মণিরামপুরে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম এর বিরুদ্ধে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি টাকা দূর্নীতির অভিযোগ 

মণিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৫

মণিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৫

ছবি - অধ্যক্ষ রেজাউল করিম।

মণিরামপুরপ্রতিনিধি।। মণিরামপুরে এক ক্ষমতাধর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম রেজাউল করিম। যার কাছে অনিয়মই নিয়মে পরিনত হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এই ক্ষমতার দাপটে সরাকে ধরা জ্ঞান করতেন তিনি। যখন যেখানে ইচ্ছা হয়েছে, হয়েছেন প্রধান আবার বাগিয়ে নিয়েছেন সভাপতির পদটিও। করেছেন লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্য। বর্তমানে তিনি স্কাউটস এর উপজেলা সম্পাদকের পদেও আসীন। গত ১৫ বছর ক্ষমতার অপব্যবহার করে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আকড়ায় পরিনত করেছেন তিনি। বর্তমানে যার একটির সভাপতি এবং অপরটির প্রধান তিনি।

সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে রোজার ছুটির মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহনে বাধ্য করেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। পরীক্ষা চলাকালিন খাতা কেড়ে নেয়ায় ক্ষোভে ও লজ্জায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে এলাকা। নিজের খেয়াল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইচ্ছামত বদল করে হয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে মোটা অংকের টাকা হজমেরও অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

জানাযায়, রামনাথপুর গ্রামের কওছার আলীর ছেলে রেজাউল করিম উপজেলার নেংগুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদানের কয়েক বছর পরেই সহকারি প্রধান হিসেবে উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন। পরে একই প্রতিষ্ঠানে প্রধান হন তিনি। অনেকেরই ধারনা নিয়োগ বানিজ্য করতেই ২০১৪ সালে চলে যান পূর্বের কর্মক্ষেত্র নেংগুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজে। সেখানে একাধিক নিয়োগ বানিজ্য করেন তিনি। এমনকি উপজেলার খাটুরা গ্রামের মৃত. আবুল হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলামকে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই রেজাউল করিম।

ভূক্তভোগি আসাদুল ইসলাম জানান, তিনি সমাজ বিজ্ঞানে নিবন্ধনধারি ছিলেন। ২০১৫ সালে নেংগুড়াহাট স্কুল এ্যান্ড কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে সহকারি শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তিনি আবেদন করলে তৎকালিন প্রধান শিক্ষক রেজউল করিম নিয়োগের বিনিময়ে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তার দাবির প্রেক্ষিতে রাজগঞ্জ এলাকার জাহাঙ্গির আলম ও ইব্রাহিম খলিল নামের দুই প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে ২০১৫ সালের ২৮ জুন ১০ লাখ টাকা প্রদানের পর একই সালের ১০ জুলাই নিয়োগ বোর্ড করেন।

এরপর বাকি ৫ লাখ টাকা প্রদানের পর প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত তাকে একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হলে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে যান তিনি। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে যোগদান করানো হয়নি। এক পর্যায়ে যোগদান করতে না পেরে টাকা ফেরত চাইলে আজ-কাল বলে আজ অবধি টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষর রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, রেজাউল করিম সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও তাঁর সহধর্মীনি তন্দ্রা ভট্টাচার্যের আশীর্বাদ তুষ্ট এবং কাছের লোক হওয়ায় তিনি অভিযোগ করার সাহস পাননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১৯ সালে ফের গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। পরে নেগুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি হন তিনি। ফের সভাপতি হয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ৪ কর্মচারি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে রোজার ছুটির মধ্যে নির্বাচনী পরিক্ষায় (এইচএসসি) অংশগ্রহনে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন তিনি। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও রেজাউল করিমের ভয়ে কেউ টু-শব্দ করতে পারেনি। এই পরিক্ষা চলাকালে খাতা কেড়ে নেয়ায় সাবিনা নামের এক শিক্ষার্থী চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসির মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষক রেজাউলের বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস জানান, সরকারি নির্দেশনা মতে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরিক্ষা গ্রহন পূর্বক ফলাফল প্রকাশের দিন ধার্য ছিল। গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে সম্পূর্ন অনিয়ম করেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে অধক্ষ্য রেজাউল করিম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের মৌখিক অনুমতি নিয়ে তিনি পরীক্ষা নিয়েছেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: