মনিরামপুর থেকে আস্তে আস্তে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে মাটির তৈরী ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:৪৮

ছবি সমসাময়িক
মোঃ শাহ্ জালাল।। মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তনের কারণে শহরের পরিবেশের আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামেও। তাইতো আজ গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর গুলো যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরীবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। কিন্তু কালের আবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে সেই মাটির বাড়ি। আধুনিকতার ছায়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরী বাড়ি আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে। যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলাতে আধুনিকতার স্পর্শ আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। আজ যেই জিনিসটি পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে, কাল তার স্থান হচ্ছে ইতিহাসে অথবা যাদুঘরে। ধ্বংস আর সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন। বেশি দিন আগের কথা নয়, উপজেলার প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত অসংখ্য মাটির ঘর। কালের আবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘর। অত্যন্ত আরামদায়ক মাটির আবাস দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। এখন মাটির ঘর ভেঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে ইট-পাথরের তৈরি পাকা দালান ঘর। মাটির ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতে উষ্ণ তাপমাত্রা দেয়। বর্তমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মত। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এক সময় মাটির ঘরের গ্রাম হিসেবে খ্যাত ছিল। এঁটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরী করা হতো। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে সেই কাঁদা দিয়ে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরী করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগতো। কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১০-১২ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় ৩-৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগতো। মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক। তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করা হয়। এ সমস্ত ঘর বেশি বড় হয়না। গৃহিণীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুণভাবে কাঁদা দিয়ে লেপে মাটির ঘরের দেয়ালগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতো। এখন আর সেই মাটির ঘড় চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে এখনো বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দু’একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো। মাটির ঘরগুলো বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দূযোর্গে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে। প্রতি বছর মাটির ঘরে খরচ না করে একবারে বেশি খরচ হলেও পাকা ঘর-বাড়িই নির্মান করছে। বর্তমানে মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি। হয়ত সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন মাটির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে, আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছে মাটির ঘর রূপকথার গল্পের মত মনে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মাটির ঘরের গল্প, কবিতার ছন্দে বা সাহিত্যর পাতায় বা যাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: