কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের নিজ জেলা যশোরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই দু’বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৫১

ছবি সমসাময়িক
বিশেষ প্রতিনিধি।। আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে একটি অনাকাক্ষিত ঘটনার জের ধরে যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিপুপ্ত হয়। নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় পরিবর্তন আসে। ছাত্রলীগকে সমগ্র বাংলাদেশে সুসংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় যশোরের সন্তান লেখক ভট্টাচার্য্যকে। কিন্তু যশোর ছাত্রলীগের হতাশা কাটেনি। বরং দিনে দিনে তার পরিধি বাড়ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দাবি, এই পরিস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কারণ প্রথমতো জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই। দ্বিতীয়ত এই কারণে জেলা শাখার অধীনস্ত কমিটিগুলো ধীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে। এসব কমিটির নেতাদের অধিকাংশ এখন আর ছাত্রলীগের সাথে নেই। অনেকে বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। অনেকে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার মূল দল আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন। এজন্য তাদের পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের পতাকাতলে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রলীগনেতারা আরো দাবি করছেন, এই সুযোগে জেলা ছাত্রদলসহ বিভিন্ন উপজেলা ও কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে। ছাত্রদলকে গতিশীল করতে শুধু উপজেলা নয়, সম্প্রতি ইউনিয়ন পর্যায়েও তারা কমিটি গঠনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতি দেখা ছাড়া তাদের কোন কাজ নেই। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১০ জুলাই যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের সপ্তাহ খানেক পর রওশন ইকবাল শাহীকে সভাপতি ও ছালছাবিল আহমেদ জিসানকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে দুই সদস্যের ওই কমিটি দুই বছর দায়িত্ব পালন করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যার্থ হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে একটি চাঁদাবাজি ইস্যুতে সাধারণ সম্পাদক জিসানের বিরুদ্ধে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ ওঠে। যার জের ধরে ওই বছর ১৯ মার্চ যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর আর নতুন কোন কমিটি হয়নি। একাধিবার কমিটি আসছে শোনা গেলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। অর্থাৎ দুই বছর ধরে যশোর জেলা ছাত্রলীগ কমিটি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। ফলে যশোরে ছাত্রলীগের কার্যক্রম যেমন গতিহীন হয়েছে, তেমনি হতাশ হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের কর্মীসহ পদপ্রত্যশীরা। তবে এই সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও বড় পরিবর্তন এসেছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পাওয়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য্যকে। প্রথমে তাদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলেও পরে ভারমুক্ত করে দেয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব। সেই ঘটনাও ঘটেছে দেড় বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু যশোরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসেনি। তাই দিনে দিনে হতাশ হয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তরুন বলেন, ‘আমরা বার বার কেন্দ্রের কাছে দাবি করেছি, যোগ্যনেতাদের নিয়ে দ্রুত যশোরে কমিটি করা হোক। বলা হচ্ছে কমিটি হবে, কিন্তু হচ্ছে না। এরই মধ্যে দুই বছর পার হয়ে গেল। এই সুযোগে ছাত্রদল সংগঠিত হচ্ছে। তারা বড় বড় মিছিল করছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিটি গঠন করছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশাজনক।’ এমএম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, অভিভাবক শূন্য থাকায় সংগঠনে শৃঙ্খলা নেই। যে যার মতো ছাত্রলীগ ব্যানার ব্যবহার করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এতে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হচ্ছে না। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এসব কমিটির অধিকাংশ নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে নেই। ব্যবসা বা চাকরি করছেন। অনেকে বিয়ে করেছেন। অনেকের সন্তান হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তাদের পক্ষে কলেজে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। এই সমস্যা সমাধানে যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা ছাড়া কোন পথ নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকভাবে চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যরে সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রথমে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার রিং করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তারপরও তিনি কোন সাড়া দেননি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: