মণিরামপুরের রাজনৈতিক নোংরা খেলা নিয়ে কিছু কথা

মোঃ শাহ্ জালাল।। | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০৯

মোঃ শাহ্ জালাল।।
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০৯

ফাইল ফটো

দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার অন্যতম পরিণাম হলো অধমদের দ্বারা শাসিত হওয়া।’ যে সমাজে শিক্ষিত লোকেরা রাজনীতিবিমুখ হয়, সেই সমাজে মূর্খ, আধামূর্খ কিংবা একশ্রেণীর প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি রাজনীতির শীর্ষস্থান দখল করে গোটা সমাজটাকে হুকুমের দাসে পরিণত করে। সারা পৃথিবীতেই এখন একটি বিষয় লক্ষণীয়, বেশির ভাগ শিক্ষিত লোকই মধ্যবিত্ত সমাজের অন্তর্ভুক্ত যারা রাজনীতিবিমুখ।

তারা মনে করেন, রাজনীতিতে ঝুঁকি আছে সুতরাং এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। তারা চিন্তা করে রাজনীতি একটা নোংরা বিষয়, সরকার দুর্নীতিবাজ, নেতারা অশিক্ষিত ইত্যাদি। তাদের এই চিন্তাভাবনাটাই যে রাজনীতিটাকে আরো বেশি কদর্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। তাদের এই অনীহার সুযোগ নিচ্ছে সুবিধাবাদীরা।

রাজনীতি প্রতিটি মানুষের অস্থি মজ্জার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়। যে শিশুটা আজ ভূমিষ্ঠ হলো সে-ও রাজনীতির শৃঙ্খলে বাধা পড়ে যায়। তাই মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হলে রাজনীতিকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অধিকার হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর এই অধিকার বাস্তবায়নের প্রধান মাধ্যম হলো রাজনীতি। সুতরাং অবজ্ঞা নয় বরং নিজের এবং সমাজের মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও তা আদায়ের সংগ্রামে শিক্ষিত লোকদের ভূমিকাই বেশি প্রয়োজন। কিন্তু মনিরামপুরের প্রেক্ষাপট তা ভিন্ন চিত্র।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজ কোন পথে হাঁটছে বা এই রাজনীতি সামগ্রিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী ভূমিকা রাখছে তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সমাজের বিকশিত করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রাজনীতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য মণিরামপুর কি হচ্ছে সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের কোনো ধারণা নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত , সরকারের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি যা চাইছে অনায়াসে তা কর্তৃক বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহির জায়গাটা তাদের কাছে খুবই তুচ্ছ মনে হয়। যার কারণে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঘোর বিরোধী জামাত আজ সহজে সকল সুযোগ সুবিধা সহ ঢুকে পড়ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। অথচ ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হচ্ছে দিনের পর দিন কোনঠাসা।

এই জনপদে মানুষের সুখ-দুঃখ, বেদনার কথা, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গেলেই বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ত্যাগী আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তানদের ।’ এরা আজ মানে হচ্ছে ক্ষমতা ধর জনপ্রতিনিধি কর্মকাণ্ড ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে জিম্মি। রাজনৈতিক দল হিসেবে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তার আদর্শিক গতিপথ হারিয়েছে; কিন্তু ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। তাতে কি এই জনপদে চাকরি হয়নি ছাত্রলীগের, স্বাবলম্বী হয়নি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তানেরা। এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে।

মণিরামপুরে জামাত ও বিএনপিকে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে আসতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ গোপনীয় সুযোগ সুবিধা। একাধিক ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেলে গেলেও হয়রানি হয়নি বিএনপি জামাতের এজেন্ডা পালন কারিরা। বর্তমান ক্ষমতাসীন কিছু নেতাদের অপশাসন, দুর্নীতি এবং মানুষের অধিকার লুণ্ঠন করার চিত্র এখন আয়নার মত পরিস্কার। কেননা ধর্মীয় উৎসব পালনের এসেছে বাঁধা।

এই সমস্যা থেকে মণিরামপুরের উপজেলা আওয়ামী লীগ কে বাচাতে হলে ক্ষমতাসীন নেতাদের অপশাসন, দুর্নীতি এবং মানুষের অধিকার লুণ্ঠনের চিত্র মানুষের সামনে এনে নিজেদেরকে দুর্নীতিবিরোধী এবং সুশাসনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড বেশি বেশি মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ দলকে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে রেখে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।

শুরুতে যে কথা বলতে চেয়েছি যে, মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষিত লোকেরা রজনীতিবিমুখ হচ্ছে। তার প্রধান কারণ হলো মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণ, সমাজে বিবেকহীন সংস্কৃতি তৈরী করা এবং ত্যাগী কর্মী অবমূল্যায়ন।

এর পরও মনে করি, ত্যাগী আওয়ামী লীগ ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। নেতাকর্মীরা যাতে হতাশা কাটিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্যহী হয় তেমন কার্যকর সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে নেতৃত্বে থাকা নেতাদের। সব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করার জন্য পরীক্ষিত, ত্যাগীদের সমন্বয়ে বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব গঠন করে তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাজপথের কর্মসূচি বেগবান করার জন্য অবশ্যই জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে হবে। এর জন্য ত্যাগী আওয়ামী লীগের গ্রুপ টি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে মণিরামপুরে।, কারণ এত নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলার পরেও কেউ নিজের অবস্থা অর্থের কাছে ত্যাগ করেনি। সর্বশেষ কথা হলো, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। নতুবা এর শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকে তার কোন হিসাব নিকাশ থাকবে না।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: