ওদের মুখে ভোটের অধিকার এবং জনগণ শব্দটি খুবই বেমানান্ : তবুও বলতে বলতে মুখে ফ্যানা!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৪

ছবি সমসাময়িক
আনোয়ার পারভেজ অনুজ।। বেশি ইতিহাস বলতে পারবোনা,তবে ছোট বেলায় রেডিওতে শুনতাম হ্যাঁ-না ভোট। আর সেই কথিত ভোটে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা গণহারে এবং বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী। এরপর সর্বদলীয় বা গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় জাতীয় পার্টির সরকার। অর্থাৎ জাতীয় পার্টিও ক্ষমতা আড়কে থাকতে সব ধরনের চেষ্টা করেছিল। এরপর ১৯৯১ সালে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলো। ৫ বছর পরে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের চেষ্টা করলো বিএনপি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির অধীনে লজ্জাজনক নির্বাচন করার মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে গণআন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পূণরায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামীলীগ সরকারের মেয়াদ শেষে কোন আন্দোলন ছাড়াই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া হয় এবং আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিন্দু পরিমাণ চেষ্টা করেনি। যারফলে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন তথা ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৬ সালে কিন্তু আবারো তারা ক্ষমতা আকড়ে ধরতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখে অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকার জন্য ভূয়া ভোটার থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিজেদের ইচ্ছা মতো। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দুই বছর পরে ২০০৮ সালে সকল দলের অংশ গ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করে। এরপরের ইতিহাস তো সকলেই জানে। ২০১৪ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে বিএনপি নেত্বাধীন জোট। দেশে তৈরী হয় ভয়ংকর পরিস্থিতি। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচন করেই সরকার গঠন করে ফেলে। তখনও গণ আন্দোলন চলমান ছিল এবং আন্দোলন চালিয়ে গেলে আওয়ামীলীগ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হতো,ঠিক ১৯৯৬ সালে বিএনপি যেমন বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি নেতা মীর্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন মিলে আন্দোলন প্রত্যাহার পূর্বক আওয়ামীলীগ সরকারকে ৬ মাসের সময় দেয় পূণরায় ভোট দিতে। আর এই ৬ মাসের মধ্যেই আওয়ামীলীগের থিংক ট্যাংকগুলো ঠিকই সব সেক্টরে নিজেদের লোক বসিয়ে সরকারকে শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়ে যায়। যারফলে আওয়ামীলীগ সরকার খুবই শক্ত অবস্থান তৈরী করে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পেয়ে যায়। আবারো মেয়াদ শেষ হলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে এক নতুন এবং বিষ্ময়কর সিস্টেমে নির্বাচন সম্পন্ন করে আবারো ক্ষমতাসীন হয় এবং অদ্যবধি বহাল আছে। এই সরকার বিরোধী আন্দোলন কখনো জোরদার করতে পারেনি বিএনপি। এর কারণ হিসেবে অনেকেই সন্দেহ করেন যে, বিএনপির নীতি নির্ধারকের মধ্যে সরকারের গুপ্তচর আছে। আর এজন্য সঠিক কোন কর্মসূচী দলটি দিতে ও বাস্তবায়নে বারংবার ব্যর্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। উল্লেখিত ঘটনাবলী থেকে জানাযায় এ যাবতকালের ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামীলীগ ২০০১ সালে স্বেচ্ছায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল কিন্তু বিএনপি একবারও স্বেচ্ছায় নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়নি বরং ১৯৯১ সালে ও ২০০১ ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা আকড়ে ধরতে সব ধরনের চেষ্টা করেছিল। আবার আওয়ামীলীগ একবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুইবার নিরপেক্ষ ভোট দেয়নি। তাহলে রেকর্ড বলছে শেখ হাসিনা তিনবারে একবার নিরপেক্ষ ভোট দিয়েছেন আর বিএনপি দুইবারই ক্ষমতা আকড়ে ধরতে সব ধরনের চেষ্টা করেছে। তাহলে কেন এবং কি কারণে এই দুটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ তোলে সেটা আমার ক্ষুদ্র মাথায় ধরছেনা। বিএনপি তো ক্ষমতায় গেলে স্বেচ্ছায় নিরপেক্ষ ভোট দেয়নি কখনো আবার আওয়ামীলীগ একবার নিরপেক্ষ ভোট দিলেও পরপর দুইবার জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির দেখানো পথেই রয়েছে। এছাড়া এই দুই দলের বা অন্যান্য ছোট খাটো দলের প্রধান থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারা কথায় কথায় জনগণ জনগণ বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তোলেন কিন্তু জনস্বার্থে বিএনপির কোন আন্দোলন তো আজ পর্যন্ত দেখতে পেলামনা। উভয় দলের মুখে শোনা যায় জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কথা কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার হরণেই তো এরা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রাজনৈতিক সংগঠন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: