
মোঃ মানছুর রহমান (জাহিদ)।। খুলনার প্রতন্ত উপকূল এলাকা পাইকগাছা- কয়রা উপজেলা। এ দুটি উপজেলায় ১৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে দুই শতাধিক কামার বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আবার অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ঝুঁকে পড়েছেন। আবার অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে বহুকষ্টে কোনমতে দিন যাপন করছেন।
বর্তমানে লোহার দাম বৃদ্ধি ও কামারদের তৈরি জিনিসপত্র আমদানি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগের মতো সেই সুদিন নেই এখন কামারদের। কামারেরা যুগ যুগ ধরে লৌহজাত দ্রব্যকে আগুনে পুড়িয়ে গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত দা, ছুড়ি, বটি, খুন্তি, কুড়াল, কোদাল, শাবল, কাঁচি ও লাঙ্গলের ফলা তৈরি করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও মেলায় বাজারজাত করে আসছে। বর্তমানে লোহার দাম বৃদ্ধি ও বিদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি হওয়ায় কামারদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক দশক আগেও উপকূল ও প্রত্যন্ত এই দুই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাস স্টান্ড ও গ্রাম গঞ্জে শত শত কামার এ পেশায় জড়িত ছিলো। যুগের ও আধুনিকতার বিবর্তনে কামার পেশা দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিগত সময় কামারেরা বসতবাড়ির অব্যব্যহৃত ও পরিত্যক্ত লোহা কম দামে ক্রয় করে আগুনে পুড়ে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাতের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে বসতবাড়ির ভাঙ্গা-চোরা লোহা ক্রয় করে বিভিন্ন ইস্পাত কারখানায় সরবরাহ করছে। যে কারণে কামারেরা পুরনো লোহা এখন আর পায়না। তাই কামারদেরকে বর্তমানে বেশি দামে লোহা ক্রয় করে জিনিসপত্র তৈরি করতে হচ্ছে। এতে তৈরি জিনিসপত্র হাট-বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ করা যায় । পাইকগাছা উপজেলার আগড়ঘাটা বাজারের কর্মকার দিলীপ বলেন, আগে সুদিন ছিলো, এখন আমাদের দুর্দিন। কাজ করে খেয়ে পড়ে থাকতে খুবই কষ্ট হয়ে যায়, তারপরেও বাপ-দাদার পেশা কে টিকিয়ে রাখতে কষ্ট হলেও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি।
কর্মকার মহসিন বলেন, সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা হয়তো আমাদের সেই সুদিন আবার ফিরে পেতাম। এ পেশার অন্যান্য অনেক কামাররা জানান, পরিত্যক্ত লোহা আগুনে পুড়িয়ে যেসব সামগ্রী বানানো হয়, তা বর্তমানে বাহিরের দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে যার কারণে এখন কামারদের তৈরি সামগ্রী কিনতে চায় না মানুষ। বর্তমানে দা ও কোদাল ছাড়া কামারদের তৈরি করা সামগ্রীর তেমন কোন চাহিদা না থাকায় আয় উপার্জন একেবারেই কমে গেছে। এলাকার বিভিন্ন সচেতন মহল জানান, দেশে কামার শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কামাররা হয়তো তাদের এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: