উদ্ভট উটের পিঠে চলছে কি ছাত্ররাজনীতি ?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩০

ছবি সমসাময়িক
 

মোঃ রিয়াজ উদ্দীন রেজা।। ছাত্ররাজনীতি হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিয়োজিত, অধিকার আদায়ে সোচ্চার, ইতিবাচক সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত, ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে থেকে সর্বদা হীনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী, শিক্ষাঙ্গনে দূর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধে অকুতোভয়, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নীতিবান আর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির বাতিঘর বা কারখানা। কিন্তু বর্তমানে সময়ে ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞা উপরোল্লেখিত সংজ্ঞা থেকে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটেছে। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে আগমন এই ব্যত্যয় এর অন্যতম কারণ। এছাড়া নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ের দরুনও নানাবিধ অরাজকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ছাত্ররাজনীতি। যদিওবা চলমান রাজনীতির অশুভ ধারা সুশীল সমাজের কিছু সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের দৃষ্টান্ত স্বরূপ। তবুও বলাবাহুল্য এটাই দিনদিন সমস্যায় পরিণত হয়ে পড়ছে। নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ এগুলোও ফাঁকা বুলিতে পরিণত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে , জানাকে মানায় পরিণত না করতে পারলে সে জানা অর্থহীন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম সেভাবে জানছেই না কিছু। আর এই না জানা রাজনীতির চর্চাটাই কতিপয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রভাবক। একজন ছাত্র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সমাজ গঠনের কারিগর। আর সেজন্য একটা সমাজ কিভাবে পরিবাহিত হয় , পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে সমুদয় জ্ঞান তাকে রাখতে হবে। ইতিহাস তাকে জানতে হবে, বিজ্ঞান তাকে আত্মস্থ করতে হবে, দর্শন তাকে ধারণ করতে হবে, অর্থনীতিটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। আর তাই এই বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান আহরণের স্বার্থে প্রচুর বই পত্র তাকে পড়তে হবে। পাশাপাশি দেশ ও বিশ্বের সম্পর্কে সমসাময়িক ধারণা রাখতে নিয়মিত পেপার পত্রিকা পড়তে হবে। রাজনীতি এমনি এক জায়গা , যেখানে প্রতিনিয়ত সবকিছু নতুন করে শিখতে হয়। সেজন্য শেখার প্রবণতা এখানে অপরিহার্য বিষয়। আমরা জানি, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সর্বপ্রাচীন ছাত্র সংগঠনটি হল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একাধারে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এর জন্য সংগ্রাম ও সাফল্যের পথপ্রদর্শক স্বরূপ। আর তাই বর্তমান ছাত্ররাজনীতির কতিপয় বিচ্যুতিগুলো নিরসনে ছাত্রলীগই পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় যেহেতু অদ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনীতির পথিকৃৎ। সেক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় রোধে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। আর তাই বর্তমান প্রজন্মের মাঝে জ্ঞান আহরণের ক্ষুধা জাগ্রত করে দিতে হবে। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় রোধে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি। বিশেষত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে যারা বিশ্বাসী, তারা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে। অনাগত প্রজন্ম যত বেশি জানবে তত বেশি শিখবে। যদিও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ বই পড়া থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় মুখ গুজে রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবুও এই সোস্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞান আহরণের উৎকৃষ্ট মাধ্যমে পরিণত করা যেতে পারে। এছাড়া অনলাইনে অসংখ্য বই এর পিডিএফ ভার্সন রয়েছে। সেগুলো ডাউনলোড এর মাধ্যমেও জ্ঞান আহরণ সম্ভব। প্রযুক্তির সুস্থ এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমাজে একটি সুন্দর, জ্ঞান নির্ভর রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব। তথাপি, বিপ্লবী বাংলার বিপ্লবী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সাংগঠনিক কর্মসূচির একটি হলো পাঠচক্র কর্মসূচি। ছাত্রলীগের প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে পাঠচক্র কর্মসূচি চালু রাখা অতীব জরুরি বলে মনে করি। যেখানে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন সহ মুক্তিযুদ্ধের নানাবিধ বই পাঠের মাধ্যমে কর্মী, শিক্ষার্থী তথা প্রজন্মের মাঝে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভবপর হবে। এছাড়া ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর নানাবিধ লেখা প্রকাশিত হবে। আর সেই প্রকাশিত ম্যাগাজিন ছড়িয়ে দিতে হবে সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যেমন অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম শর্ত, তেমনি অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মীকে দক্ষ রাজনৈতিক কর্মীতে রূপান্তরিত করতে বইপত্র পড়া অন্যতম উপায় স্বরূপ। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজনীতি অনাবিল শুভ্র, সুন্দর , সাবলীল করতে বর্তমান প্রজন্মের আমাদেরকে এক হয়ে প্রকৃত মুজিব আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে । তাহলেই ঘটবে রাজনীতির মানোন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক, একজন ছাত্রলীগ কর্মী, যশোর জেলা ছাত্রলীগ।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: