নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতন এবং বাংলাদেশের আইন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২৮

ছবি সমসাময়িক
  অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান।। বাংলাদেশের পুরুষদের একটা বিরাট অংশ বহুদিন ধরে পুরুষ নির্যাতনের জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি উত্থাপন করছে। তাদের দাবি নারী নির্যাতনের জন্য আলাদা আইন থাকলেও বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের কোন আলাদা আইন নেই। তারা আরও বলে যে বাংলাদেশে পুরুষদের একটি বিশাল অংশ নারী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য চারটি আইনের উল্লেখ করা অবশ্যক। ১। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ ২ । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ৩। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ ৪। পারিবারিক সহিংসতা নিরোধ আইন, ২০১০ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অনুসারে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হলে পুরুষ কিংবা স্ত্রী যেই হোক এই আইনের মাধ্যমে মামলা করতে পারবে। এই আইনের 323 ধারা, 324 ধারা, 325 ধারা 326 ধারা অনুসারে শারীরিকভাবে নির্যাতিত পুরুষ কিংবা স্ত্রী মামলা করতে পারবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুসারে কেবল নারী ও শিশু যৌতুকের জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হলে মামলা করতে পারবে। পুরুষ এ আইন অনুসারে কোন মামলা করতে পারেনা । নারীদের জন্য দণ্ডবিধিতে প্রতিকার থাকা সত্ত্বেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করার সুযোগ আছে শুধু মাত্র যৌতুকের জন্য নির্যাতনকে প্রতিরোধ করার জন্য। বাংলাদেশ যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ কিন্তু যৌতুকের জন্য পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা খুবই বিরল। আর যদি নির্যাতনের শিকার হয়ও তবে দণ্ডবিধি অনুসারে প্রতিকার পেতে কোন বাধা নেই। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুসারে স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়েই মামলা করার অধিকার রাখে।এই আইন অনুসারে বিবাহ বলবৎ রাখার শর্তে বিবাহের যে কোন পক্ষ যদি যৌতুক দাবি করে তাহলে যে কোনো পক্ষই মামলা করার অধিকার রাখে সুতরাং এই আইন অনুসারে নারীরা যেমন মামলা করতে পারবে ঠিক পুরুষও তেমন মামলা করতে পারবে সুতরাং এই আইনের ভিতরে নারী-পুরুষ কোন বৈষম্য নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিচারক, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষ মনে করে যে, এই আইন অনুসারে কেবল নারীরাই মামলা করতে পারবে। পারিবারিক সহিংসতা আইন, ২০১০ অনুসারে কেবলমাত্র নারী এবং শিশুরাই মামলা করতে পারে। সত্যিকার অর্থে এই আইনের অধীনে মামলা করলে আসামির কোন সাজা হয় না বরং আদালত আসামিকে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য একটি আদেশ প্রদান করে। এই আদেশ ভঙ্গ করলেই কেবল তাকে শাস্তি দেওয়া যায় সুতরাং এই আইনটা অনেক দুর্বল আইন। এই আইনে মামলা হয় না বললেই চলে। মূলত বিবাহ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কিভাবে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা যায় এ কথা চিন্তা করেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সত্যিকার অর্থে পুরুষদের অভিযোগ হলো তারা নারী কর্তৃক শারীরিক নয় বরং মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। মানসিকভাবে নির্যাতিত হলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোনো প্রতিকার না থাকলেও মানসিক নির্যাতনে অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারে। আর যদি কোন পুরুষ, স্ত্রী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬ ধারা অনুসারে প্রতিকার পেতে পারে। শেয়ার করে টাইমলাইনে রেখে দিন। অন্যদের জানার সুযোগ তৈরি করুন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: