ফিরে দেখা- ডা. মেহেদী হাসান এর করোনা রুগীর চিকিৎসা সেবার দিনগুলো

ডেস্ক।। | প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০০

ডেস্ক।।
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০০

ছবি- নিউজ ডেস্ক

স্মৃতির সরণি বেয়ে কেউ কেউ চলে যেতে পারে দূর থেকে বহুদূরে। সেই যাওয়া যদি হয় মানব কল্যাণে মানবের তরে। তবে এমন স্মৃতি বয়ে আসুক বারেবারে। বলছিলাম

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কৃতি সন্তান ডা. মেহেদী হাসান এর কথা। যার মানবিক সেবা ছাড়িয়ে গেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। মানবিক এই ডাক্তার মেহেদী হাসান ১৯৮৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ছায়াঢাকা সবুজ পল্লীগ্রামের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী পিতা- আলহাজ্ব জবেদ আলী সরদার ও মাতা- ফরিদা বেগমের কোলজুড়ে জন্মগ্রহণ করেন। ডা. মেহেদী হাসান অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ায় পিতামাতা ও ভাই বোনদের ইচ্ছাছিল ডাক্তার তৈরী করার। পরিবারের আশা ও নিজের আগ্রহে তিনি বিদেশে থেকে মেডিক্যাল ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসেন দেশ সেবায় সুনাম অর্জন করার জন্য।

তবে কে জানতো এই মেহেদী হাসানের মানবসেবা একদিন পৌঁছে যাবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণে। করোনাভাইরাসের প্রথম দিকে মহামারি প্রাদূর্ভাবে মানুষ যখন দিশেহারা। ভয়ে আতঙ্কিত সারা বিশ্ববাসী ঘর বন্ধি,
তখন যশোরের মানবিক ডাক্তার খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যাডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ এই চিকিৎসক (মেডিকেল অফিস) টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে নিরন্তর ছুটে চলেছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায়।

করোনার শুরুতেই ততকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ এক ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে ডা. মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেন নয়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর এডমিন ক্যাডারদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। তার চিকিৎসা সেবায় নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর এডমিন ক্যাডাররা সুস্থ হলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানের এডমিন ক্যাডাররা ডাক্তার মেহেদী হাসানের করোনার চিকিৎসা সেবা নিতে শুরু করে। এরপর তথ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তার চিকিৎসা সেবা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ গ্রহণ করেন। ততকালীন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে তিনজন ডাক্তার চিকিৎসার জন্য সিলেক্ট হয় তার ভিতরে ডা. মেহেদী একজন, পরবর্তীতে ডাক্তার বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয়। করোনার এই দূর প্রভাবে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে ডা. মেহেদী হাসানের নাম। মহামারীর এই করোনায় তখন যেন একমাত্র ভরসা ছিলেন ডা.মেহেদী হাসান। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুক ঢালাওভাবে প্রচার প্রচারণা হতে থাকে ডা. মেহেদী হাসান এর চিকিৎসার খবর। এর পর ফোন আসতে থাকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা দেশ বিদেশ থেকে।

নিজ এলাকার দরিদ্র থেকে শুরু করে যশোর জেলা পুলিশ এবং আপামর জনসাধারণ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার প্রতিনিধি এবং সারা দেশের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ও তাদের আত্মীয় সজন বাদ যাননি কেউ ডা: মেহেদীর টেলিমেডিসিনের ফ্রী চিকিৎসা থেকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসী করোনা আক্রান্ত রোগিদের ফ্রী চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন এই ডাক্তার। আবার সহযোগিতা করেছেন কখনো কখনো অসহায় রুগীর ফ্রী ঔষধ কিনে দিয়ে। এ পর্যন্ত তিনি নয় হাজার প্লাস করোনা আক্রান্ত রোগীকে সরাসরি ও টেলিমেডিসিনের আওতায় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন। যার মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার রুগীকে দিয়েছেন ফ্রী চিকিৎসা।

ইতিমধ্যে তার এই অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন গরীবের ডাক্তার খেতাব ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট(আইইইবি), যশোর পুলিশ, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এর থেকে সংবর্ধনা। ডা. মেহেদী হাসান বর্তমান ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ডা. মেহেদী নিজের এলাকার মানুষের কথা ভুলে যাননি। এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে তিনি চেষ্টা করেন পাশে থাকার। তরুণ এই চিকিৎসক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সহ এলাকার বহু ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার খরচ বহন করে চলেছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার পল্লী চিকিৎসকদের এবং বহু অসহায় রুগীর পাশাপাশি অসহায় মানুষের। তাঁর
আয়ের ৮০% ব্যয় করেন মানব সেবায়। ইতিমধ্যে এলাকায় মানুষের কাছে বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে এই মানবিক ডাক্তার।

ডাক্তার মেহেদী হাসান এর চিকিৎসা সেবার বিষয়ে কথা হয় ততকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার (বর্তমান পিএএ সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়) মোস্তাফিজুর এর সাথে তিনি বলেন ডা. মেহেদী একজন মানবিক চিকিৎসক। করোনা'কালে আমরা একটা মেডিক্যাল ইন্টারপোল গঠন করি সেই টিমে ডাক্তার মেহেদী হাসান অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর এডমিন ক্যাডারদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার জন্য। রাত দুইটা তিনটার সময় তাকে ফোন করে সবাই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে। পাশাপাশি দেশে বহু এডমিন ক্যাডার তার চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। আমি ডা. মেহেদী হাসান এর সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করি।

কথা হয় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি (বিপিএম-বার) হাবিবুর রহমান এর সাথে তিনি বলেন ডাক্তার মেহেদী হাসান যেভাবে করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দিয়েছেন তাতে সত্যিই আমরা তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ। রাত দুইটা তিনটা যেকোনো সময় তাকে ফোন করলে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা সেবা পেয়েছি। শুধু পুলিশ সদস্য নয় পুলিশ সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন পিতা-মাতা সন্তান প্রত্যেকেই তার কাছে ফোন করেছেন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। প্রত্যেকের ফোন তিনি ধৈর্যের সাথে রিসিভ করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।

গরিবের ডাক্তার খ্যাত মানবিক এই চিকিৎসক ও তার সহধর্মিণী ডাক্তার ফাহমিদা লিমা বলেন আমরা মানবসেবায় বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: