জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম - খন্ড-১

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৫৭

ছবি সমসাময়িক
 

মোঃ শাহ্ জালাল।।

তখন সবে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র , সকালে ঘুম ভাঙ্গতো মায়ের বকুনিতে কারণ আমি ছিলাম ভিষণ রকমের ঘুম কাতুরে। ঘুম থেকে উঠে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজে একথালা পান্তা ভাত খেয়ে ৯১০ নং নোকেয়া ফোনের বাটন টিকে বন্ধু মুকুন্দ কে ফোন দিলাম। ফোনোলাপ সেরে একটা ডাইরি হাতে নিয়ে মোড়ে আইনাল চাচার চায়ের দোকানে আসি। আমি নিয়মিত এখানে এসে সকালে চা না পান করলে সকাল টাই শুভ হয়না। জানিনা কতটুকু সত্য। সকালের কাজ শেষ। শালার মুকুন্দ ফালতুটা এখনো আসছেনা কেন। আবার একটা ফোন দিলাম "কিরে হারামি তোরে না কলাম তাড়াতাড়ি আয়" ক্যামনে কি যে করিস বুঝতে পারলাম না। মুকুন্দর থেকে আওয়াজ আসলো মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ " মুকুন্দ ভাই ফ্রেশ হচ্ছে আপনিকে?" বাশ একটা খাইলাম বটে। আমি জানি মুকুন্দর কোন বোন নাই। তবে সে সকালে প্রাইভেট পড়াতো জানতা " ফোনে মেয়েটি আরো বললো এই যে শুনুন মুকুন্দ ভাই হারামিনা কথাটা মনে রাখবেন, আপনারা শিক্ষিত মানুষ হয়ে রাস্তার লোকদের মত কথা বলেন কেন?" ওরে বাবা কি এমন দোষ করলাম আমিতো আমার বন্ধুর কে কইছি। যাক ঝাড়ি যা খাওয়ার তা খেয়ে ফেলেছি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। চা আরেকবারের জন্য অডার দিয়ে আইনাল চাচার দোকানের চরাটের বেঞ্চে বসলাম। কিছুসময় পরে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন রিসিভার করে বললাম কামার হাটায় আইনাল চাচার দোকানে আয় বলে ফোন কেটে দিলাম। কিছুসময় পর মুকুন্দ আসলো চল বন্ধু তাড়াতাড়ি মিতা অপেক্ষা করছে। মিতা মুকুন্দর প্রেমিকা। তুই চল কথা আছে যেতে যেতে কথা হবে। আমি চা শেষ করে হাটা ধরলাম। যেতে যেতে কথা হলো মুকুন্দর খালাতো বোন শিমু আসছে। আসলে মেয়েটি তার দুর সম্পর্কের খালাতো বোন মানে মুকুন্দ মায়ের বাল্য বান্ধবীর (মুসলিম পরিবারের) মেয়ে। এই সম্পর্কের খালাতো বোন শিমু আসছে। কলেজে এ্যডমিশন দিতে হবে কোচিং করার জন্য মাস কয়েক থাকবে। তাই সকালে মুকুন্দ একটু সিলেবাস বুঝিয়ে দেয়। গল্প করতে করতে দুজন ক্যাম্পাসে চলে এলাম। শালাতো মিতার সাথে ভাগবে এখনি ক্লাস করার জন্য আমিতো আছি। দুর থেকে মেয়েলি ধ্বনি শুনলাম। "এ্যইযে মুকুন্দ" পিছনে তাকাবার আগেই বুঝলাম মিতা। "যা আমার আর দরকার নাই বৌদি ডাকে। আমি শুধু বললাম যাচ্ছে। বলতেই মুকুন্দ গেলগা। ধুর ক্লাসে মন বসে না। কি মেয়েটি কথা নাই কিছু নাই সকাল বেলা ঝাড়ি দিয়ে দিল । কলেজে একাউন্টিং সাবজেক্টে ভাল ছাত্র হিসাবে নাম বরাবরি ছিল আমার। যা হোক ক্লাস শেষে বাড়ি এলাম। রাতের আকাশে আজ পূর্নিমার আলো। বাড়ির উঠানে চৌকিখাটে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। ভালই লাগছিল। মনটা কেমন জানি শীতল আর চনমনে হচ্ছে। কোন গালফ্রেন্ড ছিলনা তাই কারো সাথে এই মুহূর্তে সুখটা ভাগাভাগি করতে পারি নাই। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। মুকুন্দর ফোন রিসিভ করলাম এবং বললাম "কিরে এতো রাতে মিতার কাছে ফোন না করে আমার কাছে কেন?" সরি সকালের ব্যবহাররের জন্য। মুকুন্দ ভাই সব বলছে আমাকে। আপনি যা শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব। আমি বললাম ঠিক আছে। বেশ কিছুক্ষন কথা হল। শিমুর সাথে। ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় মুকুন্দ ফোন দিল "দোস্ত একটু বাসায় আসবি?" আচ্ছা আসছি বলে ফোনটা কেটে দিলাম। মুকুন্দ বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিতে খালাম্মা দরজা খুলে দিল। মুকুন্দর রুমে গিয়ে দেখি মুকুন্দ শুয়ে আছে। ওর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। একটি মেয়ে বয়স হবে ১৮ হতে ১৯ বছর। মুখের রং ফর্সা। হালকা পিংক রঙের সালোয়ার পরে আছে একদম সাদা সিদে মনে হচ্ছে। এক পলকে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চোখ পলক সরাতে পারছিলাম না। মুকুন্দর গায়ে জ্বর হয়েছে একটু বেশি। খালাম্মা ঘরে এসে আমাকে বললো,"বাবা মুকুন্দর যে জ্বর তাতে ও উঠতে পারছে না। শিমুর আজ UCC তে ভর্তি করতে হবে মেয়েটাকে নিয়ে যাবে কে, তুমার খালু অফিসের কাজে ঢাকা গেছে আমি তো পারিনা না মুকুন্দ অসুস্থ। কিছু যদি না ভাবো মেয়েটারে একটু নিয়ে যাবা যশোর?" খালাম্মা আমাকে বেশ স্নেহ করে, আমিও অনেক সম্মান করি তাই বললাম ঠিক আছে। শিমু ততখনে নিজের রুমে চলে গেছে, আমি মুকুন্দর পাশে বসে ওর মাথায়ছিট হাতবুলিয়ে দিলাম। মিতা জানে দোস্ত তুই অসুস্থ? নারে দোস্ত মেয়েটা সারাদিন চিন্তা করবে,খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেবে। তাই আরকি? বুঝলাম কথা গুলো খুব কষ্ট করে বলেছে। থাক দোস্ত তুই শুয়ে থাক। মুকুন্দর মাথার পাশে বসে আছি। মাঝে মাঝে হিংসা হয় মুকুন্দ আর মিতার ভালবাসা দেখে, আর নিজেকে মনে হয় অতি নগন্য। শালার আজ ২০-২১ টা বছর বয়স হল প্রেম কি কোন মেয়েকে আজ পর্যন্ত ভালবাসি কথাটা বলতে পারি নাই। ভাবতে ভাবতে দরজার পাশ থেকে শব্দ এলো। বাস্তব জগতে ফিরে এলাম এইযে আমি রেডি। মুকুন্দ আমাকে যাওয়ার জন্য ইশারা দিল। আমি কেন জানি বাধ্য ছেলের মতো মেনে নিলাম। আমি আর শিমু বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। একটা ভ্যান নিলাম মনিরামপুর গরুহাট মোড় পর্যন্ত। তারপর বাসে করে যশোর মুড়লি নামলাম। পরে আবারও একটি রিক্সা নিলাম। শিমুকে আমার পাশে বসতে বললাম। শিমু একটা হলুদ পোশাক পরেছে, ওর শরীরে পার্ফিউম মারা। কেন জানি আমি কোন রাজ্যে চলে গেলাম। এতখন একটি কথাও বলিনি। শুধু ওর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু ওর চোখে চোখ রাখতে পারলাম না। এইযে আপনি কি গাল ফ্রেন্ড নিয়ে ভাবছেন? মনে হয় শিমু হঠাৎ করে কথাটা বলে ফেলেছে আমি বাস্তব জগতে ফিরে দেখি শিমু লজ্জা পেয়েছে। আমি কথা বলি নাই। শিমুও চুপ চাপ। আঁধা ঘন্টা পর কোচিং এর সামনে এলাম। মেয়েটি আমার চেয়ে এ্যডভান্স। দুজনে নামি রিক্সা থেকে। শিমুকে কোচিং এ ভর্তি করে দিয়ে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে আসলাম। সব কিছু করার পর শিমু বললো ভাই আমি কি একা একা বাড়িতে যাব? শুধু বললাম না।............... পাঠক সম্মতি দিলে কাল্পনিক চরিত্রের এই গল্পটা শেষ করবো মন্তব্য না দিল করবো না


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: