এ লজ্জা কার? এতো লেখা লিখিতেও খোঁজ নেয়নি কেউ দল পাগল আ.লীগ নেতা নিঃস্ব মাহবুবের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:০১

ছবি সমসাময়িক
 

মোঃ শাহ্ জালাল।।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক যাত্রায় ৭২ বছরের পথচলা কম কথা নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের সুখের ইতিহাস খুব কম। গল্পে রাজার সুয়োরানী ও দুয়োরানীর ক্ষেত্রে দুয়োরানীকে যেমন সকল কাজ করেও বঞ্চিত হতে হয়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্যটাও তেমন। দলটির জীবনে জোয়ার যেমন এসেছে তেমনি বারবার এসেছে চরম ভাটা। ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানে যেমন আওয়ামী লীগ একাধিকবার গেছে তেমনি নাম নিশানা মুছে যাওয়ার অবস্থাও হয়েছে অনেকবার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কিংবদন্তী নেতা যেমন দলটির নেতৃত্বে ছিলেন তেমনি মোশতাকের মতো কুলাঙ্গারও দলটিতে থেকে রাজনীতি করে গেছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের পর নতুন করে দল ক্ষমতায় এই ১৩ বছর। অথচ যাদের কারণে দল ক্ষমতার মুখ দেখল তারা এখন কোথায় কেমন আছে?? এমন হাজারো প্রশ্ন আজ সোশাল মিডিয়া জুড়েই চলছে আলোচনা- সমালোচনার ঝড়। এমনি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজকের আলোচনায় যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ দল পাগল মোঃ মাহবুবুর রহমানের নাম। মণিরামপুর উপজেলার ৩ নং ভোজগাতী ইউনিয়নের চালকিডাঙ্গা গ্রামের- মৃত আঃ সাত্তার এর ছেলে মোঃ মাহবুবুর রহমান মাহবুব একজন আওয়ামী লীগের বীর যোদ্ধা। বর্তমান এই বীর যোদ্ধা সহায় সম্বল হারিয়ে স্ত্রী ও এক বেকার কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করা ছেলেকে নিয়ে ফুটপাতে ফল বিক্রি করে মানবতার জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন খোঁজ খবরে জানাযায় মোঃ মাহবুবুর রহমান ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ পতন অান্দোলনের তুখোড় এই ছাত্রনেতা খালেদা-নিজামী হঠাও অান্দলোনের রাজপথের অগ্নিপুরুষ ছিলেন। সর্বশেষ মণিরামপুর উপজেলায় ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু এখানে শেষ নয় মাহবুব সম্পর্কে পেছনের আলোচনায় গেলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ২০১৩ সাল বর্তমান সরকারের মেয়াদের ৫ বছরের শেষের দিকে এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন কে ঘিরে মণিরামপুর জামাত, বিএনপি কালো পোষাক ধারি পাকিস্তান বাহিনী মণিরামপুর উপজেল এবং পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। পৌর শহর ও থানা নিজেদের দখলে নিয়ে সমস্ত আওয়ামীলীগের লোকজনের বাড়ি ঘর ভাংচুর লুটপাট করেছিলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জয়পুর আওয়ামীলীগের ১২০ বাড়িতে আগুন, লুটপাট, ভোজগাতী ইউনিয়নের চালকিডাঙ্গা গ্রামের এবং পৌর যুবলীগের আহবায়ক আদম আলীর বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট এবং মণিরামপুরে আওয়ামীলীগের ব্যানার ফেস্টুন জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে চলে যায়। থম থম অবস্থা বিরাজ করতে লাগে মানুষের মনে। ঐ দিনটি ছিলো মণিরামপুরের জন্য দ্বিতীয় ৭১সাল। হয়তো নতুন প্রজন্ম ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তবে সেদিন দেখেছিল সেই ৭১ এর পাকিস্থানী বাহিনির জন্ম দেওয়া সন্তানদের তান্ডব। সেদিন ঐ একাত্তরের পাকিবাহিনী মণিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় নাম ধরে ধরে খুঁজতে থাকে এই মাহবুবের মতো দলপাগল নেতা কর্মীদের। সেই তান্ডবে মারপিটে শিখার হয়ে বিনা চিকিৎসায় পালিয়ে বেড়ান মোঃ মাহবুবুর রহমান মাহবুব। সেদিন সেই মাহবুবদের আজ কেউ খোঁজ রাখেনা। এটাই কি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন যে, দলের সু-সময়ে তার ত্যাগী কর্মীদের খোঁজে খবর রাখবে না। এটাই কি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আওয়ামীলীগ ? সবকিছু মেনে নিয়েই আজ-ও দল পাগল মাহবুবুর রহমান মাহবুব আজও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় থেকে আজ অসহায়ত্বের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা ৯০ দশকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মণিরামপুরের রাজপথে যে কজন ছাত্রনেতার কণ্ঠস্বর শুনা যেত তার মধ্যে মনিরামপুর তিনি ছিলেন উপজেলার ৩ নং ভোজগাতী ইউনিয়নের চালকিডাঙ্গার একজন বীর যোদ্ধা। নিজ খরচে বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে রাজপথে আসতেন। সে সময়ের দাপুটে এই ছাত্রনেতা পারিবারিকভাবে বিত্তবান ও অবস্থাশালী ব্যক্তিত্ববান ছিলেন। ২০০১ সাল পর আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে বিএনপি, জামাত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সময়ের নেতাদের নির্দেশে তখনও মাহবুবুর রহমান শতশত নেতাকর্মী নিজ খরচে এনে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতেন। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেদিয়ে জামাত অধ্যুষিত চালকিডাঙ্গা বাজারে আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করার কারণে নির্বাচিত হন নিজ ভোজগাতী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সামান্য এতটুকু প্রাপ্তি তার। ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এবং ধারাবাহিক ভাবে চলমান এই সরকার। তবুও ভাগ্যের বিবর্তনে ধূসর হয়ে গেছে মাহবুবুর রহমান মাহবুব ও তার পরিবার। অথচ আজ যারা তেল মারা ভিনগ্রহ বলতে জামাত, বিএনপি পরিত্যক্ত কর্মী বাহিনী থেকে আসা চোর, ডাকাত লুচ্চা, বদমাশ, দূর্নীতিবাজ বাটপার তারই রাজপথের হাতিয়ার এখনকার আওয়ামী লীগের নেতাদের। লুটেপুটে খাচ্ছে মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন বৈধ- অবৈধ ইনকামের খাত। কিন্তু কোন স্থানেই জায়গায় হয়নি মাহবুবের। বেশ কয়দিন ধরে সোশাল মিডিয়াতে মোঃ মাহবুবুর রহমান মাহবুব কে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার হওয়ার পর কথা হয় তার সাথে। প্রশ্ন করা হয় মাহবুব কে, আপনাকে নিয়ে আজ সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপার লেখালিখি হচ্ছে আপনি কি কিছু জানেন? উত্তরে তিনি বলেন জানি। তাকে জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কেউ খোঁজ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে মাহবুব কান্না জাড়িত কণ্ঠে বলেন কেউ খোঁজ নেয়নি। তিনি আরো বলেন একসময় আমি প্রায় ৩৫ বিঘা জমির মালিক ছিলাম আজ সামান্য ভিটে মাটিতে ছোট্ট এক রুমের একটা ঘর ছাড়া কিছুই নেই আমার। এই একটা ঘরে আমার স্ত্রী ও কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করা বেকার ছেলেকে নিয়ে আমার মানবতার জীবনযাপন। অথচ দলের কেউ এখন আর আমাকে ডাকে না খোঁজ খবরও নেয় না। রাজনীতির এক উচ্চ বিলাশী মোহ জয় করতে গিয়ে সবই শেষ করেছি আমি । সামান্য ভিটে মাটি ভাঙ্গাচুরা মাথা গোঁজার ঠাই টুকু নিয়ে মণিরামপুর রাজারে নাইটগার্ডের চাকরি করতাম। গত এই শীতের প্রচন্ড চাপে আমি আর পেরে উঠতে না পেরে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আমার গ্রামের ছোট্ট বাজারে ফল বিক্রি করি। গ্রামের এই বাজারে কে আর এমন ফল ক্রয় করে। সামান ৫০/১০০ টাকাও দিনে ইনকাম হয় না। খুবই কষ্ট দায়ক কিন্তু কেন এমনটি হলো? কমবেশি এ প্রশ্নের উত্তর অনেকের জানা। তবুও জানতে চাইলাম ত্যাগী এই ছাত্রনেতার বর্তমান ও অতীত সম্পর্কে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান এর কাছে। তিনি মাহবুবুর রহমানের সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করে বলেন আসলে মাহবুব একজন দল পাগল মানুষ। আজ সে খুবই অসহায় আমাদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। আমি দলের সকালে কাছে আহবান করছি মাহবুবের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আজ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল আর ত্যাগ কর্মী বিমুখ দেখে অনেকে হাসাহাসি করেন। এমন নির্লজ্জতা বেহায়াপনা চোখবুঁজা ভোগবিলাসী ও দলের ভিতর এতো অন্তর্কোন্দল প্রত্যাশিত নয়। আবার এটাও সত্য, বারবার প্রমাণ হয়েছে দলের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সকল অন্তর্কোন্দলকে মিথ্যা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন তাদের কাছে দেশের স্বার্থেই দল বড়। এমনি একজন নেতা মাহবুবুর রহমান মাহবুব। আওয়ামী লীগের এ জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক সেটাই প্রত্যাশা রেখে মাহবুবুর রহমান মাহবু এর পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান রইল।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: