রাস্তায় চলে ‘প্রভাবশালী’ গরু, নাম বললেই দোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:১৫

ছবি সমসাময়িক
কিছুদিন আগে রংপুরের শাপলা চত্বরের কাছে দুর্ঘটনার শিকার হই। রিকশাচালকের কোনো দোষ ছিল না। হঠাৎই একটি গরু সামনে চলে আসায় রিকশা ব্রেক কষে। মুহূর্তে রিকশা থেকে নিচে পড়ে যাই। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে। কতজন যে দুর্ঘটনার শিকার হন তার ইয়ত্তা নেই। শাপলা চত্বরের পাশেই এক দোকানদার জানালেন, একটুর জন্য তিনি রক্ষা পেয়েছেন। তাঁর মোটরবাইকের সামনে গরু চলে এসেছিল। এ গরুগুলো কার? তিনি নিজের ও গরুওয়ালার নাম কোনোটাই বলার সাহস করলেন না। শুধু বললেন, ‘প্রভাবশালী একজনের গরু। নাম বলা যাবে না। নাম বললে আমার দোষ হবে, অসুবিধা হবে।’ শুধু শাপলা চত্বরের সামনে দল বেঁধে গরু হেঁটে বেড়াচ্ছে তা নয়। পুলিশ লাইনসের সামনে, গ্র্যান্ড হোটেলের মোড়ে, লালবাগ এলাকা, ট্রাকস্ট্যান্ড, চারতলার মোড়, খামার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ছেড়ে দেওয়া গরু দেখা যায়। তাহলে কি এই সড়ক মানুষ ও গরু উভয়ের জন্য? গরুর জন্য আলাদা ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে? ছেড়ে দেওয়া গরুর কারণে একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সারা জীবনের দুঃখের কারণ হতে পারে। আমি অটোরিকশা থেকে নেমে গরুর ছবি তুলছিলাম। অটোরিকশার চালক ছবি তোলা দেখে বললেন, ‘গরু না হয় বোঝে না, মানুষও কি অবুঝ?’ যাঁরা গরু ছেড়ে দেন, তাঁদের বিবেচনাবোধ আছে বলে মনে হয় না। আমরা যাঁরা গরু দেখে চুপ থাকি, তাঁদের নীরবতাও সড়কে গরুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের গরু দেখার কাজ আছে কি না, জানা নেই। তাই বলে সড়কে গরু স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে? রংপুর সিটি করপোরেশন সব দিক থেকে চরম অবহেলার শিকার। এ শহরে এখনো নগরবাসীকে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রায় ২০৭ বর্গকিলোমিটারের এ সিটি করপোরেশনের সব সড়কে এখনো সড়কবাতি নিশ্চিত করা যায়নি। ১০ বছর আগে সড়কের কাজ হলেও সড়কের ভেতরে আগের সব বিদ্যুতের খুঁটি আজও রয়ে গেছে। এই খুঁটিগুলোও সড়কে অনেক দুর্ঘটনার কারণ। মূলত সড়ক প্রশস্ত করা হলেও এসব খুঁটির কারণে প্রশস্ত সড়কের সুবিধা নগরবাসী পান না। সিটি করপোরেশন, সড়ক বিভাগ, জেলা প্রশাসন নাকি বিদ্যুৎ বিভাগ—কে এসব খুঁটি সরাবে, সেটাই ঠিক হয়নি। সড়ক বাড়ানোর সময়ে দুপাশের শতবর্ষী অনেক গাছ কেটে ফেলা হলেও এখনো নতুন করে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করা হয়নি। সড়কের ভেতরে অনেক সড়কে বর্ষায় পানি জমে থাকে। অব্যবস্থাপনায় থাকা সড়কের নতুন উপদ্রব এসব গরুর অবাধ বিচরণ। রংপুর সিটি করপোরেশন এমন একটি নগরী যেখানে ১০ বছরেও মাস্টারপ্ল্যান হয়নি। ফলে কোথায় আবাসিক এলাকা, কোথায় শিল্প এলাকা, কোন অংশে খেলার মাঠ, পুকুর, বিনোদনকেন্দ্র হবে, তা ঠিক করা হয়নি। আবাসিক এলাকার সড়কগুলো অনেক সরু। সেগুলো এখনই প্রশস্ত করা না গেলে পরে তা করা অনেক কঠিন হবে। এখন যত ভবন ভাঙতে হবে, দেরিতে এ কাজ করলে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ভবন ভাঙতে হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকার কারণে সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। পৌরসভা হওয়ার শত বছর পেরোলেও পরিকল্পিত নগর হলো না আজও। একবিংশ শতকে এসে চরম অবহেলায় একটি আদর্শ শহরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হচ্ছে। উন্নয়ন যতটুকুই হোক না কেন তা পরিকল্পিত হওয়া চাই।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: