
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি।।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মাচনায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের কয়েকটি ঘরের মেঝে ধসে গেছে। উঠে যাচ্ছে মেঝের প্লাস্টার। ইতিমধ্যে দুটি ঘরের মেঝে ভেঙে নতুন ভাবে প্লাস্টারের কাজ করে দিয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। যদিও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি, এখনো কোনো ঘরের সমস্যার কথা তিনি জানেন না। নতুন মাটিতে ঘর করায় এবং মেঝেতে ঢালাই না দিয়ে প্লাস্টার করায় ঘরগুলোর এমন অবস্থা বলে দাবি বসবাসকারীদের। শনিবার সরেজমিন উপজেলার মাচনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৬টি ঘর ঘুরে সাতটি ঘরের মেঝে নষ্ট হওয়ার তথ্য মিলেছে। এসময় ৮-১০ জন শ্রমিককে ঘরগুলোতে নতুনভাবে কাজ করতে দেখা যায়। মাচনা প্রকল্পের ৮-১০টি ঘর তালাবন্ধ ফাঁকা পড়ে আছে। এখনো কেউ ঘরে উঠেননি বলে জানা গেছে। এছাড়া ভূমিহীন নয় এমন অনেকে ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ মিলছে। মণিরামপুরে ভূমিহীনদের জন্য ২৯২টি পাকা ঘর করে দিয়েছে সরকার। উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে প্রতি ঘরে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। যদিও উপকারভোগীদের কেউ কেউ দাবি করছেন, ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। নির্ধারিত টাকা ঘরের পিছনে খরচ করা হয়নি। তারা বলছেন, বাড়তি জায়গা না রেখে ঘরের দেয়াল বরাবর চাল দেওয়া হয়েছে। সানশেড নেই। বৃষ্টির সময় ঘরে থাকা যায় না। পানি ঢুকে সব ভিজে যায়। মাচনা প্রকল্পের বাসিন্দা বৃদ্ধা শুকজান বিবি বলেন, ৪-৫ দিন আগে বারান্দার মাইঝে ভাইঙে পা তলায় গেছে। তখন আমি পড়ে দেওয়ালে ঘা খাইছি। ঘরের ভিতরেও এরাম উঠে যাচ্ছে। সেসব জাগায় সিমেন্ট গোলায় দিছি। বৃদ্ধার দাবি, বালি ছিটিয়ে দিয়ে তার উপর হালকা খোয়া ছড়িয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। মাচনা প্রকল্পে ঢুকতে বাম হাতের প্রথম ঘরটি ফিরোজা বেগমের। ওই ঘরের ভিতরে ও বারান্দায় মেঝে ফেটে যাওয়ায় ৩-৪ দিন আগে পুরনো মেঝে সরিয়ে নতুন কাজ করা হয়েছে। ঘরের বারান্দার নিচে ভেঙে ফেলা মেঝের অংশবিশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আলেয়া খাতুন বলেন, দুইবার করে মাইঝে ভাঙিছে। কয়দিন আগে ঠিক করে দেছে। উর্মি বলেন, মেঝে গর্ত হয়ে গিছিল। তখন আমরা বেশ খানিকটা খুইচে একখন আদলা পাইছি। পরে ওই জায়গা ঠিক করে দেছে। আব্দুস সাত্তার বলেন, উপরতে লোক আইলো। তারা খুইছে দেখতি চালি আমার ঘরে দেখাই। দেখা গেছে মাইঝে কোনো ইট নেই। ঘরে লিন্টন দেয়নি। ঝড় আসলি ভাইঙে পড়তি পারে। ভয়ে থাকা যাচ্ছে না। এসময় কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ঘরে পানি ঢোকার অভিযোগ পেয়ে সব ঘরের দেওয়ালে একটি করে ইট গেঁথে দিচ্ছি। মাইঝে উঠে গেছে এমন একটা ঘরে কাজ করিছি। দুই থেকে আড়াই মাস আগে মাচনা প্রকল্পে নতুন ঘরে ওঠেন ভূমিহীনরা। এরই মধ্যে ঘরের মেঝে ফাটতে দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, কোনো ঘরের মেঝে ধসে যাওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। মণিরামপুরে কোনো ঘরে সমস্যা নাই। কাজ খুব ভাল হয়েছে। একপর্যায়ে এই কর্মকর্তা বলেন, মাটি কোথাও কম পড়ায় দুই একটা ঘরে এমন হতে পারে।ওগুলো ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, আমি নিজে যাচ্ছি। কোনো সমস্যা হলে সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: