ডেসটিনি মামলার রায়: প্রতারকদের জন্য সতর্কবার্তা

মোসাঃ রহিমা আক্তার।। | প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২ ০৬:২৩

মোসাঃ রহিমা আক্তার।।
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২ ০৬:২৩

মোসাঃ রহিমা আক্তার

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে আদালত কর্তৃক দণ্ড প্রদানের ঘটনাটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে যারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে তাদের জন্য তো বটেই, সংশ্নিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্যও একটা সতর্কবার্তা হতে পারে। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমএলএম ব্যবসার নামে গ্রাহকদের ১৮শ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ঢাকার একটি আদালতে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে যথাক্রমে ১২ বছর ও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে একই কোম্পানির আরও ৪৪ জন নানা মেয়াদে সাজা পেয়েছেন। এর পাশাপাশি আসামিদের মোট ২৩শ কোটি টাকার অর্থদণ্ডও দিয়েছেন আদালত।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাসে ঢাকার কলাবাগান থানায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন প্রজেক্টের গ্রাহকদের মোট চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে এবং ট্রি প্লানটেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এদের মধ্যে কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনকে বৃহস্পতিবার শাস্তি প্রদান করা হলো।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি সরকারের সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত হলেও তার ব্যাংকিং কার্যক্রম করার কোনো অনুমতি ছিল না। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৪৬ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে আট লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে, যা এক ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম। এ কাজটা তারা করে সমবায় অধিদপ্তর ও দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম অনুমোদন ও দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে। শুধু তা নয়, ডেসটিনির কর্ণধাররা ট্রি প্লানটেশন, এভিয়েশনসহ আরও বহু কোম্পানি খুলে তাদের প্রতারণার ফাঁদ বহু গুণ বিস্তৃত করে। এক পর্যায়ে ডেসটিনির গ্রাহক ঠকানোর বিষয়টি যখন প্রতারিত গ্রাহকদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে আসে এবং এ নিয়ে দেশব্যাপী একটা শোরগোল ওঠে, তখন ওই সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর হুঁশ হয়। এর ধারাবাহিকতায় একদিকে দুদক মাঠে নামে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়। এখানে আরও উল্লেখ্য, এর আগেও যুবক, ইউনিপে ইত্যাদি এমএলএম কোম্পানি কর্তৃক লাখ লাখ গ্রাহকের প্রতারণার খবর সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়। সেই সময়ে এমনকি ঢাকা শহরে যুবকের হাতে প্রতারিত মানুষেরা সংস্থাটির হাতে আমানত হিসেবে গচ্ছিত তাদের কোটি কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে মিছিল-সমাবেশও করেন। কিন্তু এসব দেখেও একই রকম প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ডেসটিনির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের আগে কোনো সংস্থাই তৎপর হয়নি। যদি যুবকের কার্যক্রম বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ডেসটিনিকেও কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হতো, তাহলে হয়তো বহু গ্রাহককে আজ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে হতো না। মনে রাখতে হবে, আদালতের রায় কার্যকর হলে ডেসটিনির খুব অল্পসংখ্যক গ্রাহকই তাদের টাকা ফেরত পাবেন। কারণ, সমকালেরই শুক্রবারের আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রাহকরা ডেসটিনির কাছে পাবেন মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা, আর কোম্পানিটির স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদের মূল্য হবে মাত্র ৫৯০ কোটি টাকা।

অভিযোগ আছে, ডেসটিনির মতো কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সরকারের আমলে অসাধু উপায়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাত করে তাদের প্রতারণার জাল বিস্তার করে গেছে। এ ফাঁদে পা দিয়েছে প্রধানত সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষেরা, যারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালানোর জন্য কিছু বাড়তি আয়ের আশায় অনেক কষ্টে জমানো অর্থ ওই সব কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছেন। যা হোক, ডেসটিনির মতো আরও বহু এমএলএম কোম্পানি এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের শেষ সম্বলটুকু হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে আসে। আমাদের প্রত্যাশা, আলোচ্য রায়ের পর সমবায় অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ যেসব সরকারি সংস্থার দায়িত্ব এসব প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বন্ধ করা, তারা তাদের দায়িত্ব পালনে আরও আন্তরিক হবে। এর পাশাপাশি মানুষের মাঝে এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতারণা সম্পর্কেও সচেতনতা তৈরিতে সচেষ্ট হবে।

লেখক : মোসাঃ রহিমা আক্তার সৌদি প্রবাসী, কলামিস্ট।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: