শীতের আগমনে গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১১:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১১:১৫

ছবি সমসাময়িক
শীতের আগমনে আমি এখন কাল্পনিক চোখে যশোরের মণিরামপুর গ্রামের বাড়িতে আমার রাজপ্রাসাদে। আমার রাজপ্রাসাদ বলতে ইটের তৈরী টিনের চাল দুই রুম বিশিষ্ট ঘর। ঘরের আঙ্গিনায় বার'মাসি সবজি চাষ করা হয়। এই ঘরেই আমার স্বর্গ কেনা'না এই ঘরে বসবাস করেন আমার জন্মদাতা মা-বাবা। যায় হোক আজ বহুদিন পর শহরে থেকে গ্রামে এসে আমার প্রিয় পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে চাই আমার গ্রামের শীতের অনুভূতি গুলো। এখন নভেম্বর মাসের প্রায় শেষ ঘন কুয়াশায় ঢেকে আসছে দিন দিন প্রকৃতি। দক্ষিনের জনপদে শীত কড়া নাড়ছে দুয়ারে দুয়ারে। মাঠে-প্রান্তরে ভোরবেলা শিশিরমাখা ধানের ডগা জানান দিচ্ছে ফসলের সম্ভাবনার বার্তা। আর কিছুদিন পর ঘর থেকে বাইরে বের হলে গা শিউরে ওঠবে, কারণ শীত এসেছে। গ্রামে এখন ভোরের শিশির সূর্যের আলোতে মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে, আসছে শীত। কুয়াশামাখা প্রকৃতি আর মাঠে মাঠে ফসলের সম্ভাবনার ঘ্রাণ, কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের রেখা। মাকড়সার জালে আটকা শিশিরমাখা ভোরের একরাশ সজীব স্বপ্ন নিয়ে প্রকৃতি এখন মানুষকে কাছে টানছে। উৎসব আর আনন্দের মাঝে নিমগ্ন খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষক মাঠের পাকা ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত। বহুদিন পর গ্রামের এমন দৃশ্য আমাকেই মুগ্ধ করছে। অপর দিকে দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারো আমার জন্মস্থান মণিরামপুর উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে চলছে ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে উৎসবের আমেজ। গ্রামের এই শীত কারো ভালো লাগা আর কারো কাছে কষ্টের। গ্রামে ভোরবেলা মাঠে ময়দানে ঘুরে দেখা যায়, বাঁশঝাড় বা গাছের আড়াল থেকে ভোরের সূর্য হালকা লালচে রঙে দিচ্ছে ঝিলিক। কুয়াশার প্রতিটি মাকড়সার জালে আটকা পরে সূর্যের কিরণে মুক্তা মালার মতো জ্বলে। যারা কখনো গ্রামে আসেনি তারা এই উপভোগ থেকে বঞ্চিত। গ্রীষ্ম আর শীতের মধ্যে হেমন্ত যেন অপরূপ এক সেতুবন্ধন। কার্তিকের মাঝামাঝি সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত শীতল হাওয়া আর বিকেলে ঝরতে থাকা ধুসর কুয়াশা।ইতোমধ্যেই গ্রামবাসী শীত উপলব্ধি করছে । কয়েকদিন থেকে ভোরে ফ্যানের প্রয়োজন হচ্ছে না। শীত শিরশির করে দরজায় কড়া নাড়ছে। যশোরে সাংবাদিক সাহিত্যিক লেখক ও কবিরা মেতেছেন লেখালিতে। মাঠে মাঠে ফসলের ক্ষেত ভোরের কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। শীত আসছে তাই আর এখন রাতে বৈদ্যুতিক ফ্যান চালাতে হয় না। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত মানেই উৎসব। যেন পিঠা আর জামাই মেলা নিয়ে আসে শীতকাল। শীত না এলে কবিতা পূর্ণতা পায় না। তাই কবিতায় মিশে আছে শীতের শত ভাবনা। শীতের আবহ শুরু হয় আর কবিদের মনের বাতাসে হিমের ছোঁয়া, গাঁ শিরশির করে। ঘাঁসের ওপর শিশির জমে থাকে । কবি বলেন- শিউলির প্রলোভনেই হেমন্তের হাত ধরে আসে শীত। ছাতিম আর শিউলি ফুলের ঘ্রাণ ছাড়া শীতের আগমন যেন নিষ্প্রাণ, ছন্দ-গন্ধহীন। যখন ঢাকায় থাকি আমাদের যশোর মনিরামপুরের ঐতিহ্য খেজুর রস আর গুড় প্রসঙ্গ উঠলেই মনে আসে যশোরের কথা। এবার গ্রামে এসে দেখলাম শীত আসার আগেই গাছিরা খেজুর গাছ কাটা শুরু করছেন। রস ও গুড়ের স্বাদ অটুট রাখতে সপ্তাহে একবার করে সেই রস সংগ্রহ করছে খুব ভোরে গাছ থেকে রস নামিয়ে বড় চুল্লিতে কাঠের আগুনে জ্বাল দেয়া হয়। প্রায় ৩/৪ ঘন্টা টানা জ্বালানোর পর রস শুকিয়ে ঘন হয়ে যায়। একপর্যায়ে তা গুড়ে পরিণত হয়।গ্রামের মূলত নারী-পুরুষ সবাই-ই রস থেকে গুড় তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকেন। চলে খেজুর রস জ্বাল দেয়া থেকে শুরু করে গুড় এবং পাটালি তৈরির কাজ। এখানকার গুড়ের চাহিদা এত বেশি যে কেউ কেউ বাড়ি এসেও কিনে নিচ্ছেন। তবে গাছ মালিকরা বলছেন, এলাকায় এখন আগের মতো খেজুর গাছ নেই। তাছাড়া রসও কম হচ্ছে। আমার নিজের অনেক গুলো খেজুর গাছ রয়েছে মাঠে তবে বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গাছগুলো বেকার পড়ে থাকে। কেউ আর কাটে না। তাই নিজের গাছ থাকার সত্ত্বেও আজ খুবই বঞ্চিত হলাম সকালে বাবার হাতের এক ক্লাস টাটকা খেজুর রস খাওয়া থেকে। তেমনি আমার নানী ও দাদি কেউ বেঁচে না থাকায়, নানি ও দাদির হাতের পিঠা খাওয়া থেকেও এবার বঞ্চিত হলাম। তবে মা যতদিন বেঁচে আছে ততদিনে আমার এই রস গুড় ও শীতের নানান পিঠা থেকে বঞ্চিত হতে দিচ্ছে না। ছেলে বাড়ি ফিরছে বহুদিন পর তাই বাড়িতে জমেছে রস গুড় ও শীতের নানান পিঠা পুলির উৎসব। আমাদের যশোরের খেজুরের রস ও গুড়ের মান সর্বোৎকৃষ্ট, তবে গাছির দক্ষতা ও নিপুণতার ওপরও রসের মান ও পরিমাণ নির্ভর করে সবকিছু। দিনদিন যেমন কমছে গাছ ও গাছির সংখ্যা, তেমনি তৈরী হচ্ছে না নতুন নতুন খেজুরের গাছ ও গাছি ফলে হারাতে বসেছে আমাদের এই ঐতিহ্য। পরিশেষে আমার এলাকাবাসী সকালে কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে আসুন আমরা প্রতিবছ নতুন নতুন খেজুরের গাছ উৎপাদন করি এবং আমাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করি
লেখক, মোঃ শাহ্ জালাল। কলামিস্ট ও সম্পাদক (দৈনিক সমসাময়িক নিউজ)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: