বাড়ির দেয়ালে নোনা কেন ধরে? নোনা ধরা রোধে করণীয় তা কি??

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫১

ছবি সমসাময়িক
  [gallery ids="999"]

দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক।। অনেক শখ করে নিজের দালানের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের রং করে থাকে মানুষ। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে, কিছুদিন পর কিংবা বেশ কয়েক বছর পর দেয়ালের রং ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায় এবং যেই রংই করা হোক না কেন এর উপর হালকা থেকে গাঢ় সাদা রঙের আস্তরণ পড়ে। এটাকেই নোনা ধরা বলা হয়ে থাকে। নোনা ধরার ফলে ইট বা পাথরের তৈরি দেয়ালে সাদা সাদা লবণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়, যা দেয়ালের সৌন্দর্য্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে।

লক্ষণ: -প্রথম প্রথম দেয়াল ঘেমে যেতে বা ভেজা ভেজা ভাব চলে আসতে দেখা যায় -এর কিছুদিন পরেই দেয়ালে সাদা সাদা আস্তরণ দেখা দেয় -পরবর্তীতে সাদা লবণের ভারী আস্তরণ দেখা দেয় এবং প্লাস্টার ঝরে ঝরে পড়তে থাকে নোনা ধরার কারণসমূহ: দালান নির্মাণে স্বল্প পোড়ানো ইট ব্যবহার করলে যে মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হয় সে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকলে বাড়ি তৈরির উপকরণ যেমন- বালি, সিমেন্ট, পানি প্রভৃতির মধ্যে লবনের পরিমাণ ২.৫{42d7c02d75ed8ad2566d5e0848d1e673e35e1703bc782a9c186d8d8d27235b37} এর বেশি হওয়ার কারণে সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাবে দেয়ালের মাঝের পানির লাইনে ছিদ্র দেখা দিলে দেয়ালে প্লাস্টার শুকানোর পূর্বেই অর্থাৎ ভেজা থাকা অবস্থায় দেয়াল রং করে ফেললে গাঠনিক ত্রুটির কারণে ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের অভাবে মেঝে এবং ঘরের মাঝের দেয়ালে সঠিকভাবে সিক্ততা স্তর না দেওয়ার ফলে নোনা রোধে করণীয়: বাড়ি নির্মাণের পূর্বেই নোনা ধরার বিষয়ক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ কেননা নোনা ধরার মূল কারণ সমূহই নির্মাণ সামগ্রী আর নির্মাণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল । সাধারণত দুই উপায়ে নোনা প্রতিরোধ করা যায়: -স্বাভাবিক উপায়ে -কৃত্রিম উপায়ে স্বাভাবিক উপায়: সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে: বাড়ি নির্মাণের পূর্বেই সে স্থানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বাড়ির চারধারে ভালো ড্রেইন স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন পানি জমে না থাকে কোথাও। ছাদে সঠিক ঢাল রাখতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি তাড়াতাড়ি রেইন ওয়াটার পাইপ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বৃষ্টির ঝাপটা থেকে রক্ষার জন্য দেয়ালে সানশেডের প্রয়োজন। আমরা জানি যে ইটের পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই বেশি। কাজেই বৃষ্টির পানি থেকে দেয়ালকে যতদূর সম্ভব দূরে রাখতে হবে। ইটের গাঁথুনির ফ্লাশ পয়েন্টিং করলে অতিরিক্ত পানি দেয়ালের গায়ে জমা হতে পারে না। অনেক সময় ছিদ্রযুক্ত দেয়াল (Cavity wall) দ্বারাও আর্দ্রতা দূর করা যায়। প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের মাধ্যমে: ঘরের মাঝে সব দেয়ালে সমানভাবে রোদের আলো প্রবেশ করতে পারে না, সেক্ষেত্রে নকশা তৈরির সময়ই যেসব দেয়ালে রোদের আলো কম পড়ে সেসব দেয়ালে সঠিকভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে বৃষ্টির পানি আর রোদের অভাবে দেয়ালটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে নোনা ধরার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই সূর্যতাপ এবং বাতাস চলাচলের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করতে হবে দালান। কৃত্রিম উপায়: গাত্রক পানি নিরোধক ব্যবস্থার মাধ্যমে: এই ব্যবস্থা দুই ভাবে হতে পারে, যেমন- বাইরের দিকের গাত্র এবং ভিতরের দিকের গাত্র। যেহেতু বাইরের দিক থেকেই পানি বুনিয়াদ বা কাঠামোতে প্রবেশ করে সেজন্য বাইরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা ভিতরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কার্যকরী। বাইরের দিকের গাত্রের সিক্ততা নিরোধক করার সহজতম ব্যবস্থা হচ্ছে, ইটের জোড়ায় মুখগুলো খুলে পয়েন্টিং করা এবং পরে ভাল করে প্লাস্টার করা। ভিতরের দিকে প্লাস্টারের ওপর সাধারণত মোম বা সিলিকেট দ্রবণ লাগানো হয়। তবে এই ব্যবস্থা ২-৩ বছর পর পর করতে হবে। পানি নিরোধক আচ্ছাদন সংযোজনের মাধ্যমে: বিটুমিন শিট, প্লাস্টিক শিট, মেটাল শিটের মাধ্যমে পানি প্রতিরোধী একটি স্তর গড়ে তোলা হয়। নোনা প্রতিকারের উপায়: বাড়ি নির্মাণের পর নোনা দেখা যাওয়া আমাদের দেশের আবহাওয়াতে বেশ কমন। একে তো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বছর জুড়ে সেই সাথে নির্মাণের সময়ে সতর্কতার অভাব। শখের বাড়িতে নোনা ধরে গেলে সেটা প্রতিকারের ব্যবস্থা করার কিছু উপায় রয়েছে। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (HBRI) দালানের নোনা ধরা প্রতিকারের জন্য HBRI-SP এবং HBRI-DP নামক দুইটি দ্রবণ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এদের ব্যবহারবিধি নিচে দেয়া হলো- দালানের যেসব স্থানে নোনা দেখা দিয়েছে সেই সব জায়গার রং, চুন ইত্যাদির প্রলেপ ভালভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজন বোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত স্থানে HBRI-SP তিন-চারবার এমনভাবে লাগাতে হবে যেন বালি সিমেন্টের আস্তরণটি সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়। একদিন অপেক্ষা করার পর HBRI-SP লাগানোর স্থানসমূহকে পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ভিজা আস্তরণকে ভালভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদি প্রলেপ প্রদান করতে হবে। দালানোর যেসব স্থানে HBRI-DP প্রয়োগ করতে হবে সেসব জায়গার রং, চুন, পুটিং ইত্যাদির প্রলেপ ভালভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। শুকনো আস্তরণে HBRI-DP এর দ্রবণ দিয়ে ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়। ৩ ঘন্টা অন্তর ৩/৪ বার HBRI-DP দ্রবণের আস্তরণ প্রয়োগ করতে হবে। একদিন পর পানি দিয়ে অতিরিক্ত HBRI-DP সরিয়ে ফেলতে হবে। এবং ভালভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদির প্রলেপ প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ একই উপায়ে প্রয়োগ করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। দালানের নোনা হলো দ্রবণীয় লবণের দ্রবণ হতে পানির বাষ্পীভবনের ফলে দালানের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবণের অধঃক্ষেপ। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র জলবায়ু, প্রবল বৃষ্টিপাত ও গাঁথুনিতে জমা পানির প্রভাবেই নোনা ধরে। নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, ছোপ ছোপ দাগ প্লাস্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না, নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়, কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়, প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পড়ে, সর্বোপরি দালানের সৌন্দর্য্যহানি ঘটে। তাই নোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা দালান তৈরির অংশ বলে গণ্য করা উচিৎ। আমাদের দেশের আবহাওয়াজনিত কারণে নোনা ধরা সমস্যাটি বহুলভাবে দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সকলের দালান নির্মাণের পূর্বে সতর্ক হওয়া জরুরি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: