মণিরামপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৮

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৮

 ফাইল ফটো।

মনিরামপুর (যশোর) ॥ মণিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ড বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মৃত ব্যক্তির নামে, ভুয়া ব্যক্তির নামে ও দীর্ঘদিন যারা প্রবাসে আছেন তাদের নামে কার্ড বরাদ্দ করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর বাজ্জাক এর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিহরনগর ইউনিয়নের বড়চেতলা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী আছিরোন নেছা মারা গেছেন সাত মাস আগে। অথচ মৃত আছিরোন নেছার নামে ভিজিএফ কার্ড (নং ১৩১০) বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। আবার কোলা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে সাকিব হাসান তিন বছর আগে পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়াতে। সাকিবের নামে কার্ড নং১২৪৪) বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। আলমগীর হোসেন (কার্ড নং ১২৬২), শাহাবুদ্দিন আহমেদ (কার্ডনং ১৩৫৩), সুমন হোসেন (কার্ডনং ১৩৯০), সায়ফুল ইসলাম (কার্ড নং১৩৭৯)ও রয়েছেন বিদেশে। অথচ তাদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু সাবিক হাসান নয়, আলমগীর হোসেন, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সুমন হোসেন, সায়ফুল ইসলামও রয়েছেন বিদেশে। অথচ তাদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য হরিহরনগর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৯০০ ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ভুয়া নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে অধিকাংশ চাল আত্মসাত করেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সরকার অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেন। সে হিসেবে উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নে এক হাজার নয় শ কার্ড বরাদ্দ হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী, ভুয়াব্যক্তি এবং ধনাঢ্যদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে অধিকাংশ চাল আত্মসাত করেন।

উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের বড়চেতলা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী আছিরোন নেছা মারা গেছেন সাত মাস আগে। অথচ মৃত আছিরোন নেছার নামে ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। কোলা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে সাকিব হাসান তিন বছর আগে পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়াতে। তার নামেও কার্ড বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বড়চেতলা গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুর রহমান, শহর আলীর স্ত্রী মুন্নি বিবি, তকব্বর আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন, আবু তালেবের স্ত্রী রোকেয়া পারভীন, কোলা গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম, সোলায়মান গাজীর স্ত্রী নাছিমা খাতুন, আতিয়ার রহমানের স্ত্রী রেহেনা খাতুন, তাজপুর গ্রামের মামুন শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম, অহেদ আলীর ছেলে আব্দুস সালাম, ফজর আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল কাদের, জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝরনা বেগম, মফিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল বারিকসহ অনেকের নামে কার্ড বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়। অথচ এসব ব্যক্তিদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এসব ভুয়া নাম দিয়ে সমুদয় চাল আত্মসাত করেন। রেজাউল করিমের অভিযোগ এ ওয়ার্ডের তিনি সদস্য হলেও তার কাছ থেকে তালিকা নেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি সদস্য রেজাউল করিম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ঝর্না বেগম ও গ্রাম পুলিশ সুজন হোসেনের দেওয়া তালিকা অনুসারে কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হয়। তবে মহিলা সদস্য ঝর্না বেগম ও গ্রাম পুলিশ সুজন হোসেন জানান, তারা এ তালিকার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের দেওয়া ভিজিএফ কার্ডের তালিকা যাচাই বাছাই না করেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদ অনুমোদন করেন। এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার বলেন, স্বল্প সময়ের কারণে তালিকা যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে এলাকার ভূক্তভোগীদের পক্ষ থেকে ইউপি সদস্য রেজাউল করিম ২৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ভিজিএফ নিয়ে অনিয়ম এবং দুর্নীতি কোনো অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: