যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ইসলামের ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৪১

ছবি সমসাময়িক
 

শহিদুজ্জামান মিলন।।

আজ ২০ফেব্রুয়ারী বিভক্ত মণিরামপুরের পশ্চিমাংশ (ঝিকরগাছা সহ) এন.ই-৪৫,যশোর-৬ এর তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ইসলাম, এমপিএ(মেম্বর অফ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি)এঁর ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী।২০০৪ সালের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি মৌখিক ভোটে ইউনিয়ন বোর্ডের মেম্বর নির্বাচিত হন। শুরু হয় তার জনপ্রিয়তার পথ চলা। ১৯৫৮ সালে ঝিকরগাছার তৎকালীন বল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (বর্তমান নির্বাসখোলা ও হাজিরবাগ ইউনিয়ন) নির্বাচিত হন সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খাঁন মৌলিক গণতন্ত্র চালুর নামে ফরমান জারি করেন ইউপি চেয়ারম্যানদের ভোটে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হবেন। জনগণের সরাসরি ভোটের দরকার নেই। আইয়ুব খাঁন নির্দেশ দেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই ফরমান সমর্থন সূচক রেজুলেশন করে প্রেসিডেন্ট দপ্তরে পাঠাতে। তখন গোটা পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র চেয়ারম্যান আবুল ইসলাম ওই ফরমানের বিরুদ্ধে কথা বললেন। তিনি বল্লা ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ওই ফরমানের বিরুদ্ধে রেজুলেশন করে প্রেসিডেন্ট দপ্তরে পাঠান। তিনি রেজুলেশনে উল্লেখ করেন, ভোট জনগণের মৌলিক অধিকার তা খর্ব করার এখতিয়ার কারো নেই। চেয়ারম্যান আবুল ইসলাম ওই রেজুলেশনের কপি স্পিকার ও দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় তাকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা সাবাস চেয়ারম্যান শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে। এরপর থেকে আবুল ইসলাম সারাদেশে সাবাস চেয়ারম্যান নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৬৬ সালে যশোর বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। খুলনা বিভাগে তিনিই একমাত্র আওয়ামী লীগের মেম্বর নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান থেকে অবিভক্ত ঝিকরগাছা চৌগাছাসহ মণিরামপুর নির্বাচনী এলাকার প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণের দিন তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীর উপর যখন আক্রমন আবুল ইসলাম তখন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।২৬ মার্চ জানতে পারেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গনহত্যা শুরু হয়েছে। তিনি যশোরের এ্যাড রওশন আলী এমএনএ,এ্যাড মোশাররফ হোসেন এমপিএ এঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরদিন ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে যশোরে দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে ঝিকরগাছা রেলস্টেশনের কাছে আসলে বাধার সম্মুখীন হয়ে মনিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়ন হয়ে যশোর পৌছান। যশোরে এসে জানতে পারেন এ্যাড মোশাররফ হোসেন ভারতে অবস্থান করছেন এবং এ্যাড রওশন আলী মনিরামপুরের একটা গ্রামে অবস্থান করছেন। তিনি সাইকেল যোগে মনিরামপুরে তার সাথে দেখা করেন। পরবর্তীতে ৩০ মার্চ দুজনে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।১ লা এপ্রিল আরো কয়েক জন এমপিএ ও এমএনএ মিলে হোটেল তাজ মহলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে সমাবেশ করেন।তারপর মাধবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সামনে অনুরুপ সমাবেশ করেন।তাজ উদ্দিন আহমেদ তখন দিল্লিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশেকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয় । যশোরাঞ্চল ছিল ৮ নং সেক্টরের অধীনে,এ সেক্টরের সাব সেক্টর ছিল হাকিম পুর।আবুল ইসলাম এই সাব সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি একাধারে বীরমুক্তিযোদ্ধা ,মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবীদ।যুদ্ধের নয় মাস তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে যশোর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিংবদন্তী এই পুরুষ ১৯২৪ সালে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সরদার নাসিরউদ্দীন তৎকালীন সমাজের পঞ্চায়েত ছিলেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: