ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিকে কারাদণ্ড দেওয়ায় প্রত্যাহার হতে পারেন ইউএনও-এসিল্যান্ড

বিশেষ প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৪ ২৩:৩৫

বিশেষ প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৪ ২৩:৩৫

নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন

তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার জেরে দৈনিক দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিহাবুল আরিফকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হতে পারে।

গত ৫ মার্চ ঘটে যাওয়া এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রবিবার নকলায় সরেজমিন তদন্তে যান তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক। গতকাল সোমবার সকালেও কারাফটকে সাংবাদিক রানার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসকের বক্তব্যও নিয়েছেন। এরপর ঢাকায় ফিরে তিনি তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, যে প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক রানাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার অন্যতম শর্ত, অভিযুক্ত নিজে তার দোষ স্বীকার করতে হবে। অথচ এ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, তাকে আটকের পর জোর করে চাপ প্রয়োগ করে অপরাধ স্বীকার করানো হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবাদিক রানার বিরুদ্ধে তারা যেসব তথ্য পেয়েছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুযোগ ছিল। অথচ সেটি না করে ইউএনও নির্দেশ দিয়ে এসিল্যান্ডকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিয়েছেন। এতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। এ ঘটনায় ইউএনও-এসিল্যান্ড দু’জনকে শিগগিরই প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন কর্মকর্তা পদায়ন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার জানান, গত মঙ্গলবার শফিউজ্জামান তার ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী শীলার কাছে দিয়ে রিসিভড কপি চান। ওই কর্মচারী তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর শফিউজ্জামান আবার তার কাছে অনুলিপি চান। পরে শফিউজ্জামান জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। এতে ইউএনও আরও ক্ষুব্ধ হন এবং নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

এদিকে গতকাল নকলা ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক রানাকে সাজার নথির অনুলিপি রবিবার রাত ১১টায় নকলা থেকে শেরপুর রেকর্ড রুমে এলেও গতকাল সন্ধ্যার পর তা হাতে পান রানার আইনজীবী। এ কারণে গতকালও আপিল করতে পারেননি আইনজীবী।

আপিল করতে না পারার বিষয়ে সাংবাদিক রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, সাজার নথি নকলা থেকে শেরপুর রেকর্ডরুমে আসে রবিবার রাত ১১টায়। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এ কারণে আমরা আপিল করতে পারিনি। আশা করি মঙ্গলবার আপিল করব।

এদিকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। তারা এভাবে অবাধ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নষ্ট ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সোমবার পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: