ফেল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিলেন প্রধান শিক্ষক

মণিরামপুর প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪২

মণিরামপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪২

ফটো:নিউজ প্রতিনিধি

যশোরের মনিরামপুরের টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য ১১ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র অকৃতকার্য ১১ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত টাকার বাইরে অতিরিক্ত ২২ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে তাঁদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছেন। এরআগে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করা ২১ জনকে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় বসিয়ে ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। ১১ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিজে। তবে তাঁরা বাড়তি টাকা নেওয়ার ব্যাপারে একে অপরকে দায়ি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে এবার টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ১৯ অক্টোবর তাদের ফলাফল প্রকাশ করে বিদ্যালয়। প্রকাশিত ফলাফলে ১৪ জনকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। বাকি ২১ জন এক বিষয় থেকে পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অকৃতকার্য ২১ জনের কাছ থেকে ফের ফেল করা প্রতি বিষয়ে ২০০ টাকা করে নিয়ে একই প্রশ্নে একই উত্তরপত্রে পরীক্ষা নেন প্রধান শিক্ষক। সেখানে দ্বিতীয় বারের মত ১১ জনকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এরপর এই ১১ জনকে নিয়ে বাণিজ্যে নামেন প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র। তাদের কাছ থেকে বাড়তি দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে তাদের এসএসসির ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। গতকাল মঙ্গলবার ফরম পূরণের সময় শেষ হয়েছে।
নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা হেড স্যারকে বলেছিলাম পরীক্ষার সুযোগ দিলে সামনের ৩ মাস ভাল লেখাপড়া করব। হেড স্যার কোনভাবে আমাদের ফরম পূরণ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে আমাদের কাছে বাড়তি দুই হাজার টাকা করে দাবি করেন তিনি। উপায় না পেয়ে বাবার সামর্থ না থাকলেও আমরা হেড স্যারের চাহিদামত টাকা দিয়েছে। পরে তিনি আমাদের ফি জমা নেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বিজ্ঞান ক্লাস হেড স্যারের দায়িত্বে ছিল। তিনি ক্লাস নিতেন না। সে বিষয়ে আমরা অনেকে ফেল করেছি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের ৩৫ জন নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দাবি করেছেন। একপর্যায়ে ১১ জন অকৃতকার্য হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ওরা এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। বাড়তি ১৮৫০ টাকা কমিটির সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিনোদ রায় ফেল ১১ জনের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ২১ জন না ১১ জন ফেল করেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা জামানত হিসেবে নিয়েছি। একপর্যায়ে সভাপতি আরো বলেন, আমি এক হাজার টাকা করে নিতে বলেছিলাম। স্কুল দুই হাজার টাকা করে নিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ঘটনা খতিয়ে দেখব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র উপজেলার একটি শিক্ষক সমিতির সভাপতি। সেই সুবাদে তিনি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতা দেখিয়ে ঠিকঠাক বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন না। এই পদকে কাজে লাগিয়ে প্রভাস চন্দ্র নিয়মিত নানা অজুহাতে আগেভাগে স্কুল থেকে চলে যান। তিনি ঠিকমত প্রতিষ্ঠানে না থাকায় বিদ্যালয়টির পড়ালেখার মান ভেঙ্গে পড়েছে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: