কেশবপুরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ.এস.এইচ.কে সাদেকের ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

অলিয়ার রহমান | প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৫

অলিয়ার রহমান
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৫

ছবিঃ নিউজ

অলিয়ার রহমান,কেশবপুর প্রতিনিধিঃ


কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে সাবেক সফল শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য প্রয়াত এ.এস.এইচ.কে সাদেকের ১৬ তম মৃত্যুবাষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল ৯ সেপ্টেম্বর সকালে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচ এম আমির হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়, সদস্য মশিয়ার রহমান দফাদার, উপজেলা যুবলীগের আহŸায়ক বি এম শহিদুজ্জামান শহিদ, উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আহŸায়ক মুনছুর আলী, পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুকুল, সুফলাকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মনি প্রমুখ। দোয়া পরিচালনা করেন কেশবপুর জামে মসজিদের পেশ ঈমাম হাফেজ মাওঃ খলিলুর রহমান।
উল্লেখ্য, ৯ সেপ্টেম্বর ছিল সাবেক সফল শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য প্রয়াত এ.এস.এইচ.কে সাদেকের ১৬ তম মৃত্যুবাষিকী। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তার কেশবপুরস্থ বাসভবনে সকাল ৭টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ৭৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল যশোরের কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের একটি সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এই গুনী ও কীর্তি সন্তানের জন্ম হয়। তার প্রকৃত নাম আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক। তার পিতার নাম ইয়াহিয়া সাদেক (যুগ্ম কমিশনার), মাতা আসগারুন্নিসা সাদেক। ০৭ ভাই ও ০২ বোনের মধ্যে এ.এস.এইচ.কে সাদেক ৩য়। এ.এস.এইচ.কে সাদেক ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ পাস করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অধিনস্ত কুইন্স কলেজ থেকে অর্থনীতি ও শাসনতন্ত্র বিষয়ে এবং ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের উইলিয়াম কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সি.এস.পি) ক্যাডারে যোগদান করেন। ১৯৫৯-৬১ পর্যন্ত মহাকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান গর্ভনরের সচিব হন, তিনি প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বাধীনতার সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগীতাসহ দেশে, বিদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সর্বশেষ দেশের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে রাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক ভাবে নানা স্বীকৃতে তিনি ভুষিত হন। কর্মক্ষেত্রে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত সকল প্রকার লোভ লালসার উর্ধে থেকে সততার পরাকাষ্ঠায় নক্ষত্রের মতো এক কর্মযোগী মানুষ ছিলেন এ.এস.এইচ.কে সাদেক। তিনি অন্তরে যা লালন করতেন, বিশ্বাস করতেন, ব্যক্তিজীবনে তা বাস্তবে প্রতিফলনের চেষ্ঠা করতেন। তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার প্রয়াসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বাসিত হয়ে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৯২ সালে বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মনোনিত হন। সল্প সময়ের ব্যবধানে দলীয় রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে যশোর- ৬, জাতীয়- ৯০ কেশবপুর আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন দেন এবং তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসন থেকে জয় লাভ করেন। ৯৬ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষাক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতির সাথে সমন্বয় রেখে দেশের সকল ফলাফলে ‘জিপিএ’ সিস্টেম চালু করার পাশাপাশি সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল আকাশ ছোঁয়া। পশ্চাতপদ কেশবপুর উপজেলার সকল ক্ষেত্রে তাঁর হাত দিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়।
তিনি ২১ ফেব্রæয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃতি আদায় এবং সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০১০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অমায়িক, ন¤্র, ভদ্র এবং কখনো পরনিন্দা করতেন না। কখনো অন্যের গালমন্দ করে নিজেকে হাইলাইট করেননি। তিনি কাজে বিশ্বাসী ছিলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করার জন্য সবসময় সোচ্চার থাকতেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে তিনি সবসময় খুব কঠোর ছিলেন। অবৈধ কোনো নিয়মনীতি তিনি কখনো মেনে নেননি বা প্রশ্রয় দেননি। তাই কিছু লোভী বা স্বার্থান্বেষী মানুষ তাঁর প্রতি ছিল বিদ্বেষ মনোভাবাপন্ন। তবে পরবর্তীতে তিনি তা বুঝতে পেরে তাদেরকে এড়িয়ে চলেছেন। আসলে তাঁর মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শচেতনা ও দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব যেটা একজন আদর্শ নেতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা উচ্চমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।
২০০১ সালে সারাদেশে আওয়ামী লীগের পরাজয় হলেও তিনি এমপি হয়েছিলেন কারণ তাঁর কাজ-কর্ম ও উন্নয়ন ছিল কেশবপুরবাসীর কাছে অভূতপূর্ব। পরবর্তীতে ১/১১ ধরপাকড়ের সময় তাঁর সাবেক কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাঁর গায়ে কোনো কলঙ্ক লেপন করতে পারেনি কেউ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এ মহান নেতার আকস্মিক মৃত্যুতে কেশবপুরবাসী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে তাঁর স্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক যশোর-৬ (কেশবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মরহুম এ.এস.এইচ.কে সাদেক ও ইসমাত আরা সাদেক ব্যক্তিগত জীবনে দু’টি সন্তানের জনক-জননী। পুত্র তানভীর সাদেক (কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার), মেয়ে নওরীন সাদেক (স্থপতি)।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: