মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের কাছ থেকে ২ বছরে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৯

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৯

ছবি- মণিরামপুর হাসপাতাল

মনিরামপুর প্রতিনিধি।। চিকিৎসা সেবা নিতে সরকারের নির্ধারিত ফিসের পরিবর্তে রোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে তিন টাকা এবং ভর্তি রোগিদের কাছ থেকে ১০ টাকা নেওয়ার। অথচ বহির্বিভাগে চিকিৎসা টিকিট নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা এবং ভর্তির জন্য ২০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. তন্ময় কুমার বিশ^াস যোগদানের পর থেকে এই অতিরিক্ত ফিস আদায় করা হচ্ছে। সেই হিসেবে গত দুই বছরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।

জানাযায়, সরকারি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ সংশোধিত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বহির্বিভাগে তিন টাকার টিকিট এবং ভর্তির জন্য পাঁচ টাকার টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিন রোগিদের কাছ থেকে এ টাকা(টিকিট বিক্রির) আদায়ের পর কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিবেন। ডা.তন্ময় কুমার বিশ^াস কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হয়ে মনিরামপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার হিসেবে যোগদান করেনে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যোগদানের পর ডা. তন্ময় কুমার বিশ^াস সরকারের নির্ধারিত চিকিৎসা টিকিটের মূল্য কয়েকগুন বৃদ্ধি করেন। সেই থেকে বহির্বিভাগ এবং ভর্তি রোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। মঙ্গলবার টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে ছিলেন অফিস সহকারি হাবিবুর রহমান ও ওয়ার্ডবয় ইমান হোসেন। বুধবার দায়িত্বে ছিলেন আয়া তাসলিমা খাতুন ও ওয়ার্ড বয় ইমান হোসেন। এ সময় লাইনে থাকা রোগিদের নাম রেজিষ্ট্রিবুকে অন্তর্ভূক্ত করে ১০ টাকা করে আদায়ের পর চিকিৎসা টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রেজিষ্ট্রিবুকে লেখা হচ্ছে তিন টাকা। এ সময় কথা হয় দত্তোকোন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা জয়নুল আবেদীনের সাথে। তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারিত তিন টাকার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে ১০ টাকা পরিশোধ করে টিকিট নিতে হচ্ছে। এটা দু:খজনক। আবার হরিনা গ্রাম থেকে আসা গৃহবধু মরিয়ম বেগম বলেন, চিকিৎসার জন্য সাত টাকা বেশি নিলেও কিছু করার নেই তাদের। বেশি টাকা আদায় করে রেজিষ্ট্রিবুকে তিন টাকা লেখার বিষয়ে অফিস সহকারি হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে আদায় করা হচ্ছে। হাবিবুর রহমান জানান বিহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচশ রোগিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে রোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে তিন হাজার পাঁচ’শ টাকা। মাসে আদায় হয় এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। বিগত দুই বছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। অপরদিকে জরুরী বিভাগ থেকে রোগী ভর্তি করে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে সরকারি পাঁচ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ কুমার বসু ও ডা. ফাতেমা খাতুন জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ২০ টাকা নিয়ে রোগি ভর্তি করা হয়। ৫০ শয্যা থাকলেও মাঝে মধ্যে রোগির চাপ থাকে অত্যন্ত বেশি। সব মিলিয়ে মহিলা, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৬০ জন রোগি ভর্তি করা হয়। সে মোতাবেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় নয়’শ টাকা। যা দুই বছরে হয় ছয় লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
অবশ্য গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত জরুরী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. রাফেজা খাতুন ও ওয়ার্ডবয় আক্তার হোসেন। তারা জানান, ওয়ার্ডসমুহে বুধবার ৭৫ জন রোগি ভর্তি রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. তন্ময় বিশ^াস অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন নিয়ে অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকা থেকে চার হাজার করে প্রতিমাসে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে বেতন দেওয়াসহ আনুসঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয়। তবে যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও মন্ত্রনালয়ের কোন অনুমোদন নেই। স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য এস এম ইয়াকুব আলী বলেন, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর সত্যতা মিললে কোনপ্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: