কিংবদন্তি নেতা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএম নজরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২২ ২০:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২২ ২০:২১

ছবি সমসাময়িক

মোঃ শাহ্ জালাল।।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারী ও কিংবদন্তি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএম নজরুল ইসলাম। ১৯৪৯ সালের ২৩ অক্টোবর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সবুজ ছায়া ঢাকা হাজরাকাটি নামক পল্লী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল মোল্লা ও মায়ের নাম মৃত আমেনা খাতুন। ৪ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে কিংবদন্তি এই নেতা ছিলেন মেঝ। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও প্রতিবাদী ছেলে। দীর্ঘ ১৫ তিনি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ ফিরে ফিরে বেঁচে গেলেও অবশেষে ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চিরতরে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহী---রাজেউন)। কিংবদন্তি এই নেতা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি কিশোর বয়স থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত। ১৯৬৬-এর ৬ দফার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৬৯ সাল থেকেই গণ আন্দোলনের জন্য জনমত গঠনে সংগঠন মজবুত করতে নিজেকে আত্ননিয়োগ করেন। ১৯৭০ সালের বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চ অগ্নিঝরা ভাষনের পর যুবকদের সংগঠিত করেন। ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রানিত করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করলে তিনি গ্রেফতার হন। প্রায় দেড় বছর কারাবরণ করেন তিনি। আওয়ামীলীগের দুর্দীনে ১৯৭৮ সাল থেকে টানা দুই বার তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মণিরামপুর সদর ইউনিয়ন থেকে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯৮৭ সালে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। পরবর্তিতে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় তৃণমুল নেতার ভোটে মনোনয়ন পেয়ে ফের নির্বাচন করেন। কিন্তু দলীয় একটি পক্ষ আরেকজনকে প্রার্থী করায় তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগি। তার একক প্রচেষ্টায় মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, ফাজিল মাদ্রাসা, জালঝারা সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা, আদর্শ সম্মেলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছিলুমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান দাড় করিয়েছেন। নিজের বাড়ি-ঘরের পলেস্তারা না থাকলেও তিনি মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করিয়েছেন। গত ১৮ জানুয়ারি এই নেতার পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, গত ১৩ জানুয়ারি তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে খুলনা সিটি মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত ৯.২৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এদিকে রাতে তার মুত্যুর পর খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এদিন রাত প্রায় ১টার দিকে মরহুমের মৃতদেহ নিজ বাসভনে আনা হয়। সেখানে বহু নেতা-কর্মী অপেক্ষা করতে থাকেন। মরহুমের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজে মরদেহ নিয়ে গিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান হয়। এবং এ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা “গার্ড অব ওয়ানার” প্রদান করা হয়। এসময় নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সহ হাজার হাজার জনসাধারণ। বুধবার জোহরবাদ মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম দফা নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তিতে মরহুমের গ্রামের বাড়ি হাজরাকাঠিতে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: