ হয়েছে। তা ছিল 'মুজিববর্ষে অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার'। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আসলে পুলিশকে জনতারই হতে হবে। জনগণ যেন আস্থা পায়, বিশ্বাস পায়, পুলিশের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই কাজটি করতে হবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশ এখন জনতার পুলিশের ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিতকরণ, লাশ দাফনসহ বিভিন্ন জরুরিসেবা প্রদান করে যাচ্ছে। যাই বলি না কেন, এ দেশে চাইলেও সব কিছু পুরোপুরি সঠিকভাবে করা যায় না। লকডাউনের প্রথম দিকে পুলিশ এবং জনপ্রশাসন ছিল হার্ড লাইনে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের হার্ডনেসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে পুলিশ তথা প্রশাসনের ভাবমূতি নষ্টের পাঁয়তারায় নামে কতক মানুষ। পুলিশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ফলে পুলিশের কাজ পরিচালনার ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনা হলে বাংলাদেশ পুলিশ সেই স্ট্যাটেজি থেকে সরে আসে। এতে দেশের বেশ ক্ষতিও হয়েছে। আসলে মানুষকে জোরপূর্বক ঘরে রাখা বেশ কষ্টকর। লকডাউনটা ওই সময় যদি সঠিকভাবে পালন করা যেত তবে করোনা পরিস্থিতি অনেক আগেই হয়তো নিয়ন্ত্রণে চলে আসতো। এটা স্বিকার করতেই হয় করোনাকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সচেষ্ট ছিল। আগে বলা হতো পুলিশ জনগণের বন্ধু। অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত কথাটির প্রমাণ মিলতো না। পুলিশ কখনো কখনো জন আতঙ্কের কারণ ছিল। বর্তমান সময়ে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আসলে আজ পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে শুরু করেছে। কেবল এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখা গেলেই পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়েই থাকবে সব সময়। পুলিশ অপরাধ ব্যবস্থাপনার বাইরেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে- যা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক বেশি দৃশ্যমান আছে। পুলিশ আইনের বাইরে থেকে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ রোধ, ছেটখাটো বিষয়গুলো যা আদালতে গড়ালে হয়তো বড় আকার ধারণ করবে সেসব বিষয়ের সমাধান অন্তরালে থেকে পুলিশকেই দিতে হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সবার কাছে পুলিশের নানাবিধ কর্মকান্ড চোখে পড়ে। করোনাকালের শুরুতে যখন হাসপাতালে ডাক্তার মিল ছিল না; দাফন করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছিল না। ছেলে বাবা-মার, বাবা-মা ছেলের কাছে যেতে ভয় পেত পুলিশ তখন মানুষের পাশে ছিল। তাই এ সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষ করে করোনাকালে আমাদের পুলিশের মানবিক এই ভূমিকায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পুলিশবাহিনী বীর সদস্যদের স্যালুট জানাই। পাশাপাশি পুলিশের কাছে অনুরোধ থাকবে একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ যেন তাদের এই সাফল্য, এই সুনাম ধরে রাখে আজীবন। সেই সাথে করোনার এই বৈশ্বিক দুর্যোগকালে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর সকল সদস্যদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সাথে করোনার এই যুদ্ধের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে ইতোমধ্যে যেসব পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আর যারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আগামী দিনেও পুলিশ জাতির ক্রান্তিকালে এ রকম মানবিক ভূমিকায় নিয়োজিত হবেন সেই প্রত্যাশা থাকলো। আজকের মতো বিদায় আবারো ফিরবো নতুন কোন লেখা নিয়ে আপনাদের মাঝে। লেখক, গণমাধ্যম কর্মী, কলামিষ্ট ও সম্পাদক (দৈনিক সমসাময়িক)।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: